৬ মাস বয়সী শিশুদের হজম প্রক্রিয়া দুর্বল হওয়ার কারণে তারা খুব সহজেই আমাশয় বা ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আমাশয় হলে শিশুদের দ্রুত সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন, কারণ এটি ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায় এবং শরীর দুর্বল করে।
লক্ষণ:
- পাতলা, বারবার পানিযুক্ত পায়খানা।
- মলের সঙ্গে রক্ত বা মিউকাস আসা।
- পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি।
- খাবারে অরুচি।
- জ্বর।
- শুষ্ক ঠোঁট ও মুখমণ্ডল (ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ)।
করণীয়:
১. পর্যাপ্ত পানি ও ওরস্যালাইন (ORS) সরবরাহ করা:
- শিশু যদি বুকের দুধ খায়, তা চালিয়ে যান। বুকের দুধ শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ এবং পুষ্টিকর।
- ওরস্যালাইন খাওয়ান। প্রতিবার পাতলা পায়খানা হলে শিশুদের ৫০-১০০ মিলি ওরস্যালাইন দিন।
২. ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া:
- আমাশয়ের কারণে শিশু যদি খুব দুর্বল হয়ে পড়ে, জ্বর থাকে, বা মলের সঙ্গে রক্ত আসে, দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- শিশুর ওজন ও অবস্থা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক ডাক্তারের পরামর্শে দিন।
৩. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা:
- শিশুকে পরিষ্কার পানি ও স্বাস্থ্যকর খাবার দিন।
- বাচ্চার খেলনা ও খাওয়ার সরঞ্জাম পরিষ্কার রাখুন।
- মায়ের হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, বিশেষ করে বাচ্চাকে খাওয়ানোর আগে ও পরে।
৪. ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করা:
- শিশুর দেহে পানি ও লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে ওরস্যালাইন ছাড়াও ঝোল, ফলের রস বা মশলা মিশ্রিত পানি খাওয়াতে পারেন।
- পাতলা ও নরম খাবার দিন, যেমন স্যুপ, খিচুড়ি ইত্যাদি।
৫. বুকের দুধ চালিয়ে যাওয়া:
- ৬ মাসের নিচের শিশুদের জন্য বুকের দুধ সর্বোত্তম খাবার। আমাশয় হলে এটি থামানো উচিত নয়। বরং শিশুকে প্রায়ই বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত।
৬. নিরাপদ খাবার প্রদান:
- ফর্মুলা ফিডিং করলে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত বোতলে তা সরবরাহ করুন।
- শিশুর খাবার তাজা ও পরিষ্কার পানিতে তৈরি করুন।
৭. শিশুর খাবারে পুষ্টি নিশ্চিত করা:
- ডায়রিয়া চলাকালীন বাচ্চাকে সহজপাচ্য, পুষ্টিকর খাবার যেমন খিচুড়ি, নরম ফলের পিউরি, এবং চালের গুঁড়া থেকে তৈরি খাবার দিতে পারেন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন:
- শিশুর ডিহাইড্রেশন দেখা দিলে (যেমন: শুষ্ক মুখ, কম প্রস্রাব)।
- শিশুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে।
- শিশুর পায়খানায় রক্ত বা মিউকাস দেখা গেলে।
- শিশু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিলে বা শক্তিহীন হয়ে গেলে।
পরামর্শ:
শিশুর আমাশয় হলে দেরি না করে ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাই তাদের যত্নের ক্ষেত্রে দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।