Diabulimia হলো একটি বিশেষ ধরনের খাওয়ার ব্যাধি যা টাইপ ১ ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যে দেখা যায়। এই অবস্থায়, রোগীরা ওজন নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ইন্সুলিনের মাত্রা ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে দেয়, যা শরীরের স্বাভাবিক মেটাবলিজমকে বিঘ্নিত করে। Diabulimia অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এটি ডায়াবেটিস সম্পর্কিত জটিলতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এই পোস্টে আমরা Diabulimia-এর কারণ, লক্ষণ এবং এর জন্য সিবিটি (Cognitive Behavioral Therapy) থেরাপির কিছু সেলফ-হেল্প টেকনিক নিয়ে আলোচনা করব।
Diabulimia এর কারণসমূহ
Diabulimia-এর কারণ সাধারণত মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক উপাদানের সাথে সম্পর্কিত। কিছু সাধারণ কারণ হলো:
- ওজন নিয়ে উদ্বেগ: ওজন বৃদ্ধির ভয়ে ইন্সুলিন কমিয়ে দেওয়া।
- শারীরিক আত্মবিশ্বাসের অভাব: নিজের শরীরের আকার নিয়ে অসন্তোষ।
- ডায়াবেটিস সংক্রান্ত হতাশা: দীর্ঘমেয়াদী ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার কারণে মানসিক চাপ।
- সামাজিক চাপ: অন্যদের সামনে নিজের ওজন বা শরীর নিয়ে লজ্জা বা সামাজিক চাপ অনুভব করা।
- খাদ্য ও ডায়াবেটিস সংক্রান্ত ভুল ধারণা: খাবার, ইন্সুলিন, এবং ওজন সম্পর্কিত অসত্য ধারণা।
Diabulimia এর লক্ষণসমূহ
Diabulimia-এর কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- ইন্সুলিন ডোজ কমানো: ইচ্ছাকৃতভাবে ইন্সুলিনের ডোজ কমিয়ে দেওয়া বা বাদ দেওয়া।
- ওজনের দ্রুত পরিবর্তন: শরীরের ওজন দ্রুত হ্রাস পাওয়া।
- প্রায়ই উচ্চ রক্তচাপ: রক্তে উচ্চ গ্লুকোজ লেভেলের কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সমস্যা।
- ডিপ্রেশন বা উদ্বেগ: মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি।
- অতিরিক্ত পিপাসা বা ক্ষুধা: শারীরিক পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত পিপাসা বা ক্ষুধা অনুভব করা।
- শারীরিক দুর্বলতা: শরীরে দুর্বলতা, ক্লান্তি, বা অসুস্থতা অনুভব করা।
Diabulimia এর জন্য সিবিটি থেরাপির সেলফ-হেল্প টেকনিক
১. ইন্সুলিন ব্যবহারে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা (Developing a Positive Attitude Towards Insulin Use)
- কীভাবে কাজ করে: ইন্সুলিন ব্যবহারের গুরুত্ব এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের উপর এর প্রভাব বোঝানো।
- নিজের উপর প্রয়োগ: প্রতিদিন ইন্সুলিন নেওয়ার পর নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিন যে এটি আপনার সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। ইন্সুলিন ব্যবহার করলে আপনার শরীর ও মন ভালো থাকবে, এই মনোভাব গড়ে তুলুন।
২. কগনিটিভ রিফ্রেমিং (Cognitive Restructuring)
- কীভাবে কাজ করে: ইন্সুলিন ও খাদ্য নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা চিহ্নিত করে তাদের ইতিবাচক চিন্তায় পরিবর্তন করা।
- নিজের উপর প্রয়োগ: নিজেকে বোঝান যে ইন্সুলিন একটি বন্ধু যা আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। “ইন্সুলিন নেওয়া মানেই আমি মোটা হব” চিন্তাকে “ইন্সুলিন আমার সুস্থতার জন্য জরুরি” চিন্তায় পরিবর্তন করুন।
৩. মাইন্ডফুল ইটিং (Mindful Eating)
- কীভাবে কাজ করে: খাওয়ার সময় মনোযোগী থাকা এবং প্রতিটি খাবারের সময় সুস্থ অভ্যাস বজায় রাখা।
- নিজের উপর প্রয়োগ: প্রতিবার খাওয়ার সময় মনোযোগ দিয়ে খাবার খান এবং খাবারের স্বাদ, গন্ধ, ও টেক্সচারের প্রতি মনোযোগ দিন। খাওয়ার পরে নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করুন এবং ইন্সুলিন ব্যবহার করার জন্য নিজেকে প্রেরণা দিন।
৪. এমোশনাল রেগুলেশন (Emotion Regulation Techniques)
- কীভাবে কাজ করে: মানসিক চাপ বা উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে যা Diabulimia-এর প্রবণতা কমায়।
- নিজের উপর প্রয়োগ: ডিপ ব্রিদিং, মেডিটেশন, বা রিল্যাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করুন। যখনই ইন্সুলিন না নেওয়ার ইচ্ছা অনুভব করেন, তখন এই টেকনিকগুলো প্রয়োগ করুন।
৫. স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা (Building Healthy Habits)
- কীভাবে কাজ করে: প্রতিদিনের জীবনে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলে Diabulimia-এর প্রবণতা কমানো।
- নিজের উপর প্রয়োগ: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ইন্সুলিন নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনার খাদ্যাভ্যাস এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর মানসিকতা গড়ে তুলুন।
উপসংহার
Diabulimia একটি জটিল এবং বিপজ্জনক খাওয়ার ব্যাধি, তবে সঠিক পদক্ষেপ এবং সিবিটি থেরাপির কার্যকরী টেকনিকগুলোর মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ইন্সুলিন ব্যবহারে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা, কগনিটিভ রিফ্রেমিং, মাইন্ডফুল ইটিং, এবং এমোশনাল রেগুলেশন টেকনিকের মাধ্যমে আপনি Diabulimia-এর ঝুঁকি কমাতে পারেন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন। সঠিক পদক্ষেপ নিলে আপনি Diabulimia থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হবেন।