গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আমাদের মধ্যে অনেকের জন্যই একটি সাধারণ সমস্যা। পেটে গ্যাস, বুকজ্বালা, খাবার হজমে সমস্যা ইত্যাদি থেকে মুক্তি পেতে আমরা প্রায়ই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে থাকি। যদিও প্রাথমিকভাবে এই ওষুধগুলো উপশম দেয়, দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এর ফলে নানা ধরনের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের ধরণ এবং কার্যকারিতা
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সাধারণত দু’ধরনের হয়:
- অ্যান্টাসিড (Antacid): পেটে অতিরিক্ত অ্যাসিডের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।
- প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI) ও H2-ব্লকার: এগুলো অ্যাসিডের উৎপাদন কমাতে সাহায্য করে।
এই ওষুধগুলো সাধারণত স্বল্পমেয়াদে ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত, তবে দীর্ঘ সময় ধরে সেগুলো ব্যবহার করলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
দীর্ঘদিন পরামর্শ ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়ার ঝুঁকি
১. ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের অভাব
প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর বা অ্যান্টাসিড দীর্ঘদিন খেলে শরীরে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের শোষণ কমে যায়। এর ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং হাড় ভাঙার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
২. কিডনির ক্ষতি
দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ব্যবহার করলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে কিডনিতে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
৩. পেটে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ পেটে অ্যাসিডের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যার ফলে পেটে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যায় এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, এবং অন্যান্য হজমজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪. ভিটামিন ও খনিজের অভাব
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে শরীরে ভিটামিন বি১২ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির শোষণ কমে যায়। এর ফলে দুর্বলতা, স্নায়বিক সমস্যা, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে।
৫. অ্যাসিড রিবাউন্ড ইফেক্ট
দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়ার পর হঠাৎ বন্ধ করলে পেটে অ্যাসিডের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে, যা আবারও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করে। একে বলে “অ্যাসিড রিবাউন্ড ইফেক্ট।”
৬. পেটে ইনফেকশন ও আলসার
অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ পেটে ইনফেকশন এবং আলসার তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার করলে এই ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৭. হৃদরোগের ঝুঁকি
গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা প্রতিরোধে প্রাকৃতিক উপায়
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং অতিরিক্ত তেল, চর্বিযুক্ত ও মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রতিদিন সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. পানি পান করুন
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন। পানি হজমের প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সহায়ক।
৩. বুকজ্বালার জন্য প্রাকৃতিক উপায়
তুলসী পাতা, জিরার পানি, আদা ও মধু প্রাকৃতিক উপায়ে বুকজ্বালা কমাতে সাহায্য করে।
৪. নিয়মিত ব্যায়াম
প্রতিদিন নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ও হাঁটা হজম ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা প্রতিরোধ করে।
৫. অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণ এড়িয়ে চলা
যেকোনো ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। অযথা ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদে।
উপসংহার
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করা ক্ষতিকর। তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে প্রাকৃতিক উপায়ে প্রতিকার করার চেষ্টা করুন এবং ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.