কাশি সাধারণত শরীরের প্রতিরোধমূলক প্রতিক্রিয়া যা শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখে। তবে কিছু ক্ষেত্রে কাশি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। যদি কাশি ভালো না হয় বা দীর্ঘদিন ধরে থাকে, এর বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে।
কাশি ভালো না হওয়ার সম্ভাব্য কারণসমূহ:
১. সংক্রমণ:
- ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: ফ্লু বা সাধারণ ঠান্ডা, ব্রংকাইটিস বা নিউমোনিয়া হতে পারে। কখনও কখনও সংক্রমণ ঠিকমতো সারলে কাশি দীর্ঘদিন স্থায়ী হতে পারে।
২. এলার্জি বা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া:
- ধুলা, ফুলের রেণু, পোষা প্রাণীর লোম, বা অন্যান্য অ্যালার্জেনের কারণে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া থেকে কাশি হতে পারে, যা সময়মতো ভালো হয় না।
৩. অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা:
- শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমার কারণে কাশি হতে পারে, বিশেষত রাতের বেলা বা ভোরের দিকে কাশি বেড়ে যেতে পারে। শ্বাসনালীর প্রদাহের কারণে এ সমস্যা হয়।
৪. ধূমপান বা পরিবেশগত দূষণ:
- ধূমপান বা ধোঁয়া, ধুলা বা রাসায়নিক দূষণের কারণে ফুসফুসে প্রদাহ হতে পারে, যা দীর্ঘস্থায়ী কাশির কারণ হতে পারে।
৫. গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD):
- পেটে থাকা অ্যাসিড গলা বা শ্বাসনালীর দিকে উঠে আসলে কাশি হতে পারে। এই সমস্যা সাধারণত খাওয়ার পর বা শুয়ে থাকার সময় হয়।
৬. সাইনাসের সংক্রমণ বা পোস্ট-নাসাল ড্রিপ:
- সাইনাস ইনফেকশনের কারণে নাক থেকে মিউকাস গলার দিকে প্রবাহিত হলে তা দীর্ঘস্থায়ী কাশি সৃষ্টি করতে পারে। একে “পোস্ট-নাসাল ড্রিপ” বলে।
৭. হৃদরোগ:
- কখনও কখনও হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে কাশি হতে পারে, বিশেষ করে যদি হার্ট ফেইলিওরের মতো সমস্যা থাকে।
৮. ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা:
- ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD), যেমন এমফাইসেমা বা ক্রনিক ব্রংকাইটিস, দীর্ঘমেয়াদি কাশির কারণ হতে পারে।
৯. মেডিকেশন (ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া):
- কিছু উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ (যেমন ACE inhibitors) দীর্ঘমেয়াদি কাশির কারণ হতে পারে।
১০. ফুসফুসের ক্যান্সার:
- খুবই কম ক্ষেত্রেই ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণে দীর্ঘমেয়াদি কাশি হতে পারে। বিশেষ করে যদি ধূমপানের ইতিহাস থাকে, তবে এ ধরনের কাশি অবহেলা করা উচিত নয়।
কাশি ভালো না হলে করণীয়:
- চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি কাশি তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় বা কাশির সঙ্গে রক্ত, উচ্চ তাপমাত্রা, শ্বাসকষ্ট থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
- ধূমপান বন্ধ করুন: ধূমপান দীর্ঘমেয়াদি কাশির বড় একটি কারণ হতে পারে, তাই ধূমপান ছাড়া অত্যন্ত জরুরি।
- এলার্জি বা পরিবেশগত কারণ পরিহার করুন: বাড়ির ধুলা, ধোঁয়া বা অন্যান্য অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকুন।
- অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টি-অ্যালার্জি ওষুধ: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টি-অ্যালার্জি ওষুধ গ্রহণ করুন।
- গলা পরিষ্কার রাখুন: গরম পানি বা লবণ পানি দিয়ে গারগল করতে পারেন। এছাড়া গরম পানীয় কাশির উপশমে সহায়ক।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং তরল পান: পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং তরল গ্রহণ শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
দীর্ঘমেয়াদি কাশি হলে তা উপেক্ষা করা উচিত নয়। এর নেপথ্যে গুরুতর কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।