বাচ্চাদের মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের (Cognitive Development) সময়ে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখা যায়, যার একটি হলো ছবি দেখে জিনিস চিনলেও বাস্তবে সেগুলো চিনতে না পারা। এটি সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে বেশি দেখা যায়, কারণ এই সময় তাদের মানসিক বিকাশ ধাপে ধাপে সম্পন্ন হচ্ছে। এই সমস্যাটি সাধারণত কগনিটিভ ডেভেলপমেন্ট বা বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের অসম্পূর্ণতার কারণে ঘটে।
Cognitive Development বা বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ কি?
Cognitive Development হলো বাচ্চার মানসিক বিকাশের প্রক্রিয়া, যেখানে তারা পৃথিবী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে, স্মৃতিশক্তি, চিন্তা করার ক্ষমতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি করে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বয়সের সাথে সাথে ধাপে ধাপে এগোয়।
কেন বাচ্চা ছবি দেখে জিনিস চিনতে পারছে, কিন্তু বাস্তবে চিনছে না?
এই সমস্যার বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:
- পার্সেপ্টুয়াল ডিসক্রিমিনেশন (Perceptual Discrimination): ছবি আর বাস্তব জীবনের জিনিসের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পারা বা সেগুলির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে না পারা অনেক সময় দেখা যায়। ছবি একটি দ্বিমাত্রিক (2D) অভিজ্ঞতা, কিন্তু বাস্তব জগৎ ত্রিমাত্রিক (3D)। এই ত্রিমাত্রিকতা এবং ছবির মধ্যে সম্পর্কটা বাচ্চার জন্য বোঝা কঠিন হতে পারে।
- মেমোরি গ্যাপ (Memory Gap): বাচ্চারা তাদের স্বল্পমেয়াদী মেমোরি থেকে ছবি চিনতে পারে, কিন্তু বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা মনে রাখতে পারে না। এর কারণ হচ্ছে তাদের স্মৃতিশক্তি এখনও পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়নি।
- কগনিটিভ অ্যাসোসিয়েশন (Cognitive Association) না হওয়া: বাচ্চারা ছবি দেখে কিছুটা ধারণা করে নেয়, কিন্তু বাস্তব জীবনে তারা সেই ধারণাকে বাস্তবের সাথে মিলাতে ব্যর্থ হয়। এটি তাদের ব্রেনের কগনিটিভ অ্যাসোসিয়েশনের অভাবের কারণে ঘটে।
- ভিজ্যুয়াল পারসেপশন (Visual Perception): বাচ্চার ভিজ্যুয়াল পারসেপশনের সমস্যা থাকলে, তারা ছবি দেখে কিছু বোঝার চেষ্টা করলেও বাস্তবের সঙ্গে সেটি তুলনা করতে সক্ষম হয় না।
- সেন্সরি প্রসেসিং ইস্যু (Sensory Processing Issue): বিশেষ করে অটিজম বা অন্য কোনো নিউরোডেভেলপমেন্টাল সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে এমন সমস্যা দেখা যেতে পারে। তারা সঠিকভাবে তাদের সংবেদনশীল অভিজ্ঞতাগুলোকে প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে না।
করণীয়:
১. বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদান করুন:
ছবি দেখার পাশাপাশি বাচ্চাকে বাস্তব জীবনেও সেগুলোর সাথে সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা দিন। যেমন, যদি সে আপেলের ছবি চিনতে পারে, তবে তাকে বাস্তব আপেল দেখান এবং স্পর্শ করার সুযোগ দিন। এতে তার মধ্যে ছবির সাথে বাস্তবের সম্পর্ক স্থাপিত হবে।
২. কথোপকথন বাড়ান:
বাচ্চার সাথে বেশি কথা বলুন এবং তাকে বিভিন্ন বস্তু, রঙ, আকার সম্পর্কে শেখান। বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সেগুলোর ছবি দেখিয়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করুন।
৩. ইন্টারঅ্যাকটিভ গেম খেলুন:
বিভিন্ন ইন্টারঅ্যাকটিভ গেম এবং অ্যাপ ব্যবহার করে বাচ্চাকে ছবি এবং বাস্তব জিনিসের মধ্যে পার্থক্য শেখানোর চেষ্টা করতে পারেন। এতে তাদের ভিজ্যুয়াল পারসেপশন এবং কগনিটিভ অ্যাসোসিয়েশন তৈরি হবে।
৪. সেন্সরি থেরাপি (Sensory Therapy):
যদি বাচ্চার মধ্যে কোনো সেন্সরি প্রসেসিং সমস্যা থাকে, তবে সেন্সরি থেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে তাদের ভিজ্যুয়াল, ট্যাকটাইল, অডিটরি সেন্স এবং মোটর স্কিল উন্নত হতে পারে।
৫. নিয়মিত চর্চা:
বাচ্চাকে নিয়মিত ছবি ও বাস্তব বস্তু দেখিয়ে চিনতে শেখান। তাকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করুন যে, ছবির জিনিসগুলো বাস্তব জীবনেও রয়েছে এবং তাদের দেখতে কেমন, তা কিভাবে কাজ করে।
উপসংহার:
বাচ্চারা প্রথমে ছবি দেখে সহজেই চিনতে পারে, কিন্তু বাস্তব জীবনের বস্তু চিনতে সময় নেয়। এটি তাদের Cognitive Development এর একটি অংশ এবং বয়সের সাথে সাথে এই সমস্যা দূর হয়ে যায়। বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশ এবং শিক্ষা প্রক্রিয়ায় কিছু সময় ধৈর্য ধরে তাদের শেখানোর প্রয়োজন রয়েছে।