সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) শিশুদের মধ্যে একটি সাধারণ স্নায়বিক সমস্যা, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে প্রভাবিত করে। এটি মূলত মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক বিকাশের কারণে ঘটে এবং এর ফলে শিশুদের চলাফেরা, সমন্বয়, মাংসপেশির শক্তি এবং মনোযোগের ক্ষেত্রে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে সেরিব্রাল পালসির চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নশীল হলেও অনেক অভিভাবক এই সমস্যা সম্পর্কে সচেতন নন। এখানে সেরিব্রাল পালসি শিশুদের কয়েকটি বিশেষ সমস্যা এবং বাংলাদেশে এর চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সেরিব্রাল পালসি বাচ্চার বিশেষ কিছু সমস্যা
১. চলাচলের সমস্যা
সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত বাচ্চারা সাধারণত চলাচল বা হাঁটার ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়। এদের চলাফেরা অসম্পূর্ণ এবং অনেক ক্ষেত্রে পঙ্গুত্ব দেখা দিতে পারে।
- মাংসপেশির দুর্বলতা: সেরিব্রাল পালসির কারণে শিশুদের মাংসপেশিতে দুর্বলতা তৈরি হয়, যা তাদের চলাফেরা এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে অসুবিধা সৃষ্টি করে।
- অসংগত চলাচল: কিছু শিশু অনিয়ন্ত্রিত মুভমেন্ট করে, যা তাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ পরিচালনা করতে বাধা সৃষ্টি করে।
২. খাওয়ার এবং গিলতে সমস্যা
সেরিব্রাল পালসির কারণে শিশুদের মুখ ও জিহ্বার পেশিগুলির দুর্বলতা দেখা দিতে পারে, যা তাদের খাওয়ার সময় সমস্যা তৈরি করে। এতে খাদ্য গিলতে এবং চিবাতে কষ্ট হয়, যা পুষ্টির অভাব তৈরি করতে পারে।
৩. কথা বলার সমস্যা
সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে অনেকেই স্পিচ সমস্যা নিয়ে ভুগে। এরা সঠিকভাবে শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না বা স্পষ্টভাবে কথা বলতে কষ্ট হয়।
- শব্দ তৈরিতে সমস্যা: মাংসপেশির দুর্বলতার কারণে তারা শব্দ তৈরি করতে সমস্যা অনুভব করে।
- স্পিচ থেরাপির প্রয়োজন: এই ধরনের সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার জন্য স্পিচ থেরাপি অত্যন্ত কার্যকর।
৪. মানসিক এবং শিক্ষাগত সমস্যা
সেরিব্রাল পালসি শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার ফলে তাদের বুদ্ধি বিকাশ এবং শিক্ষা গ্রহণের ক্ষমতায় ব্যাঘাত ঘটে।
- মনোযোগের ঘাটতি: এই শিশুদের মধ্যে মনোযোগের অভাব এবং স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে, যা তাদের শিক্ষা গ্রহণে সমস্যা সৃষ্টি করে।
- বিশেষ শিক্ষা: এদের জন্য বিশেষ শিক্ষা এবং থেরাপি দরকার যাতে তারা কার্যকরভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
৫. স্নায়বিক সমস্যা
সেরিব্রাল পালসি শিশুদের মধ্যে সাধারণত বিভিন্ন স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়, যেমন খিঁচুনি বা এপিলেপ্সি।
- এপিলেপ্সি: কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে খিঁচুনির সমস্যা দেখা দেয় যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
- চিকিৎসার প্রয়োজন: এ ধরনের সমস্যার জন্য প্রয়োজন সঠিক এবং নিয়মিত চিকিৎসা, যাতে শিশুদের খিঁচুনির পরিমাণ কমানো যায়।
বাংলাদেশে সেরিব্রাল পালসি চিকিৎসা
বাংলাদেশে সেরিব্রাল পালসি চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও বর্তমানে বেশ কিছু সেন্টার এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে।
- অকুপেশনাল থেরাপি: বাংলাদেশে কিছু চিকিৎসা কেন্দ্র সেরিব্রাল পালসি শিশুদের অকুপেশনাল থেরাপির মাধ্যমে দৈনন্দিন কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করছে।
- ফিজিক্যাল থেরাপি: ফিজিক্যাল থেরাপি সেরিব্রাল পালসি শিশুদের মাংসপেশি এবং চলাচল সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- সার্জারি এবং ঔষধ: কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার এবং ঔষধের সাহায্যে শিশুদের খিঁচুনি এবং মাংসপেশির স্প্যাস্টিসিটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
উপসংহার
সেরিব্রাল পালসি শিশুদের জীবন মান উন্নত করার জন্য প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা ও থেরাপি। বাংলাদেশে এ সমস্যার চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হলেও আরও সচেতনতা ও সঠিক সেবা নিশ্চিত করার প্রয়োজন রয়েছে। অভিভাবকরা যদি শিশুদের জন্য সঠিক থেরাপি এবং চিকিৎসা গ্রহণ করেন, তবে তাদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা সম্ভব।