প্যানিক ডিসঅর্ডারের জন্য সিবিটি থেরাপির কিছু টেকনিক যা নিজের উপরে এপ্লাই করা যায়

প্যানিক ডিসঅর্ডারের জন্য সিবিটি থেরাপির কিছু টেকনিক যা নিজের উপরে এপ্লাই করা যায়

প্যানিক ডিসঅর্ডার এমন একটি মানসিক অবস্থা যা আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিত প্যানিক আক্রমণগুলির মাধ্যমে প্রভাবিত করে। এই আক্রমণগুলো প্রায়ই হঠাৎ শুরু হয় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে সর্বোচ্চ তীব্রতায় পৌঁছায়। এর ফলে মানুষ প্রচণ্ড মানসিক ও শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করে, যেমন হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, এবং অনুভূতিতে উদ্বেগ। কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (সিবিটি) প্যানিক ডিসঅর্ডার মোকাবিলার একটি কার্যকর পদ্ধতি। এখানে কিছু সিবিটি থেরাপির টেকনিক উল্লেখ করা হলো যা আপনি নিজের উপরে প্রয়োগ করতে পারেন।

১. বিপরীত চিন্তা (Counter-Thoughts)

প্যানিক আক্রমণের সময়, আপনার মনে প্রচুর নেতিবাচক চিন্তা আসতে পারে, যেমন “আমি মারা যাচ্ছি,” বা “আমি এটি সহ্য করতে পারব না।” সিবিটি এই ধরনের চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য একটি কৌশল প্রদান করে। যখন এই ধরনের চিন্তা আসে, তখন নিজের কাছে প্রশ্ন করুন, “এই চিন্তাগুলো কি বাস্তবসম্মত?” এবং “আমি কি আসলে এই পরিস্থিতি থেকে ক্ষতি পাব?” এই পদ্ধতিটি আপনার মস্তিষ্ককে পুনর্গঠন করতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে প্যানিক আক্রমণের সময় আরও স্থিতিশীল রাখতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

২. সংবেদনশীল পুনঃপ্রশিক্ষণ (Sensory Reorientation)

প্যানিক আক্রমণের সময়, আপনার সংবেদনশীল অভিজ্ঞতা অত্যন্ত তীব্র হয়ে উঠতে পারে। এই সময় আপনার চারপাশের কোনো নির্দিষ্ট জিনিসের উপর মনোযোগ দিন, যেমন একটি রুমের একটি নির্দিষ্ট কোণ বা আপনার হাতে থাকা একটি বস্তু। এর রং, আকার, এবং টেক্সচার সম্পর্কে চিন্তা করুন। এটি আপনার মনকে পুনঃপ্রশিক্ষণ করতে সাহায্য করবে এবং আপনার প্যানিক আক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক হবে।

৩. শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ (Controlled Breathing)

প্যানিক আক্রমণের সময়, শ্বাসকষ্ট বা দ্রুত শ্বাস নেওয়া একটি সাধারণ উপসর্গ। শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি এই উপসর্গটি কমাতে পারেন। ধীরে ধীরে এবং গভীর শ্বাস নিন। নাক দিয়ে শ্বাস নিন এবং মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন। প্রতি শ্বাসের সময় মনোযোগ দিন এবং নিজের কাছে বলুন, “আমি শ্বাস নিচ্ছি এবং আমার মন শান্ত হচ্ছে।” এই পদ্ধতিটি প্যানিক আক্রমণের সময় আপনার শারীরিক প্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করবে।

৪. ক্রমাগত সংস্পর্শ (Gradual Exposure)

যেসব পরিস্থিতি বা স্থানগুলোতে প্যানিক আক্রমণ শুরু হয় সেগুলো থেকে পালিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে, সিবিটি তে ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন এবং ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতিতে বেশি সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। যেমন, যদি ভিড়ের মধ্যে প্যানিক আক্রমণ হয়, তাহলে প্রথমে কিছুটা সময় ভিড়ের পাশে দাঁড়ান, তারপর ধীরে ধীরে সেই ভিড়ের মধ্যে প্রবেশ করুন। এটি আপনার মস্তিষ্ককে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

৫. চিন্তা পুনর্গঠন (Thought Restructuring)

প্যানিক আক্রমণ আসার আগে আপনার মনে যে নেতিবাচক চিন্তাগুলো আসে তা পুনর্গঠন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি নোটবুকে এই চিন্তাগুলো লিখে ফেলুন এবং তাদের সাথে যুক্ত তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করুন। প্রশ্ন করুন, “এই চিন্তাগুলো কতটা যৌক্তিক?” এবং “এগুলো কি বাস্তবিকভাবে সম্ভব?” চিন্তা পুনর্গঠন পদ্ধতিতে আপনি দেখবেন যে অনেক নেতিবাচক চিন্তা আসলে অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন।

৬. রিল্যাক্সেশন টেকনিক (Relaxation Techniques)

প্যানিক আক্রমণের সময় রিল্যাক্সেশন টেকনিক প্রয়োগ করা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। মাসল রিল্যাক্সেশন পদ্ধতিতে প্রতিটি মাংসপেশী গ্রুপকে আলাদাভাবে টান দিন এবং তারপর ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন। এই টেকনিকটি আপনার শরীরের প্রতিটি অংশে শিথিলতা আনবে এবং আপনার মনের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনবে।

৭. পজিটিভ সেলফ-টক (Positive Self-Talk)

প্যানিক আক্রমণের সময় নিজেকে সাহস দেয়া অত্যন্ত কার্যকরী। প্যানিক আক্রমণ শুরু হলে নিজের কাছে বলুন, “আমি এটি সামলাতে পারব,” “এটি অল্পক্ষণের জন্য এবং আমি ঠিক হয়ে যাব,” এবং “আমার কিছুই হবে না।” পজিটিভ সেলফ-টক আপনাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে সাহায্য করবে এবং প্যানিক আক্রমণের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক হবে।

উপসংহার

প্যানিক ডিসঅর্ডার একটি চ্যালেঞ্জিং অবস্থা, তবে সঠিক কৌশল এবং নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সিবিটি থেরাপির এই টেকনিকগুলো নিজে প্রয়োগ করে আপনি আপনার প্যানিক আক্রমণগুলোর তীব্রতা কমাতে এবং আপনার জীবনকে আরও স্বাভাবিক এবং স্বস্তিদায়ক করতে পারেন। প্রতিদিন কিছু সময় এই টেকনিকগুলো অনুশীলন করুন এবং ধীরে ধীরে আপনার মনের শক্তি বাড়ান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top