ডিস্টাইমিয়া, যা ERSISTENT DEPRESSIVE DISORDER নামেও পরিচিত, একটি দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি দীর্ঘ সময় ধরে মৃদু থেকে মাঝারি স্তরের বিষণ্নতা অনুভব করেন। এটি অন্যান্য ধরনের বিষণ্নতার মতো তীব্র না হলেও, এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব একজনের জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। সিবিটি বা কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি ডিস্টাইমিয়া ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। এখানে কিছু সিবিটি টেকনিক দেওয়া হলো যা আপনি নিজের উপর প্রয়োগ করতে পারেন।
১. নেতিবাচক চিন্তা চিহ্নিতকরণ এবং চ্যালেঞ্জ করা
ডিস্টাইমিয়ার সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হল নেতিবাচক চিন্তাভাবনা। এই চিন্তাগুলি প্রায়ই আপনার মানসিক অবস্থাকে খারাপ করতে পারে। প্রথমে, আপনাকে এই চিন্তাগুলি চিহ্নিত করতে হবে। প্রতিবার যখন আপনি নিজেকে নেতিবাচকভাবে ভাবতে বা নিজের উপর সমালোচনা করতে দেখেন, তখন সেই চিন্তাটি লিখে ফেলুন।
এরপর, এই চিন্তাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করুন। ভাবুন, “এই চিন্তাটি কতটা যুক্তিসঙ্গত?” “এর বিপরীতে কি কোনো প্রমাণ আছে?” “কেউ যদি আমার মতো পরিস্থিতিতে থাকতো, আমি তাকে কি পরামর্শ দিতাম?” এইভাবে চিন্তাগুলির বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন করলে আপনি নেতিবাচক চিন্তাগুলি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
২. আচরণগত সক্রিয়তা (Behavioral Activation)
ডিস্টাইমিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই জীবনের আনন্দদায়ক কাজগুলি এড়িয়ে চলেন, যার ফলে তাদের মন আরো খারাপ হয়। আচরণগত সক্রিয়তা হল এমন একটি টেকনিক যেখানে আপনি পরিকল্পিতভাবে আপনার দৈনন্দিন জীবনে কিছু আনন্দদায়ক কাজ অন্তর্ভুক্ত করেন।
প্রথমে, এমন কিছু কাজের তালিকা তৈরি করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয়, যেমন হাঁটা, পছন্দের গান শোনা, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো, বা কোন সৃজনশীল কাজ করা। প্রতিদিন একটি বা দুটি কাজ তালিকা থেকে বেছে নিন এবং সেগুলি করার চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে, আপনি দেখতে পাবেন যে এই ছোট ছোট কাজগুলি আপনার মানসিক অবস্থাকে উন্নত করতে সহায়ক।
৩. মাইন্ডফুলনেস এবং রিল্যাক্সেশন টেকনিক
মাইন্ডফুলনেস মানে হলো বর্তমান মুহূর্তে মনোনিবেশ করা এবং আপনার চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতিগুলির সাথে মিশে থাকা। এটি আপনাকে অতীতের বা ভবিষ্যতের উদ্বেগ থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক হতে পারে।
প্রতিদিনের রুটিনে কিছু সময় রাখুন যেখানে আপনি শুধুমাত্র মাইন্ডফুলনেস চর্চা করবেন। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিদিনের কাজের মাঝে কিছু সময় নিয়ে গভীর শ্বাস গ্রহণ করুন এবং বর্তমান মুহূর্তের অনুভূতিগুলির উপর মনোনিবেশ করুন। এছাড়াও, ধ্যান বা ইয়োগার মাধ্যমে রিল্যাক্সেশন টেকনিকগুলিও আপনার মস্তিষ্ককে শিথিল করতে সহায়ক হতে পারে।
৪. চিন্তার পুনর্গঠন (Cognitive Restructuring)
এই টেকনিকটির মাধ্যমে, আপনি নেতিবাচক এবং বিকৃত চিন্তাভাবনাগুলিকে আরও বাস্তবসম্মত এবং ইতিবাচক চিন্তায় রূপান্তরিত করার চেষ্টা করেন। এটি করার জন্য, প্রথমে আপনার নেতিবাচক চিন্তাগুলিকে চিহ্নিত করুন। তারপর সেগুলি আরও ইতিবাচক এবং বাস্তবসম্মত চিন্তায় রূপান্তরিত করার চেষ্টা করুন।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি মনে করেন “আমি কখনই সফল হব না,” তাহলে সেই চিন্তাটিকে পুনর্গঠন করে বলতে পারেন, “আমি যদি যথেষ্ট পরিশ্রম করি এবং শেখা অব্যাহত রাখি, তাহলে আমি সফল হওয়ার সুযোগ পাব।” এরকমভাবে চিন্তাগুলিকে পুনর্গঠন করার মাধ্যমে আপনি নিজের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারবেন।
৫. সোশ্যাল সাপোর্ট বৃদ্ধি
ডিস্টাইমিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায়ই সমাজ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেন, যা তাদের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। তাই সোশ্যাল সাপোর্ট বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পরিবার, বন্ধু এবং প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখুন। তাদের সাথে আপনার অনুভূতিগুলি শেয়ার করুন এবং তাদের সাহায্য নিন। একাকীত্ব এবং বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্তি পেতে সোশ্যাল সাপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
উপসংহার
ডিস্টাইমিয়া একটি দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অবস্থা, কিন্তু সঠিক টেকনিক এবং থেরাপির মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সিবিটি থেরাপির এই টেকনিকগুলি ডিস্টাইমিয়া ব্যবস্থাপনার জন্য খুবই কার্যকর হতে পারে, যা আপনি নিজে নিজে প্রয়োগ করতে পারেন। তবে যদি পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়, তাহলে একটি মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবসময়ই ভালো। নিজের যত্ন নেওয়া এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।