টাইফয়েড জ্বরের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার

টাইফয়েড জ্বর একটি গুরুতর ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা Salmonella Typhi নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের মাধ্যমে হয়। সাধারণত দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে এটি ছড়ায়। এটি বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেশি দেখা যায়, যেখানে স্যানিটেশন ব্যবস্থা দুর্বল। টাইফয়েড যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

টাইফয়েডের কারণ:

টাইফয়েড জ্বর মূলত Salmonella Typhi ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে হয়। এটি খাবার ও পানির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং রক্তে মিশে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যেসব অঞ্চলে সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই বা খাবার ও পানীয়তে জীবাণু থাকে, সেখানে টাইফয়েডের ঝুঁকি বেশি।

raju akon youtube channel subscribtion

টাইফয়েডের লক্ষণ:

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণত সংক্রমণের ১-৩ সপ্তাহ পরে লক্ষণগুলো দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে:

  1. উচ্চ জ্বর: ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর দেখা দিতে পারে।
  2. অত্যন্ত ক্লান্তি: রোগীর প্রচণ্ড ক্লান্তি এবং দুর্বলতা বোধ হয়।
  3. পেটে ব্যথা: পেটের নিচের অংশে ব্যথা বা অস্বস্তি দেখা দেয়।
  4. ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য: টাইফয়েডের কারণে কোনো কোনো সময় ডায়রিয়া, আবার কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
  5. মাথাব্যথা: অবিরাম মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।
  6. ক্ষুধামন্দা ও ওজন কমা: রোগী খেতে ইচ্ছা করেন না এবং শরীরের ওজন দ্রুত হ্রাস পায়।
  7. চর্মরোগ: কোনো কোনো রোগীর গায়ে হালকা গোলাপি র‍্যাশ বা লাল দাগ দেখা দিতে পারে।

টাইফয়েডের চিকিৎসা:

টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা করতে দেরি করা উচিত নয়। সঠিক চিকিৎসা না করলে এটি জীবনঘাতী হতে পারে। সাধারণত টাইফয়েডের চিকিৎসা নিম্নরূপ:

  1. অ্যান্টিবায়োটিক: টাইফয়েডের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। Ciprofloxacin, Azithromycin, এবং Ceftriaxone টাইফয়েডের জন্য প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক।
  2. হাসপাতালে ভর্তি: রোগী যদি গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায়, তাহলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। রোগীর শরীরের পানি ও লবণ সমতা ঠিক রাখার জন্য স্যালাইন দেয়া হয়।
  3. পর্যাপ্ত বিশ্রাম: রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে এবং স্বাভাবিক খাদ্য খেতে হবে।

টাইফয়েড প্রতিরোধ:

টাইফয়েড প্রতিরোধ করতে নিচের পদক্ষেপগুলো মেনে চলা উচিত:

  1. বিশুদ্ধ পানি পান: শুধু ফুটানো পানি বা বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। পানি দূষিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তা ব্যবহার করা উচিত নয়।
  2. সঠিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা: শৌচাগার ব্যবহারের পরে এবং খাবার খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
  3. বিশুদ্ধ খাবার খাওয়া: রাস্তার খাবার, কাঁচা বা অপরিষ্কার খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
  4. টিকা গ্রহণ: টাইফয়েডের জন্য দুটি ধরনের টিকা আছে—injectable vaccine এবং oral vaccine। যেসব অঞ্চলে টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব বেশি, সেখানে টিকা গ্রহণ করা জরুরি।

টাইফয়েড জ্বর একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও, সঠিক চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বিশুদ্ধ পানি পান করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা ঠিক রাখা টাইফয়েড প্রতিরোধের অন্যতম উপায়।

ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top