কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সমূহ

কিডনিতে পাথর হওয়া একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। কিডনির অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরণের খনিজ পদার্থ ও লবণ জমে এই পাথর গঠিত হয়। কিডনি পাথর সাধারণত আকারে ছোট হয়, তবে সময়ের সাথে সাথে বড় হতে পারে। এটি অনেক সময় প্রচণ্ড ব্যথা এবং অন্যান্য জটিলতার কারণ হতে পারে।

কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ:

কিডনিতে পাথর হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যা নিচে তুলে ধরা হলো:

raju akon youtube channel subscribtion

১. পর্যাপ্ত পানি পান না করা: শরীরে পানির অভাব হলে প্রস্রাব ঘন হয়ে যায় এবং এতে খনিজ পদার্থগুলো জমা হয়ে পাথর সৃষ্টি করে।

২. অতিরিক্ত লবণ ও প্রোটিন গ্রহণ: খাদ্যে বেশি লবণ এবং প্রোটিন গ্রহণ করলে কিডনিতে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম জমা হয়, যা পাথর গঠনের অন্যতম কারণ।

৩. পারিবারিক ইতিহাস: যদি পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের কিডনিতে পাথর হয়ে থাকে, তবে আপনারও এই সমস্যাটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

৪. অতিরিক্ত ওজন: ওজন বাড়ার সাথে সাথে কিডনিতে পাথর গঠনের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

৫. কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের প্রভাব: নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে সেবন করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ:

কিডনিতে পাথর হলে নীচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:

১. পিঠে ও পাশে তীব্র ব্যথা: পাথর কিডনির মধ্যে বা মূত্রনালীতে চলাচল করলে তীব্র ব্যথা হতে পারে, যা পিঠ ও পাশে অনুভূত হয়।

২. প্রস্রাবে জ্বালা-পোড়া বা ব্যথা: পাথর মূত্রনালীর দিকে গেলে প্রস্রাবের সময় জ্বালা-পোড়া বা ব্যথা হতে পারে।

৩. প্রস্রাবে রক্ত: পাথরের ফলে প্রস্রাবে রক্ত দেখা যেতে পারে, যা গোলাপি বা লালচে রঙের হতে পারে।

৪. বমি বমি ভাব ও বমি: কিডনিতে পাথর হলে পেটে ব্যথা বা অস্বস্তির সাথে বমি বমি ভাব হতে পারে।

৫. প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া: কিডনিতে পাথর থাকলে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে এবং প্রস্রাব করতে সমস্যা হতে পারে।

কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়:

কিডনিতে পাথর হলে চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ উভয়ই প্রয়োজনীয়। নীচে কিডনিতে পাথর প্রতিরোধের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হলো:

১. প্রচুর পানি পান করা: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে কিডনিতে খনিজ পদার্থ জমতে পারে না এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে তা বেরিয়ে যায়।

২. লবণ ও প্রোটিনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: খাদ্যে অতিরিক্ত লবণ ও প্রোটিন গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এগুলো কিডনিতে পাথর গঠনের ঝুঁকি বাড়ায়।

৩. অতিরিক্ত ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার থেকে সাবধান থাকা: অতিরিক্ত ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এটি পাথর গঠনের ঝুঁকি বাড়ায়।

৪. ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন: কিডনিতে পাথর হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে এবং প্রয়োজন হলে অস্ত্রোপচার করানো যেতে পারে।

৫. প্রাকৃতিক উপায়ে পাথর দূর করা: কিছু প্রাকৃতিক উপায় যেমন লেবুর রস, আপেল সিডার ভিনেগার ইত্যাদি নিয়মিত পান করলে কিডনির পাথর ধীরে ধীরে দূর হতে পারে।

চিকিৎসা:

কিডনিতে পাথরের আকার ও অবস্থানের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে। ছোট পাথরগুলি সাধারণত প্রচুর পানি পান করে বা ওষুধের মাধ্যমে বের হয়ে যেতে পারে। বড় পাথরগুলোর জন্য কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। নিচে কয়েকটি চিকিৎসার পদ্ধতি দেওয়া হলো:

১. ওষুধ: কিছু ওষুধ পাথর গলাতে সাহায্য করে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করে।

২. শকওয়েভ থেরাপি: বড় পাথরগুলোর জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেখানে শকওয়েভের মাধ্যমে পাথরকে ভেঙে ছোট করা হয়।

৩. সার্জারি: যদি পাথর খুব বড় হয় এবং ওষুধ বা শকওয়েভ থেরাপি দিয়ে না সরানো যায়, তাহলে সার্জারির মাধ্যমে পাথর অপসারণ করা হয়।

কিডনিতে পাথর হওয়া একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে, তবে সঠিক সময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই সমস্যাটি এড়ানো সম্ভব। নিয়মিত পানি পান করা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা এবং প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কিডনিতে পাথরের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top