মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ সমূহ, লক্ষণ ও প্রতিকার

মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া, বা মুখের শুষ্কতা (Xerostomia), একটি অস্বস্তিকর অবস্থা যা সাধারণত মুখের লালা উৎপাদন কমে যাওয়ার ফলে ঘটে। লালা আমাদের মুখের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং খাওয়া, কথা বলা, এমনকি গিলতেও সহায়ক। এই সমস্যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাময়িক হলেও, এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে মৌখিক স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার মান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এই ব্লগে আমরা মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ, লক্ষণ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

১. মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ সমূহ

মুখের শুষ্কতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। নিচে কিছু প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো:

raju akon youtube channel subscribtion

১.১. পানিশূন্যতা (Dehydration)

পানি কম পান করার ফলে দেহে পানির অভাব দেখা দেয়, যা লালা উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এতে মুখ শুকিয়ে যায় এবং জিহ্বার আর্দ্রতাও কমে যায়।

১.২. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

বেশ কিছু ওষুধ, যেমন অ্যান্টিহিস্টামিন, ডায়ুরেটিকস, এন্টিডিপ্রেসেন্টস, এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ মুখের লালা উৎপাদন কমাতে পারে। ফলে মুখ ও জিহ্বা শুষ্ক হয়ে যায়।

১.৩. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ

বেশি মানসিক চাপ বা উদ্বেগের সময় শরীরের অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেম লালার নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। এতে মুখ শুষ্কতার অনুভূতি তৈরি হয়।

১.৪. সজোগ্রেনের সিনড্রোম (Sjogren’s Syndrome)

এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের লালা এবং চোখের পানি উৎপাদন কমে যায়। এর ফলে মুখ এবং চোখ শুষ্ক হয়ে থাকে।

১.৫. ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে মুখে শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত না থাকলে মুখের শুষ্কতার সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

১.৬. শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা

মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়া, বিশেষত রাতে ঘুমানোর সময়, মুখের লালা শুষ্ক করে দেয় এবং সকালে জেগে ওঠার সময় মুখ শুকিয়ে যাওয়ার অনুভূতি হয়।

১.৭. ধূমপান ও অ্যালকোহল

ধূমপান ও অ্যালকোহল মুখের লালার পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং এর ফলে মুখ ও জিহ্বা শুষ্ক হয়ে যায়।

২. মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়ার লক্ষণসমূহ

মুখের শুষ্কতার লক্ষণগুলি সহজেই বোঝা যায়। নিচে কিছু সাধারণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:

২.১. বারবার পানি পিপাসা লাগা

২.২. কথা বলার সময় অস্বস্তি বোধ করা

২.৩. খাওয়া এবং গিলতে সমস্যা হওয়া

২.৪. জিহ্বা ও মাড়িতে আঠালো অনুভূতি

২.৫. মুখের গন্ধ (Halitosis) বেড়ে যাওয়া

২.৬. ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া এবং ফেটে যাওয়া

২.৭. মাড়ি ও দাঁতে সমস্যা, যেমন ক্যাভিটি এবং ইনফেকশন

৩. মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়ার প্রতিকার

মুখের শুষ্কতা থেকে মুক্তি পেতে এবং লালার উৎপাদন বাড়াতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:

৩.১. পর্যাপ্ত পানি পান করা

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে দেহে পানির অভাব পূরণ হয় এবং লালা উৎপাদন স্বাভাবিক থাকে। এতে মুখের শুষ্কতা কমে যায়।

৩.২. চুইংগাম বা হার্ড ক্যান্ডি চিবানো

চিনি মুক্ত চুইংগাম বা হার্ড ক্যান্ডি চিবালে লালার নিঃসরণ বাড়ে এবং মুখ আর্দ্র থাকে।

৩.৩. ওষুধ পরিবর্তন

যদি কোনো ওষুধের কারণে মুখ শুষ্ক হয়ে যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ পরিবর্তন বা ডোজ সমন্বয় করা যেতে পারে।

৩.৪. ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন

ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ করলে মুখের শুষ্কতা কমে এবং লালা নিঃসরণ বাড়ে।

৩.৫. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা যেতে পারে। এতে লালার নিঃসরণ স্বাভাবিক হয়।

৩.৬. লালা পরিবর্তী ব্যবহার

যেসব ক্ষেত্রে মুখের শুষ্কতা দীর্ঘস্থায়ী হয়, সেক্ষেত্রে কৃত্রিম লালা বা লালা বৃদ্ধিকারক স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩.৭. নিয়মিত দাঁতের যত্ন নেওয়া

মুখের শুষ্কতা মাড়ি এবং দাঁতের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা, ফ্লস করা এবং ডেন্টিস্টের কাছে চেকআপ করানো উচিত।

উপসংহার

মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যাকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এর কারণ জানতে এবং প্রতিকার করতে দেরি না করা উচিত। পর্যাপ্ত পানি পান করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা, ওষুধ পরিবর্তন এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যদি সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top