গলায় কাটা কাটা লাগার অনুভূতি খুবই অস্বস্তিকর হতে পারে। এটি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি তেমন গুরুতর নয়। বিভিন্ন কারণ এই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন খাবারের সমস্যা, অ্যালার্জি, ভাইরাল সংক্রমণ ইত্যাদি। তবে কিছু ক্ষেত্রে, গলায় কাটা কাটা লাগা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে প্রয়োজন হয়।
গলায় কাটা কাটা লাগার কারণ:
১. শুকনো গলা:
পানি কম পান করা বা শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে গলার শ্লেষ্মা শুকিয়ে যেতে পারে, যা গলায় অস্বস্তিকর কাটা কাটা লাগার অনুভূতি সৃষ্টি করে।
২. ঠান্ডা বা সর্দি:
ঠান্ডা লাগলে বা সর্দির সময় গলার শ্লেষ্মা ঘন হয়ে যায় এবং কফ জমতে শুরু করে। এটি গলায় কাটা কাটা অনুভূতির কারণ হতে পারে।
৩. ভাইরাল সংক্রমণ:
গলা ব্যথা এবং কাটা কাটা লাগার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ভাইরাল সংক্রমণ, বিশেষ করে ফ্যারিঞ্জাইটিস বা গলাব্যথা। ভাইরাসের কারণে গলা ফোলাভাব সৃষ্টি করে এবং অস্বস্তি বাড়িয়ে তোলে।
৪. অ্যালার্জি:
বিভিন্ন অ্যালার্জি, যেমন ধুলোবালি, পরাগ রেণু বা পোষা প্রাণীর লোমের প্রতি অ্যালার্জি, গলায় খুসখুসে এবং কাটা কাটা লাগার অনুভূতি তৈরি করতে পারে।
৫. অ্যাসিড রিফ্লাক্স:
অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে পাকস্থলীর অ্যাসিড গলায় উঠে আসতে পারে, যা গলায় জ্বালা এবং কাটা কাটা লাগার কারণ হতে পারে।
৬. ধূমপান:
যারা ধূমপান করেন তাদের মধ্যে গলা শুষ্ক এবং কাটা কাটা লাগার প্রবণতা বেশি থাকে। ধোঁয়ার কারণে গলার টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শুষ্কতা সৃষ্টি হয়।
৭. বাহ্যিক বস্তু আটকে যাওয়া:
কখনও কখনও খাবার খাওয়ার সময় মাছের কাঁটা বা অন্যান্য তীক্ষ্ণ বস্তু গলায় আটকে যায়, যা গলায় কাটা কাটা অনুভূতির কারণ হতে পারে।
গলায় কাটা কাটা লাগার প্রতিকার:
১. পানি পান করুন:
গলায় শুষ্কতা বা কাটা কাটা লাগার অন্যতম প্রধান প্রতিকার হলো প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। এটি গলার শ্লেষ্মা আর্দ্র রাখে এবং অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করে।
২. গরম পানীয় পান করুন:
গরম চা বা গরম পানিতে মধু মিশিয়ে পান করলে গলার শুষ্কতা এবং কাটা কাটা লাগার সমস্যা কমে যায়। এটি গলার টিস্যু শিথিল করতে সহায়ক।
৩. লবণ পানি দিয়ে গার্গল করুন:
হালকা গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করা একটি কার্যকর প্রতিকার। এটি গলার সংক্রমণ কমাতে এবং শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
৪. অ্যালার্জির ওষুধ নিন:
যদি অ্যালার্জির কারণে গলায় কাটা কাটা লাগছে বলে মনে হয়, তাহলে অ্যালার্জির ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে। অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করে।
৫. অ্যাসিড রিফ্লাক্স প্রতিরোধে সচেতন থাকুন:
যদি অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে গলায় কাটা কাটা লাগছে, তাহলে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করা উচিত। পাশাপাশি বেশি তেল-মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬. ধূমপান এড়িয়ে চলুন:
ধূমপান গলার টিস্যুতে ক্ষতি করে। তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকা গলার স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। ধূমপান ছাড়ার জন্য পরামর্শ বা চিকিৎসকের সহযোগিতা নিন।
৭. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
যদি গলায় কাঁটা বা অন্য কোনো বস্তু আটকে যায় এবং তা বাড়ির উপায়ে বের করা সম্ভব না হয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
কখন ডাক্তার দেখাবেন:
- যদি গলা ব্যথা ও কাটা কাটা লাগার সমস্যা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে।
- যদি গলার ফোলাভাব ও ব্যথা বাড়তে থাকে।
- যদি শ্বাসকষ্ট বা গিলতে কষ্ট হয়।
- যদি গলা দিয়ে রক্তপাত শুরু হয়।
উপসংহার:
গলায় কাটা কাটা লাগার সমস্যা সাধারণত সহজেই প্রতিকার করা যায়, তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পানি পান, লবণ পানি দিয়ে গার্গল এবং অন্যান্য ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে এই সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। তবে বিশেষ কোনো কারণ বা সংক্রমণ থাকলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।