রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসার কারণ: কারণ, উপসর্গ ও প্রতিকার

রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা অনেকের জন্য অস্বস্তিকর এবং উদ্বেগজনক হতে পারে। এটি সাধারণত কোনো সংক্রমণ বা শারীরিক সমস্যার একটি লক্ষণ। জ্বর শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় করার জন্য শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য সংক্রমণকে প্রতিরোধ করতে সহায়ক। তবে রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, এবং এর প্রতিকার জানতে হলে মূল কারণ শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।

রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসার কারণ

১. ম্যালেরিয়া

ম্যালেরিয়া রোগে সাধারণত রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হয়। এটি একটি পরজীবীজনিত রোগ, যা সাধারণত মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। ম্যালেরিয়ায় উচ্চ জ্বর, কাঁপুনি, মাথা ব্যথা এবং বমি বমি ভাব দেখা যায়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু

ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সাধারণ ফ্লু-এর কারণে জ্বরের সাথে কাঁপুনি দেখা দিতে পারে। ফ্লু একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, যা শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং রাতের বেলায় কাঁপুনি সৃষ্টি করে।

৩. টাইফয়েড জ্বর

টাইফয়েড জ্বরের অন্যতম লক্ষণ হলো রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা। টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায় এবং পেটের সমস্যা, মাথা ব্যথা, ক্লান্তি, এবং রাতে জ্বর দেখা যায়।

৪. ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI)

ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা মূত্রনালির সংক্রমণও রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বরের একটি কারণ হতে পারে। UTI-এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরে সংক্রমণ ছড়িয়ে জ্বর সৃষ্টি করে।

৫. লিম্ফোমা এবং ক্যান্সার

কিছু ক্ষেত্রে, লিম্ফোমা বা অন্যান্য ক্যান্সারজনিত কারণে রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হতে পারে। শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে, যা রাতে বেশি তীব্র হতে পারে।

৬. অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম

যারা দিনে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করে, তাদের রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হতে পারে। শরীর অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করলে এমন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।

৭. সেপসিস

সেপসিস বা রক্তের সংক্রমণ একটি গুরুতর অবস্থা, যা কাঁপুনি এবং জ্বরের সৃষ্টি করতে পারে। এটি সাধারণত অন্য কোনো সংক্রমণের গুরুতর আকার ধারণ করলে ঘটে এবং দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।

৮. টিউবারকুলোসিস (টিবি)

টিউবারকুলোসিস বা যক্ষ্মার কারণে রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হতে পারে। টিবি রোগে ধীরে ধীরে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে এবং রোগী রাতে বেশি জ্বর অনুভব করে।

উপসর্গ

  • রাতের বেলায় প্রচণ্ড ঠান্ডা লাগা ও কাঁপুনি
  • হালকা বা উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর
  • শরীরে ব্যথা, বিশেষত পেশি ও জয়েন্টের ব্যথা
  • মাথা ব্যথা এবং দুর্বলতা
  • ঘামানো এবং ক্লান্তি

প্রতিকার

১. জ্বর কমানোর জন্য ওষুধ

জ্বর কমানোর জন্য সাধারণত প্যারাসিটামল বা অন্যান্য অ্যান্টি-পাইরেটিক ওষুধ দেওয়া হয়। তবে সঠিক ওষুধের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

২. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা

রোগীর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঠান্ডা পানি দিয়ে কাপড় ভিজিয়ে শরীরে মোছা যেতে পারে। এটি জ্বর কমাতে সহায়ক।

৩. পর্যাপ্ত পানি পান করা

জ্বরের সময় শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়, তাই বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচতে রোগীকে নিয়মিত পানি, ফলের রস বা ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় দেওয়া উচিত।

৪. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া

যদি রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর বারবার হয়, তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, এটি গুরুতর সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে, যেমন ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, সেপসিস বা যক্ষ্মা।

৫. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ

জ্বরের সময় রোগীর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, তাই পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই জরুরি। ফ্লুইড, ফল, সবজি এবং হালকা প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীর দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

উপসংহার

রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ইউরিনারি সংক্রমণ বা সেপসিস। এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। জ্বর কমাতে ওষুধ, পর্যাপ্ত পানি এবং সঠিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। সময়মতো চিকিৎসা করলে এই ধরনের জ্বর দ্রুত নিরাময় হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top