কোমরের নিচে ব্যথার কারণ: কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায়

কোমরের নিচে ব্যথা (Lower Back Pain) একটি সাধারণ সমস্যা যা ছোটখাটো অস্বস্তি থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে। অনেকেই এটি উপেক্ষা করেন, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা শরীরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। কীভাবে কোমরের নিচের ব্যথা সৃষ্টি হয়? এর কারণ কী এবং প্রতিকার কীভাবে করা যায়? এই নিবন্ধে আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করব।

কোমরের নিচে ব্যথার সম্ভাব্য কারণসমূহ

১. পেশির টান ও আঘাত

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোমরের নিচে ব্যথা পেশির টান (Muscle Strain) বা আঘাতের কারণে হয়ে থাকে। ভারী বস্তু তুলতে গিয়ে বা ভুল অঙ্গভঙ্গির কারণে পেশির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

২. ডিস্ক সংক্রান্ত সমস্যা

আমাদের মেরুদণ্ডে ডিস্ক (Intervertebral Disc) নামক একটি জেলি-জাতীয় গঠন থাকে, যা শক অ্যাবসর্বার হিসেবে কাজ করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বা দুর্ঘটনার ফলে ডিস্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

৩. সায়াটিকা (Sciatica)

সায়াটিক নার্ভ কোমরের নিচ থেকে পায়ের দিকে বিস্তৃত থাকে। এই নার্ভে চাপ পড়লে বা ইনফ্লেমেশন হলে কোমরের নিচ থেকে পায়ে ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

৪. অস্থিসন্ধির ক্ষয় (Arthritis)

বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে অনেকের ক্ষেত্রে অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis) দেখা দেয়, যা মেরুদণ্ডের হাড়ের মধ্যকার কার্টিলেজ ক্ষয় করে ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।

৫. অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা

স্থূলতা মেরুদণ্ডের নিচের অংশে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যথার কারণ হতে পারে।

৬. দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা

অনেকেই দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন, যা পেশিকে দুর্বল করে ফেলে এবং কোমরের নিচের ব্যথা সৃষ্টি করে।

৭. অন্তর্নিহিত রোগ

কিছু ক্ষেত্রে কিডনির সমস্যা, প্রজনন সংক্রান্ত জটিলতা বা অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতাও কোমরের নিচে ব্যথার কারণ হতে পারে।

কোমরের নিচে ব্যথার প্রতিকার ও চিকিৎসা

১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও গরম-ঠান্ডা সেঁক

ব্যথার প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্রাম নেওয়া এবং গরম-ঠান্ডা সেঁক ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া যায়।

২. ফিজিওথেরাপি

একজন ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিয়ে ব্যাক পেইনের জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম করলে ব্যথা দ্রুত কমে আসতে পারে।

৩. ব্যথানাশক ওষুধ

প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে ব্যথানাশক ওষুধ নেওয়া যেতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে ওষুধের উপর নির্ভর না করাই ভালো।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ

সুস্থ শরীরের জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা জরুরি। স্বাস্থ্যকর ডায়েট ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে অতিরিক্ত ওজন কমানো গেলে কোমরের নিচের ব্যথা কমতে পারে।

৫. সঠিক অঙ্গভঙ্গি মেনে চলা

সঠিক ভঙ্গিতে বসা, হাঁটা এবং ভারী বস্তু তোলার সময় সতর্ক থাকা জরুরি।

৬. সার্জারি (শেষ বিকল্প)

যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায় এবং অন্যান্য পদ্ধতিতে কাজ না করে, তবে ডাক্তার সার্জারির পরামর্শ দিতে পারেন।

কোমরের নিচে ব্যথা প্রতিরোধের উপায়

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন।
সঠিক ভঙ্গিতে বসুন ও হাঁটুন।
ভারী বস্তু তোলার সময় হাঁটু ভাঁজ করে তুলুন, কোমরে চাপ দেবেন না।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করুন।
দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করলে প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিনিট হাঁটুন বা স্ট্রেচিং করুন।

উপসংহার

কোমরের নিচে ব্যথা উপেক্ষা করলে এটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই শুরুতেই সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আপনার যদি এই সমস্যাটি থেকে থাকে, তবে আজই সচেতন হয়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top