সর্দির সাথে রক্ত দেখা অনেকের জন্য আতঙ্কের কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত নাকের অভ্যন্তরীণ রক্তনালীগুলোর ক্ষতি বা সংক্রমণের কারণে ঘটে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক কিছু নয়, কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। তাই এর কারণ, প্রতিকার এবং কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত তা জানা জরুরি।
সর্দির সাথে রক্ত আসার সম্ভাব্য কারণ
সর্দির সাথে রক্ত আসার কয়েকটি সাধারণ কারণ নিচে তুলে ধরা হলো—
১. নাকের শুষ্কতা ও সংবেদনশীলতা
শীতকালে বা শুষ্ক আবহাওয়ায় নাকের অভ্যন্তরীণ পর্দা শুকিয়ে যেতে পারে, যা রক্তনালীগুলোর ক্ষতি করে এবং রক্তপাতের কারণ হতে পারে।
২. অতিরিক্ত নাক ঝাড়ার ফলে রক্তপাত
অনেক সময় সর্দি জমে গেলে অতিরিক্ত নাক ঝাড়া হয়, যা নাকের ভেতরের টিস্যুগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং রক্তপাত ঘটাতে পারে।
৩. নাকের সংক্রমণ (সাইনুসাইটিস)
সাইনাস সংক্রমণ বা দীর্ঘস্থায়ী সর্দি হলে নাকের টিস্যু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রক্তপাত হতে পারে।
৪. অ্যালার্জি ও প্রদাহ
ধুলাবালি, ফুলের রেণু, ধোঁয়া বা অন্যান্য অ্যালার্জির কারণে নাকের টিস্যু ফুলে যেতে পারে, যা রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে রক্তপাত ঘটাতে পারে।
৫. নাকের পলিপ বা টিউমার
নাকের ভেতরে পলিপ বা টিউমার থাকলে তা রক্তনালীগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে সর্দির সাথে রক্ত আসতে পারে।
৬. উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেশার)
উচ্চ রক্তচাপ থাকলে রক্তনালীগুলোর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে, যা রক্তক্ষরণের কারণ হতে পারে।
৭. রক্তের জমাট বাঁধার সমস্যা
হিমোফিলিয়া বা থ্রম্বোসাইটোপেনিয়ার মতো রক্তের সমস্যা থাকলে সামান্য আঘাতেও রক্তপাত হতে পারে।
৮. কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট (রক্ত পাতলা করার ওষুধ) বা অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে নাক থেকে রক্তপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
সর্দির সাথে রক্ত আসলে কী করবেন?
সর্দির সাথে রক্ত এলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা উচিত—
নাক ঝাড়া বন্ধ করুন: অতিরিক্ত নাক ঝাড়া নাকের রক্তনালীতে চাপ সৃষ্টি করে, তাই ধীরে ধীরে পরিষ্কার করা ভালো।
নাক ভেজা রাখুন: নাকের ভেতর শুকিয়ে গেলে রক্তপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, তাই স্যালাইন স্প্রে বা নারিকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
শীতল পরিবেশে থাকুন: রক্তপাত হলে ঠান্ডা আবহাওয়ায় থাকা ভালো, কারণ এটি রক্তনালীগুলো সংকুচিত করতে সাহায্য করে।
হাত দিয়ে নাক চেপে ধরুন: রক্তপাত বন্ধ করতে দুই আঙুল দিয়ে নাকের হাড়ের নিচের অংশ চেপে ধরে ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
তীব্র রোদ বা গরম পরিবেশ এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত গরমে রক্তনালী প্রসারিত হয়, যা রক্তপাত বাড়াতে পারে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?
যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত—
- প্রতিদিন বা নিয়মিত সর্দির সাথে রক্ত আসা
- অনেক বেশি পরিমাণে রক্তপাত হওয়া
- রক্তের রঙ খুব গাঢ় বা ঘন জমাট বাঁধা থাকা
- নাকের সঙ্গে মুখ বা কানের ভেতর থেকেও রক্ত আসা
- অতিরিক্ত মাথাব্যথা বা ঝিমুনি অনুভব করা
- নাকের রক্তপাত ছাড়াও শরীরের অন্য কোথাও অনিয়ন্ত্রিত রক্তপাত দেখা দেওয়া
এই ধরনের লক্ষণ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে, তাই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
সর্দির সাথে রক্ত আসা প্রতিরোধের উপায়
শুষ্ক আবহাওয়ায় নাকের ভেতর আর্দ্র রাখুন – হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন বা স্যালাইন স্প্রে করুন।
ধুলাবালি এড়িয়ে চলুন – অ্যালার্জি থেকে দূরে থাকুন এবং মাস্ক ব্যবহার করুন।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন – শরীরের হাইড্রেশন ঠিক থাকলে নাকের ভেতরের টিস্যু শুকিয়ে যাবে না।
নাকের ভিতরে আঘাত লাগতে দেবেন না – শক্তভাবে নাক ঝাড়া বা আঙুল দেওয়া এড়িয়ে চলুন।
অ্যালার্জির জন্য চিকিৎসা নিন – যদি অ্যালার্জির কারণে সর্দি হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিহিস্টামিন বা নাসাল স্প্রে ব্যবহার করুন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন – উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
উপসংহার
সর্দির সাথে রক্ত দেখা সাধারণত ক্ষতিকর নয়, তবে নিয়মিত হলে বা গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে এটি অবহেলা করা উচিত নয়। নাকের ভেতরের রক্তনালীগুলো খুব সংবেদনশীল হওয়ায় সঠিক যত্ন না নিলে রক্তপাত হতে পারে। তাই নাকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা, শুষ্ক আবহাওয়ায় যত্ন নেওয়া, সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা এবং সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।