পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও এটি কখনো কখনো গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে। অনেকেই বিষয়টি লজ্জার কারণে এড়িয়ে যান, তবে সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
এই ব্লগে আমরা জানবো পায়খানার সাথে রক্ত আসার সম্ভাব্য কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা
পায়খানার সাথে রক্ত আসা কেন হয়?
এটি মূলত হজমতন্ত্র বা মলদ্বারের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। নিচে কিছু সাধারণ কারণ দেওয়া হলো—
১. পাইলস (হেমোরয়েডস)
✔ এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
✔ মলদ্বারের শিরা ফোলার ফলে রক্তপাত হতে পারে।
✔ বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে বেশি হয়।
২. অ্যানাল ফিসার (মলদ্বারে ছিঁড়ে যাওয়া)
✔ খুব শক্ত পায়খানা হলে মলদ্বারে ফাটল তৈরি হয়।
✔ এতে টয়লেট করার সময় ব্যথা হয় এবং রক্তপাত হয়।
৩. ডাইভারটিকুলাইটিস
✔ এটি অন্ত্রের ছোট থলির (diverticula) সংক্রমণ বা প্রদাহের কারণে হয়।
✔ সাধারণত বৃদ্ধ বয়সে এটি বেশি দেখা যায়।
৪. কোলাইটিস (Colitis)
✔ অন্ত্রে সংক্রমণ বা প্রদাহের কারণে রক্ত যেতে পারে।
✔ এটি ইনফেকশন, খাবারের অ্যালার্জি বা অটোইমিউন রোগের কারণে হতে পারে।
৫. পলিপ বা কোলন ক্যান্সার
✔ অন্ত্রে কোনো পলিপ (ছোট টিউমার) থাকলে ধীরে ধীরে রক্তপাত হতে পারে।
✔ কোলন ক্যান্সারের শুরুর লক্ষণ হতে পারে।
৬. পাকস্থলী বা অন্ত্রের আলসার
✔ পাকস্থলী বা অন্ত্রের ক্ষত (পেপটিক আলসার) থেকে রক্ত আসতে পারে।
✔ এটি হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া বা বেশি পরিমাণে ব্যথার ওষুধ (NSAIDs) খাওয়ার কারণে হতে পারে।
৭. সংক্রামক ডায়রিয়া বা আমাশয়
✔ ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের কারণে আমাশয় হলে পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে।
✔ সাধারণত ডায়রিয়া, জ্বর ও পেটে ব্যথা হয়।
পায়খানার সাথে রক্ত আসার লক্ষণ
❗ মলদ্বার থেকে উজ্জ্বল লাল বা গাঢ় লাল রক্তপাত
❗ টয়লেটের পর ব্যথা অনুভব করা
❗ কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার সাথে রক্তপাত
❗ পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি
❗ ওজন কমে যাওয়া বা দুর্বলতা অনুভব করা
👉 কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
✔ এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যদি রক্ত যেতে থাকে।
✔ যদি প্রচণ্ড পেট ব্যথা বা জ্বর হয়।
✔ যদি ওজন দ্রুত কমতে থাকে।
✔ যদি পায়খানার রং কালো বা গাঢ় লাল হয় (ভেতরের রক্তপাতের লক্ষণ)।
পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ার প্রতিকার
১. পাইলস বা অ্যানাল ফিসারের চিকিৎসা
✔ বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার খান (সবজি, ফল, শস্য)।
✔ প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন (৮-১০ গ্লাস)।
✔ কোষ্ঠকাঠিন্য কমানোর জন্য ইসবগুলের ভুষি বা ল্যাক্সাটিভ নিতে পারেন।
✔ সিটজ বাথ নিন (গরম পানিতে ১০-১৫ মিনিট বসুন)।
✔ ব্যথা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হেমোরয়েড ক্রিম বা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করুন।
২. ডাইভারটিকুলাইটিস ও কোলাইটিসের চিকিৎসা
✔ লো-ফাইবার ডায়েট মেনে চলুন।
✔ প্রচুর পানি পান করুন এবং ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন।
✔ প্রোবায়োটিক খাবার খান (দই, কেফির)।
✔ সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ নিতে হবে।
৩. পলিপ বা কোলন ক্যান্সারের প্রতিকার
✔ দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
✔ কোলনোস্কোপি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
✔ প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে সার্জারি বা কেমোথেরাপি করা হয়।
৪. আমাশয় বা সংক্রামক ডায়রিয়ার চিকিৎসা
✔ বেশি করে পানি ও তরল খাবার খান।
✔ সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিপ্যারাসিটিক ওষুধ খেতে হতে পারে।
✔ মসলাযুক্ত ও গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলুন।
৫. পাকস্থলী বা অন্ত্রের আলসারের চিকিৎসা
✔ হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক নিতে হবে।
✔ অ্যাসিডিটি কমানোর জন্য ওমেপ্রাজল বা রানিটিডিন জাতীয় ওষুধ নিতে পারেন।
✔ মশলাযুক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া প্রতিরোধের উপায়
✔ প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম করুন।
✔ বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার খান (সবজি, ফল, শস্য)।
✔ পর্যাপ্ত পানি পান করুন (৮-১০ গ্লাস)।
✔ কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রতিদিন টয়লেটে যাওয়ার অভ্যাস করুন।
✔ অতিরিক্ত মশলাযুক্ত ও ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন।
✔ অ্যালকোহল ও ধূমপান পরিহার করুন।
উপসংহার
পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া সাধারণ সমস্যা হলেও এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাইলস, অ্যানাল ফিসার বা সংক্রমণের কারণে হয়, যা সঠিক চিকিৎসা নিলে ভালো হয়ে যায়। তবে যদি দীর্ঘদিন রক্ত যেতে থাকে বা অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
👉 আপনার যদি এ সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করুন।