পায়ে রক্ত জমাট বাঁধা, বা মেডিক্যাল পরিভাষায় ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (DVT), একটি গুরুতর শারীরিক অবস্থা। এটি তখন ঘটে যখন কোনো ভেইনে (বিশেষ করে পায়ের গভীর শিরায়) রক্ত জমাট বেঁধে যায় এবং স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে। এই সমস্যা সময়মতো চিকিৎসা না করলে তা মারাত্মক পরিণতির দিকে যেতে পারে, যেমন ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধা (পালমোনারি এম্বোলিজম) বা অন্যান্য গুরুতর সমস্যা।
পায়ে রক্ত জমাট বাঁধার কারণ
১. দীর্ঘ সময় বসে থাকা: দীর্ঘ সময় ধরে একই জায়গায় বসে থাকলে পায়ের রক্তপ্রবাহ ধীর হয়ে যেতে পারে, যা রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে প্লেন বা দীর্ঘ যাত্রার সময় এমনটি ঘটতে পারে।
২. আঘাত বা শল্যচিকিৎসা: পায়ে আঘাত বা অস্ত্রোপচার হলে সেই স্থানে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।
৩. মোটা শরীর: অতিরিক্ত ওজন থাকলে রক্তের চাপ বেড়ে যায়, যার ফলে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ে।
৪. ধূমপান: ধূমপানের কারণে রক্তনালী সংকুচিত হয় এবং রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৫. কিছু নির্দিষ্ট রোগ বা অবস্থা: ক্যান্সার, হৃদরোগ, এবং কিছু জেনেটিক অবস্থাও রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়।
৬. হরমোনের ওষুধ গ্রহণ: জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল বা হরমোন থেরাপির কারণে রক্তে জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
পায়ে রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ
- পায়ে ব্যথা বা অস্বস্তি।
- পায়ে ফুলে যাওয়া।
- ত্বকে লালভাব বা উষ্ণতা।
- পায়ে ভারী অনুভব করা।
- হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে বা বুকের ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে, কারণ এটি ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ হতে পারে।
পায়ে রক্ত জমাট দূর করার উপায়
১. নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত হাঁটা, সাইক্লিং বা জগিং করলে রক্ত চলাচল ভালো থাকে। দীর্ঘ সময় বসে থাকলে প্রতি ঘন্টায় অন্তত একবার হাঁটাহাঁটি করার চেষ্টা করুন।
২. কমপ্রেশন স্টকিংস ব্যবহার করুন: ডাক্তারের পরামর্শে কমপ্রেশন স্টকিংস ব্যবহার করলে পায়ের রক্তপ্রবাহ নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমে।
৩. পানি পান করুন: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে রক্তের ঘনত্ব কম থাকে এবং রক্তপ্রবাহ সহজ হয়। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস করুন।
৪. ধূমপান ত্যাগ করুন: ধূমপান রক্তনালী সংকুচিত করে, যা রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ধূমপান পরিহার করা উচিত।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: অতিরিক্ত ওজন রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, তাই নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
৬. ডাক্তারের পরামর্শ নিন: যদি রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি থাকে বা কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজন হলে ডাক্তার এন্টিকোয়াগুলান্ট (রক্ত পাতলা করার ওষুধ) ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে পারেন।
৭. দীর্ঘ সময় বসে না থাকুন: যারা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করেন তাদের উচিত প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর হাঁটাহাঁটি করা এবং শরীরকে একটু নড়াচড়া করানো।
চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নিবেন?
- যদি পায়ে ব্যথা, ফুলে যাওয়া বা ত্বকে রঙের পরিবর্তন লক্ষ্য করেন।
- যদি হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বা বুকের ব্যথা অনুভব করেন, তবে দ্রুত হাসপাতালে যান।
- যদি আগে থেকেই কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, বা হৃদরোগ, তখন দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
পায়ে রক্ত জমাট বাঁধা একটি গুরুতর সমস্যা হলেও, সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিলে এটি প্রতিরোধ করা যায়। নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পানি পান, এবং সঠিক চিকিৎসা নেওয়ার মাধ্যমে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমানো সম্ভব। দীর্ঘ সময় বসে থাকা এড়িয়ে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রেখে, এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এই সমস্যাটি দূর করা যায়।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।