MM Kit (মেডিকেল এবরশন কিট) গর্ভপাতের জন্য ব্যবহৃত একটি ওষুধ, যা সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা হয়। তবে অনেক সময় দেখা যায়, MM Kit খাওয়ার পরও মাসিক শুরু হয় না, যা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। এটি স্বাভাবিক নাকি কোনো জটিলতার ইঙ্গিত, তা জানা জরুরি। এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো কেন MM Kit খাওয়ার পরও মাসিক নাও হতে পারে, কী করণীয়, এবং কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
MM Kit কীভাবে কাজ করে?
MM Kit মূলত দুটি ধাপে কাজ করে:
- মাইফিপ্রিস্টোন (Mifepristone): এটি প্রোজেস্টেরনের কার্যকারিতা বন্ধ করে গর্ভাশয়ে সংযুক্ত ভ্রূণের বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়।
- মিসোপ্রোস্টল (Misoprostol): এটি জরায়ুর সংকোচন ঘটিয়ে গর্ভপাত সম্পন্ন করে। সাধারণত, MM Kit গ্রহণের ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রক্তপাত শুরু হয়, যা মাসিকের মতোই অনুভূত হয়।
MM Kit খাওয়ার পর মাসিক না হওয়ার সম্ভাব্য কারণ
১. গর্ভপাত সম্পূর্ণ না হওয়া
অনেক সময় এমএম কিট ব্যবহারের পরেও ভ্রূণের কিছু অংশ জরায়ুতে থেকে যেতে পারে, যা মাসিকের বিলম্বের কারণ হতে পারে।
২. ওষুধের অপ্রতুল প্রতিক্রিয়া
MM Kit প্রত্যেকের শরীরে একইভাবে কাজ নাও করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ সম্পূর্ণ কার্যকর না হওয়ায় মাসিক বন্ধ থাকতে পারে।
৩. অতিরিক্ত স্ট্রেস ও মানসিক চাপ
গর্ভপাত সংক্রান্ত উদ্বেগ, শারীরিক ক্লান্তি ও মানসিক চাপ মাসিকের স্বাভাবিক চক্র ব্যাহত করতে পারে।
৪. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
MM Kit শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটায়, যা মাসিক চক্রের অনিয়মের কারণ হতে পারে।
৫. গর্ভাবস্থার স্থায়িত্ব
গর্ভধারণের সময়কাল অনুযায়ী MM Kit কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করে। গর্ভধারণ ৭ সপ্তাহের বেশি হলে ওষুধটি সম্পূর্ণ কাজ নাও করতে পারে।
৬. সংক্রমণ বা স্বাস্থ্যগত জটিলতা
কিছু ক্ষেত্রে জরায়ু সংক্রমণ (ইনফেকশন) মাসিকের বিলম্ব ঘটাতে পারে। পেটে ব্যথা, জ্বর বা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সতর্কতা:
- এমএম কিট সেবন সর্বদা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এবং তার তত্ত্বাবধানে করা উচিত।
- ওষুধ সেবনের পর অতিরিক্ত রক্তপাত, তীব্র পেট ব্যথা, জ্বর বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
MM Kit খাওয়ার পর মাসিক না হলে করণীয়
১. প্রসব পরীক্ষা (Pregnancy Test) করুন
মাসিক শুরু না হলে গর্ভধারণ পরীক্ষা করুন। MM Kit যদি সম্পূর্ণ কাজ না করে, তবে গর্ভাবস্থা টিকে থাকতে পারে।
২. আল্ট্রাসনোগ্রাফি করান
গর্ভপাত সম্পূর্ণ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে আল্ট্রাসনোগ্রাফি গুরুত্বপূর্ণ। এতে জরায়ুর ভেতরের অবস্থা বোঝা যাবে।
৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন ও স্ট্রেস কমান
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। ধ্যান ও হালকা ব্যায়াম স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৪. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
মাসিক শুরু না হলে গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তিনি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও ওষুধের পরামর্শ দিতে পারবেন।
৫. পরবর্তী বার জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সচেতন থাকুন
MM Kit ব্যবহারের পরও অনিয়ন্ত্রিত যৌনসম্পর্কে গর্ভধারণের ঝুঁকি থাকে। তাই কনডম বা অন্যান্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি।
কখন দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
- MM Kit খাওয়ার পর ৭ দিনের মধ্যে রক্তপাত না হলে
- অতিরিক্ত তীব্র পেটে ব্যথা অনুভূত হলে
- দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বের হলে
- দীর্ঘস্থায়ী বমি বা মাথা ঘোরা থাকলে
উপসংহার
MM Kit খাওয়ার পর মাসিক না হলে দুশ্চিন্তায় পড়ার আগে সম্ভাব্য কারণ ও করণীয় সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ। যদি রক্তপাত না হয়, তাহলে প্রসব পরীক্ষা ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানো উচিত। অতিরিক্ত স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিরাপদ প্রজনন স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সবসময় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।