পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালাপোড়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেকেই অনুভব করে থাকেন। এটি সাধারণত খাদ্যাভ্যাস, হজমের সমস্যা, সংক্রমণ বা পাইলসের কারণে হয়ে থাকে। কখনো কখনো এটি বড় কোনো অন্তর্নিহিত রোগের লক্ষণও হতে পারে। তাই এটি অবহেলা না করে কারণগুলো জানা এবং প্রতিকার নেওয়া জরুরি।
মলদ্বারে জ্বালার সাধারণ কারণ
পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালা হওয়ার বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে—
১. মসলাযুক্ত বা ঝাল খাবার খাওয়া
ঝাল বা মসলাযুক্ত খাবার হজমের পর মলদ্বারে জ্বালার সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যদি কারও হজমজনিত সমস্যা থাকে।
2. পাইলস বা অর্শরোগ
পাইলস হলে মলদ্বারে ব্যথা ও জ্বালা অনুভূত হয়। এটি মূলত মলদ্বারের শিরাগুলোর স্ফীত হওয়ার কারণে ঘটে।
৩. এনাল ফিসার (মলদ্বারের ক্ষত)
কঠিন বা শুষ্ক মলত্যাগের কারণে মলদ্বারের টিস্যুতে ছোট ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, যা জ্বালা ও ব্যথার কারণ হয়।
৪. ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা
প্রস্রাবের মতো পাতলা পায়খানা হলে মলদ্বারের চারপাশের চামড়া সংবেদনশীল হয়ে পড়ে এবং জ্বালাপোড়া অনুভব হয়।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য
কঠিন মলত্যাগের কারণে মলদ্বারে চাপ পড়ে এবং ফাটল সৃষ্টি হয়, যা জ্বালার কারণ হতে পারে।
৬. অ্যালার্জি ও সংক্রমণ
বেশ কিছু ফাঙ্গাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ মলদ্বারের জ্বালার কারণ হতে পারে। এছাড়া অ্যালার্জি বা স্কিন ইরিটেশন থেকেও এটি হতে পারে।
৭. হেমোরয়েড (অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক)
মলদ্বারের রক্তনালী ফুলে গেলে এটি ব্যথা ও জ্বালার সৃষ্টি করতে পারে।
৮. ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব
পায়খানার পর সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে মলদ্বারের আশেপাশে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে, যা জ্বালা সৃষ্টি করে।
পায়খানার পর মলদ্বারের জ্বালা দূর করার উপায়
১. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন
- ঝাল, মসলাযুক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- বেশি পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খান, যেমন শাকসবজি, ফলমূল ও দানাশস্য।
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন (৮-১০ গ্লাস)।
২. মলদ্বার পরিষ্কার রাখুন
- পায়খানার পর মলদ্বার নরম টিস্যু বা গরম পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করুন।
- সুগন্ধিযুক্ত সাবান বা রাসায়নিকযুক্ত ওয়াইপ ব্যবহার করবেন না।
৩. কোল্ড কম্প্রেস বা ঠান্ডা পানির সেঁক দিন
- মলদ্বারে ঠান্ডা পানির সেঁক দিলে জ্বালাপোড়া কমে।
৪. অ্যালোভেরা বা নারকেল তেল ব্যবহার করুন
- প্রাকৃতিক অ্যালোভেরা জেল বা নারকেল তেল ব্যবহার করলে জ্বালা ও প্রদাহ কমতে পারে।
৫. টয়লেটে বেশি সময় বসে থাকবেন না
- দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকলে মলদ্বারের শিরাগুলোর ওপর চাপ পড়ে, যা জ্বালার কারণ হতে পারে।
৬. ডাক্তারের পরামর্শ নিন
যদি সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ব্যথা ও রক্তপাত হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন?
যদি—
- মলদ্বারে দীর্ঘস্থায়ী জ্বালাপোড়া থাকে
- মলের সঙ্গে রক্ত বের হয়
- অতিরিক্ত ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করেন
- ওষুধ বা প্রাকৃতিক চিকিৎসায় উপশম না হয়
তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
উপসংহার
পায়খানার পর মলদ্বারে জ্বালাপোড়ার সমস্যা বেশ বিরক্তিকর হলেও কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ ও নিরাময় করা সম্ভব। তবে সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হলে অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।