ঘুমের মধ্যে শরীর কাঁপা: কারণ ও প্রতিকার

ঘুমের মধ্যে শরীর কাঁপা বা “নাইট টুইচেস” একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা হতে পারে। এটি অনেক সময় আমাদের ঘুমের মধ্যে ব্যাঘাত ঘটায় এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এর কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানা আমাদের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি ও সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ঘুমের মধ্যে শরীর কাঁপার কারণ

১. হিপনিক জার্কস: হিপনিক জার্কস বা হিপনিক টুইচেস হল ঘুমের প্রাথমিক পর্যায়ে ঘটে যাওয়া আকস্মিক মাংশপেশীর সংকোচন। এটি একটি সাধারণ ঘটনা এবং সাধারণত বিপদজনক নয়। মানসিক চাপ, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ, শারীরিক ক্লান্তি, এবং অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস এর কারণ হতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

২. রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোম (RLS): রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোম একটি স্নায়বিক ব্যাধি যেখানে পায়ের মধ্যে অস্বস্তিকর অনুভূতি হয় এবং প্রায়ই পা নাড়ানোর প্রয়োজন হয়। এটি ঘুমের সময় শরীর কাঁপার কারণ হতে পারে।

৩. ঘুমের ব্যাঘাত: ঘুমের ব্যাঘাত যেমন নিদ্রাহীনতা বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা (স্লিপ অ্যাপনিয়া) ঘুমের মধ্যে শরীর কাঁপানোর কারণ হতে পারে।

৪. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: উচ্চ মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ ঘুমের গুণমান কমিয়ে দেয় এবং শরীর কাঁপানোর কারণ হতে পারে।

৫. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ঘুমের মধ্যে শরীর কাঁপতে পারে।

ঘুমের মধ্যে শরীর কাঁপার প্রতিকার

১. স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং জেগে ওঠা, ঘুমের আগে ভারী খাবার ও ক্যাফেইন এড়ানো, আরামদায়ক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা উচিত।

  1. মানসিক চাপ কমানো: মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা উচিত। মানসিক প্রশান্তি ঘুমের মান বাড়াতে সাহায্য করে।
  2. শারীরিক ব্যায়াম: নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়াম পেশীগুলিকে শিথিল করতে এবং ঘুমের গুণমান উন্নত করতে সাহায্য করে। তবে, ঘুমানোর আগে ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।
  3. রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোমের চিকিৎসা: যদি আপনি RLS-এর লক্ষণগুলি অনুভব করেন, তাহলে একজন ডাক্তার বা স্নায়ুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসা ও পরামর্শ RLS-এর উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।
  4. ওষুধের পর্যালোচনা: যদি কোনো ওষুধের কারণে শরীর কাঁপে, তাহলে ডাক্তারদের সাথে আলোচনা করে ওষুধ পরিবর্তন বা ডোজ সমন্বয় করা যেতে পারে।
  5. শয়নকক্ষের পরিবেশ উন্নত করা: শয়নকক্ষকে আরামদায়ক ও শান্তিপূর্ণ রাখুন। ঘুমানোর সময় পুরোপুরি অন্ধকার এবং নিরবতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন।

উপসংহার

ঘুমের মধ্যে শরীর কাঁপার অভিজ্ঞতা ভীতিকর ও অস্বস্তিকর হলেও, এর কারণগুলো বুঝে এবং সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা, মানসিক চাপ কমানো, শারীরিক ব্যায়াম করা, এবং শয়নকক্ষের পরিবেশ উন্নত করা—এই উপায়গুলো আপনার শরীর কাঁপার সমস্যা সমাধানে সহায়ক হতে পারে। সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে আপনি নির্ভয়ে ও প্রশান্তির ঘুম উপভোগ করতে পারবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top