অনেকেই অপরিচিত পরিবেশে প্রবেশ করলে নার্ভাস বা উদ্বিগ্ন বোধ করেন। এটি সাধারণ একটি অভিজ্ঞতা, কিন্তু কখনও কখনও এই অনুভূতিগুলো মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে সমস্যা তৈরি করতে পারে। অপরিচিত পরিবেশে নার্ভাস হওয়ার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে, এবং এই সমস্যার সমাধানের জন্য কিছু কৌশল ও উপায় আছে।
কেন অপরিচিত পরিবেশে নার্ভাস হওয়া স্বাভাবিক?
মানুষের মন-মানসিকতা এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে আমরা পরিচিত পরিবেশে বেশি স্বস্তি অনুভব করি। অপরিচিত পরিবেশ আমাদের সামনে নতুন এবং অজানা চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে। আমাদের মন তখন অজানা পরিস্থিতিতে কী ঘটতে পারে, তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। কয়েকটি সাধারণ কারণ যা অপরিচিত পরিবেশে নার্ভাসনেস সৃষ্টি করে:
- অভিজ্ঞতার অভাব: নতুন পরিবেশ বা পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় অস্বস্তি তৈরি হয়।
- অপরিচিত লোকজন: নতুন মানুষের সাথে মিশতে বা যোগাযোগ করতে অনেকেই সমস্যায় পড়েন। অন্যরা কী ভাববে তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়।
- পারফেকশনিজম: কিছু মানুষ নতুন পরিস্থিতিতে পারফেক্ট হওয়ার চাপ অনুভব করেন, যা তাদের নার্ভাস করে তোলে।
- সামাজিক অস্বস্তি: সোশ্যাল অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের মতো মানসিক সমস্যাও অপরিচিত পরিবেশে নার্ভাসনেসের মূল কারণ হতে পারে।
নার্ভাসনেসের লক্ষণগুলো কী কী?
অপরিচিত পরিবেশে নার্ভাস হওয়ার ফলে শারীরিক ও মানসিক কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন:
- হাত বা শরীর কাঁপা
- বুক ধড়ফড় করা
- ঘাম হওয়া
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- মাথা ঘোরা বা ক্লান্তি অনুভব করা
- কথা বলতে অসুবিধা
এগুলো ছাড়াও, মনের মধ্যে নেতিবাচক চিন্তা তৈরি হয়, যেমন “সবাই আমাকে বিচার করবে,” “আমি সফল হতে পারব না,” ইত্যাদি।
অপরিচিত পরিবেশে নার্ভাসনেস কমানোর উপায়
- শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ: যখন নার্ভাসনেস শুরু হয়, তখন ধীরে ধীরে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। এটি মনকে শান্ত করে এবং শরীরের রিল্যাক্স হতে সাহায্য করে।
- ইতিবাচক মনোভাব: নতুন পরিস্থিতি সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তাকে প্রতিহত করে ইতিবাচক চিন্তা করা জরুরি। আপনি যদি মনে করেন যে এই পরিবেশে আপনি সফল হবেন, তাহলে নার্ভাসনেস কমে যাবে।
- পরিচিত কিছু রাখুন: অপরিচিত পরিবেশে আপনার পরিচিত কিছু নিয়ে যান, যা আপনাকে আরাম দেবে—যেমন একটি প্রিয় বই, গান, বা ছবি।
- প্র্যাকটিস: নার্ভাসনেস কমানোর জন্য নতুন পরিস্থিতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন। কিছু সময় নিজেকে অপরিচিত পরিবেশে রাখার চেষ্টা করুন, যেন সেগুলির সাথে অভ্যস্ত হতে পারেন।
- সোশ্যাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট: নিজের সামাজিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কর্মশালা বা সেশনে যোগদান করতে পারেন। এতে করে নতুন মানুষের সাথে যোগাযোগের অভ্যাস গড়ে উঠবে এবং সোশ্যাল অ্যাংজাইটিও কমবে।
- অতিরিক্ত চিন্তা এড়িয়ে চলুন: নতুন পরিস্থিতির আগে খুব বেশি চিন্তা করবেন না। অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফলের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন হওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কবে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া উচিত?
যদি আপনার নার্ভাসনেস খুব বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পায় এবং তা আপনার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করা জরুরি। এটি হয়তো সোশ্যাল অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার বা অন্য কোনো মানসিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) এবং অন্যান্য থেরাপি এই ধরনের সমস্যা সমাধানে কার্যকর হতে পারে।
অপরিচিত পরিবেশে নার্ভাস হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু এটি অস্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ালে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা, ইতিবাচক চিন্তা করা, এবং প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ধৈর্য্য ও মনোবলের প্রয়োজন।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.