অটিজম এবং খিঁচুনি (Spasm) উভয়ই শিশুদের মানসিক এবং শারীরিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক সময় অটিজম আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে খিঁচুনি বা স্পাজম দেখা দিতে পারে, যা শিশুদের স্বাভাবিক উন্নতির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। অটিজমের পাশাপাশি যদি খিঁচুনি শুরু হয়, তাহলে এটি বিশেষভাবে সতর্কতার সাথে পরিচালনা করা জরুরি।
খিঁচুনি এবং অটিজমের সম্পর্ক
অটিজম আক্রান্ত অনেক শিশুদের ক্ষেত্রে খিঁচুনি দেখা যায়। বিশেষ করে যাদের মধ্যে নিউরোডেভেলপমেন্টাল সমস্যার লক্ষণ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে খিঁচুনি বা এপিলেপসির ঝুঁকি বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, অটিজম আক্রান্ত প্রায় ২০-৩০% শিশুদের খিঁচুনি সমস্যা হতে পারে। এটি শিশুদের মস্তিষ্কের উন্নতিতে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় জটিলতা তৈরি করে।
খিঁচুনির লক্ষণ
১. আকস্মিক দেহের কোনো অংশে সঞ্চালন সমস্যা। ২. অস্বাভাবিক পেশীর সংকোচন বা কাঁপুনি। ৩. বারবার দৃষ্টিশক্তির অস্পষ্টতা। ৪. মুখমন্ডল বা শরীরের কোনো অংশের অবাঞ্ছিত নড়াচড়া। ৫. আচরণের অস্বাভাবিক পরিবর্তন, যেমন হঠাৎ চুপ হয়ে যাওয়া, দৃষ্টিতে ফাঁকা ভাব।
অটিজম উন্নতি না হলে কি করবেন?
১. নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: অটিজম আক্রান্ত শিশুরা অনেক সময় উন্নতিতে ধীরগতিতে থাকে। তাদের জন্য ধৈর্যশীল হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিশুর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলো মনোযোগ সহকারে লক্ষ করুন।
২. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: অটিজমের পাশাপাশি খিঁচুনির লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে নিউরোলজিস্ট বা চাইল্ড স্পেশালিস্টের সাথে পরামর্শ করুন। তারা সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন।
খিঁচুনি ও অটিজম চিকিৎসা
১. এন্টি-এপিলেপটিক ঔষধ: খিঁচুনি রোধের জন্য এন্টি-এপিলেপটিক ওষুধ ব্যবহৃত হতে পারে। এই ওষুধগুলো খিঁচুনির আক্রমণ কমাতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা উন্নত করতে পারে।
২. ব্যবহারিক থেরাপি: অটিজম উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় থেরাপিগুলোর মধ্যে রয়েছে স্পিচ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, এবং বিহেভিয়ার থেরাপি। এগুলো শিশুদের সামগ্রিক বিকাশে সাহায্য করতে পারে।
৩. নিউরোফিডব্যাক থেরাপি: এটি একটি বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি যা মস্তিষ্কের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিউরোফিডব্যাক থেরাপি অটিজম এবং খিঁচুনির উভয় ক্ষেত্রেই কার্যকর হতে পারে।
৪. ডায়েট ম্যানেজমেন্ট: শিশুর খাদ্যাভ্যাসও অটিজম এবং খিঁচুনির চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাদ্য এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের সঠিক মাত্রা শিশুর মস্তিষ্কের কার্যকলাপ উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে।
৫. ব্যায়াম এবং শারীরিক কার্যক্রম: শিশুর শারীরিক সক্রিয়তা বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, যোগব্যায়াম ও অন্যান্য শরীরচর্চা খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী হতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণে ধৈর্যশীল হোন
অটিজম এবং খিঁচুনির চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে, তাই আপনাকে ধৈর্যশীল হতে হবে। সঠিক চিকিৎসা এবং থেরাপির মাধ্যমে অটিজম আক্রান্ত শিশুর উন্নতি সম্ভব। শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য নিয়মিত চিকিৎসক এবং থেরাপিস্টের পরামর্শ নিন এবং তাদের নির্দেশনা মেনে চলুন।
উপসংহার
অটিজম এবং খিঁচুনি উভয়ই শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশের পথে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, তবে সঠিক চিকিৎসা এবং থেরাপির মাধ্যমে এই সমস্যাগুলোকে মোকাবিলা করা সম্ভব। যদি আপনার শিশুর অটিজম উন্নতি না হয় এবং খিঁচুনির লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।