অটিজম? নাকি ADHD? নাকি দুটোই? | Autism or ADHD Treatment

প্রায়ই বাচ্চাদের মধ্যে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (Autism Spectrum Disorder – ASD) এবং অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) এর লক্ষণ মিলে যেতে পারে। এ কারণে অনেক অভিভাবক, শিক্ষক, এবং চিকিৎসকও দ্বিধায় পড়েন—শিশুরা কি অটিজমে আক্রান্ত নাকি ADHD রয়েছে? এই ব্লগে আমরা অটিজম ও ADHD এর লক্ষণ এবং পার্থক্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো এবং কিভাবে এই দুই অবস্থার সঠিক চিকিৎসা করা যায় তা জানাবো।

অটিজম কি?

অটিজম হল একধরনের স্নায়বিক বিকাশজনিত সমস্যা যা মূলত সামাজিক যোগাযোগ, ভাষার বিকাশ এবং পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণে বাধা সৃষ্টি করে। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা অন্যের সাথে যোগাযোগে সমস্যা অনুভব করে এবং সাধারণত নিজেদের আলাদা করে রাখতে চায়।

অটিজমের লক্ষণ:

  1. সামাজিক যোগাযোগের সমস্যা: সামাজিক যোগাযোগ এবং অন্যের আবেগ বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা।
  2. ভাষাগত সমস্যা: কথা বলার বিকাশ ধীরগতিতে হয় বা সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত থাকতে পারে।
  3. পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ: নির্দিষ্ট ক্রিয়াকলাপ বা অভ্যাসে লিপ্ত থাকা এবং তা বারবার করা।
  4. সংবেদনশীলতার সমস্যা: কিছু অটিজম আক্রান্ত শিশুরা আলো, শব্দ বা স্পর্শের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা দেখায়।

raju akon youtube channel subscribtion

ADHD কি?

ADHD এমন একটি মানসিক অবস্থা যা শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখতে এবং হাইপারঅ্যাক্টিভ বা আবেগপ্রবণ আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা তৈরি করে। এটি সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালেই শুরু হয় এবং প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

ADHD এর লক্ষণ:

  1. মনোযোগের অভাব: শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা হয়, বিশেষ করে স্কুল বা পড়াশোনার কাজে।
  2. হাইপারঅ্যাক্টিভিটি: শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত কার্যকলাপ, যেমন- অনেক দৌড়াদৌড়ি করা বা অতিরিক্ত কথা বলা।
  3. আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা: শিশুরা হঠাৎ করেই অনেক কিছু করতে শুরু করে এবং ভাবনা বা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

অটিজম ও ADHD এর পার্থক্য কী?

অটিজম ও ADHD এর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে, তবে কিছু শিশুর মধ্যে দুই অবস্থার লক্ষণ একসঙ্গে দেখা যায়। পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ:

  1. সামাজিক যোগাযোগ: ADHD আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত সামাজিক হতে চায়, কিন্তু মনোযোগ ধরে রাখতে না পারার কারণে সমস্যা হয়। অন্যদিকে, অটিজম আক্রান্ত শিশুরা অন্যদের সাথে যোগাযোগে আগ্রহ দেখায় না।
  2. ভাষাগত দক্ষতা: ADHD শিশুরা সাধারণত স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে, কিন্তু অটিজম আক্রান্ত শিশুরা কথা বলায় সমস্যার সম্মুখীন হয় বা তারা ভাষাগত যোগাযোগে আগ্রহী থাকে না।
  3. সংবেদনশীলতা: অটিজম আক্রান্ত শিশুরা সংবেদনশীল তথ্যকে বেশি গুরুত্ব দেয়, যেমন: আলো, শব্দ, বা স্পর্শের প্রতি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। ADHD শিশুরা সাধারণত এই সমস্যার শিকার হয় না।

দুটোই হতে পারে?

হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে শিশুরা ADHDঅটিজম উভয়ের লক্ষণ প্রদর্শন করতে পারে। এমন শিশুদের ক্ষেত্রে মানসিক এবং আচরণগত সমস্যা বেশি জটিল হতে পারে, এবং চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে যেতে পারে। সঠিক নির্ণয়ের জন্য একটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

Autism এবং ADHD এর চিকিৎসা

দুটি অবস্থারই সঠিক এবং পৃথক পৃথক চিকিৎসা আছে, যা শিশুদের মানসিক এবং সামাজিক বিকাশকে উন্নত করতে সাহায্য করে। চিকিৎসার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:

  1. স্পেশাল এডুকেশন ও থেরাপি: বিশেষ শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা যায় এবং তাদের সমস্যা সমাধান করা যায়।
  2. বিহেভিয়ার থেরাপি: ADHD এবং অটিজম উভয়ের ক্ষেত্রেই আচরণগত থেরাপি কার্যকর। এটি শিশুদের অপ্রয়োজনীয় আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
  3. ওষুধ: ADHD এর চিকিৎসায় ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যা মনোযোগ ধরে রাখতে এবং হাইপারঅ্যাক্টিভিটি কমাতে সাহায্য করে। অটিজমের ক্ষেত্রেও কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে সাধারণত থেরাপির ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়।
  4. অকুপেশনাল থেরাপি: এটি শিশুর দৈনন্দিন কাজ করার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা অটিজম এবং ADHD উভয়ের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার

অটিজম এবং ADHD দুটি পৃথক মানসিক সমস্যা হলেও অনেক ক্ষেত্রে এগুলো একসঙ্গে দেখা যেতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক নির্ণয় এবং থেরাপি বা চিকিৎসা এই দুই অবস্থার মোকাবেলায় সহায়ক হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top