শীতকাল বা মৌসুমি সংক্রমণের সময় গলা ব্যথা খুবই সাধারণ সমস্যা। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি বা ধূলাবালির কারণে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। গলা ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে এলোপ্যাথিক ঔষধ অন্যতম কার্যকর সমাধান। কিন্তু কোন ওষুধ কতটা নিরাপদ এবং কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, তা জানা জরুরি। আজকের ব্লগে আমরা গলা ব্যথার জনপ্রিয় এলোপ্যাথিক ঔষধ, তাদের কার্যকারিতা ও ব্যবহারবিধি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
গলা ব্যথার কারণ
গলা ব্যথার মূল কারণগুলো হলো:
✔ ভাইরাস সংক্রমণ – সাধারণ সর্দি, ফ্লু বা কোভিড-১৯।
✔ ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ – স্ট্রেপ থ্রোট (Strep throat) বা টনসিলাইটিস।
✔ অ্যালার্জি – ধুলাবালি, পরাগ রেণু বা ধোঁয়া।
✔ অ্যাসিড রিফ্লাক্স (GERD) – পাকস্থলীর অ্যাসিড গলায় উঠে আসলে ব্যথা হয়।
✔ শুষ্ক পরিবেশ – কম আর্দ্রতা গলা শুকিয়ে ফেলতে পারে।
গলা ব্যথার কারণ বুঝে সঠিক এলোপ্যাথিক ওষুধ বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
গলা ব্যথার জনপ্রিয় এলোপ্যাথিক ঔষধ ও তাদের কার্যকারিতা
১. ব্যথানাশক ওষুধ (Pain Relievers)
গলা ব্যথার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষ দ্রুত আরামের জন্য ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করেন।
🔹 প্যারাসিটামল (Paracetamol) – হালকা থেকে মাঝারি গলা ব্যথা ও জ্বর কমাতে ব্যবহৃত হয়।
ডোজ: ৫০০-১০০০ মি.গ্রা. প্রতিদিন ৩-৪ বার (ডাক্তারের পরামর্শে)।
🔹 আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) – প্রদাহজনিত গলা ব্যথার জন্য কার্যকর।
ডোজ: ২০০-৪০০ মি.গ্রা. প্রতিদিন ৩ বার (খাবারের পরে নেওয়া ভালো)।
🔹 এসপিরিন (Aspirin) – গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, তবে ১২ বছরের কম বয়সীদের জন্য নিরাপদ নয়।
২. অ্যান্টিবায়োটিক (Antibiotics) – ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্য
যদি গলা ব্যথা স্ট্রেপ থ্রোট বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে হয়, তবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে।
✔ অ্যামোক্সিসিলিন (Amoxicillin) – স্ট্রেপ থ্রোটের জন্য প্রথম সারির অ্যান্টিবায়োটিক।
✔ অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) – যারা পেনিসিলিন-সংশ্লিষ্ট ওষুধ খেতে পারেন না, তাদের জন্য বিকল্প।
✔ সেফুরক্সিম (Cefuroxime) – গুরুতর সংক্রমণে ব্যবহৃত হয়।
সতর্কতা:
- অ্যান্টিবায়োটিক শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শে গ্রহণ করুন।
- কোর্স সম্পূর্ণ না করলে সংক্রমণ ফিরে আসতে পারে।
৩. অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধ (Antihistamines) – অ্যালার্জিজনিত গলা ব্যথার জন্য
✔ সেটিরিজিন (Cetirizine) – অ্যালার্জি ও ঠান্ডাজনিত গলা ব্যথার জন্য কার্যকর।
✔ ফেক্সোফেনাডিন (Fexofenadine) – দীর্ঘস্থায়ী অ্যালার্জির জন্য ব্যবহৃত হয়।
৪. গলা ব্যথার স্প্রে ও লজেন্স
✔ বেনজিডামিন স্প্রে (Benzydamine spray) – গলা ব্যথা দ্রুত কমাতে কার্যকর।
✔ ক্লোরহেক্সিডিন (Chlorhexidine) গার্গল – ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে সহায়ক।
✔ স্ট্রেপসিলস লজেন্স (Strepsils Lozenges) – গলার ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
৫. অ্যান্টাসিড (Antacids) – অ্যাসিড রিফ্লাক্সজনিত গলা ব্যথার জন্য
✔ ওমিপ্রাজল (Omeprazole) – অ্যাসিড রিফ্লাক্স কমাতে ব্যবহৃত হয়।
✔ রেনিটিডিন (Ranitidine) – গলা ব্যথার অ্যাসিডজনিত কারণ নিরসনে কার্যকর।
গলা ব্যথার এলোপ্যাথিক চিকিৎসার সময় যে সতর্কতা মেনে চলা উচিত
✅ অ্যান্টিবায়োটিক সঠিক নিয়মে ও সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করুন।
✅ আইবুপ্রোফেন বা এসপিরিন খাওয়ার আগে খাওয়া দাওয়া করুন, যেন পাকস্থলীর সমস্যা না হয়।
✅ গলা ব্যথা ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হলে ডাক্তার দেখান।
✅ ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য অ্যাসপিরিন এড়িয়ে চলুন।
গলা ব্যথা কমানোর প্রাকৃতিক উপায় (ঔষধের পাশাপাশি)
✔ গরম লবণ পানি দিয়ে গার্গল করুন।
✔ আদা-লেবুর গরম চা পান করুন।
✔ পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পানি পান করুন।
উপসংহার
গলা ব্যথা সাধারণত সাময়িক সমস্যা হলেও, সঠিক চিকিৎসা না করলে এটি বড় জটিলতায় রূপ নিতে পারে। তাই উপযুক্ত এলোপ্যাথিক ওষুধ নির্বাচন ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তবে হালকা গলা ব্যথার জন্য ঘরোয়া সমাধানও কার্যকর হতে পারে।