বর্তমান সমাজে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ধারণা অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে, এই স্বাধীনতার নামে অনেক সময় নৈতিকতার সীমা অতিক্রম করা হয়, যার মধ্যে পরকীয়া অন্যতম। পরকীয়া সম্পর্ক একটি জটিল এবং সংবেদনশীল বিষয়, যা শুধুমাত্র ব্যক্তির নিজের জীবনে নয়, তার পরিবার, সমাজ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে।
পরকীয়া: কী এবং কেন?
পরকীয়া বলতে সাধারণত বিবাহিত একজন ব্যক্তি তার বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে অন্য কারো সাথে রোমান্টিক বা যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলাকে বোঝানো হয়। এটি সম্পর্কের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা এবং অসততার পরিচায়ক। পরকীয়া সম্পর্কের কারণগুলো বিভিন্ন হতে পারে:
- মানসিক অসন্তুষ্টি: বিবাহিত সম্পর্কের মধ্যে মানসিক বা শারীরিক অসন্তুষ্টি থাকলে ব্যক্তি পরকীয়ার দিকে আকৃষ্ট হতে পারে।
- অন্যের প্রতি আকর্ষণ: কারো প্রতি আকর্ষণ বা প্রেমে পড়া, যা অনেক সময় সম্পর্কের বাইরে গিয়ে ঘটে।
- এডভেঞ্চারের অনুভূতি: সম্পর্কের বাইরে গিয়ে কিছু নতুন ও উত্তেজনাপূর্ণ কিছু খোঁজার প্রবণতা।
- অসততা ও নৈতিক দুর্বলতা: ব্যক্তিগত নৈতিকতা ও সততার অভাব পরকীয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।
পরকীয়ার সামাজিক ও মানসিক প্রভাব
পরকীয়া সম্পর্ক কেবল ব্যক্তির নিজের জীবনকে নয়, তার আশেপাশের মানুষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর কিছু প্রধান প্রভাব হলো:
- বিশ্বাসের ভাঙন: পরকীয়া সম্পর্ক এক সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাসের ভাঙন সৃষ্টি করে, যা পুনর্গঠন করা খুবই কঠিন।
- পরিবারের উপর প্রভাব: পরকীয়ার কারণে দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে, যা সন্তান এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- মানসিক চাপ ও হতাশা: পরকীয়ার ফলশ্রুতিতে মানসিক চাপ, হতাশা, এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যার উদ্ভব হতে পারে।
- সামাজিক পরিণতি: সমাজে পরকীয়াকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়, যা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নতা এবং অপমানের কারণ হতে পারে।
পরকীয়া প্রতিরোধে সিবিটি থেরাপির টেকনিক
সিবিটি থেরাপি (কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি) এমন কিছু টেকনিক প্রয়োগ করতে পারে যা পরকীয়া থেকে দূরে থাকতে সহায়ক হতে পারে। এখানে কয়েকটি কার্যকর সিবিটি টেকনিক উল্লেখ করা হলো:
- কগনিটিভ রিস্ট্রাকচারিং:
- পরকীয়ার প্রতি আকর্ষণ বা এটি করার প্রবণতা থাকলে, প্রথমে নিজের চিন্তাগুলো চিহ্নিত করুন। উদাহরণস্বরূপ, “আমার বর্তমান সম্পর্ক আমাকে সুখী করছে না” এই চিন্তাটি পরিবর্তন করে “আমার সম্পর্ক উন্নত করার জন্য আমি কী করতে পারি?” এই চিন্তা করুন।
- সেলফ-মনিটরিং:
- নিজের আচরণ এবং চিন্তাভাবনা পর্যবেক্ষণ করুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, “আমি কেন এই সম্পর্কের বাইরে আকৃষ্ট হচ্ছি?” এবং “এটি আমার এবং আমার সম্পর্কের জন্য কী ক্ষতি করতে পারে?”
- আবেগ নিয়ন্ত্রণ:
- রিলাক্সেশন টেকনিক যেমন ধ্যান এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম অভ্যাস করুন, যা আপনাকে আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে এবং নিজেকে শান্ত রাখতে সহায়ক হবে।
- আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ উন্নত করা:
- সঙ্গীর সাথে খোলামেলা এবং সৎভাবে কথা বলুন। পরকীয়ার পরিবর্তে সম্পর্কের মধ্যে সমস্যা থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করুন।
- সম্মান ও দায়িত্ববোধ:
- নিজের এবং সঙ্গীর প্রতি সম্মান বজায় রাখুন। একটি সম্পর্কের প্রতি দায়িত্বশীল থাকুন এবং পরকীয়ার আগে এর পরিণতি সম্পর্কে ভাবুন।
উপসংহার
ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলার ফলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। পরকীয়া শুধু যে সম্পর্ক ভাঙনের কারণ হয় তাই নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। সঠিক সময়ে সচেতন হওয়া এবং সিবিটি থেরাপির টেকনিক প্রয়োগ করে নিজেকে পরকীয়া থেকে দূরে রাখা সম্ভব। সম্পর্কের প্রতি দায়িত্বশীল থেকে এবং সততার সঙ্গে জীবনযাপন করে একটি সুখী ও সুস্থ জীবন গড়ে তোলা সম্ভব।