ADHD বা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার হলো একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যা শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ঘটে। এটি মূলত অমনোযোগ, অতিচঞ্চলতা এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যার কারণে দেখা যায়। ADHD-তে আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবে মনোযোগ দিতে পারে না, সহজেই বিভ্রান্ত হয় এবং খুব অস্থির থাকে।
ADHD-এর প্রকারভেদ
ADHD সাধারণত তিনটি প্রকারভেদে বিভক্ত:
- অমনোযোগপূর্ণ ADHD: এই ক্ষেত্রে শিশু বা প্রাপ্তবয়স্করা কোনো কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে অক্ষম হয়। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
- নির্দেশনা অনুসরণ করতে না পারা।
- কাজে দ্রুত ভুল করা।
- কোনো কিছু শেষ করতে সমস্যা হওয়া।
- অতিচঞ্চল ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের অভাবজনিত ADHD: এতে ব্যক্তি সব সময় অস্থির থাকে এবং তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হয়। লক্ষণগুলো হলো:
- সবসময় নড়াচড়া করা।
- যথেষ্ট চিন্তা না করেই কাজ করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়া।
- ধৈর্য কম থাকা।
- মিশ্র ADHD: এ ধরনের ADHD-তে অমনোযোগপূর্ণ এবং অতিচঞ্চল উভয় লক্ষণই থাকে। শিশুরা সহজেই মনোযোগ হারায় এবং সবসময় চঞ্চল থাকে।
ADHD-এর কারণ
ADHD-এর নির্দিষ্ট কারণ এখনও সম্পূর্ণভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে, যেগুলো ADHD-এর সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে:
- জেনেটিক্স: পারিবারিক ইতিহাসে ADHD থাকার সম্ভাবনা বেশি।
- মস্তিষ্কের বিকাশ: কিছু মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিকমতো বিকাশ না হলে ADHD হতে পারে।
- পরিবেশগত কারণ: গর্ভাবস্থায় ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন বা মাদকদ্রব্য গ্রহণ ADHD-এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ADHD-এর লক্ষণ
ADHD-এর লক্ষণগুলো শিশুর শারীরিক এবং মানসিক আচরণে প্রভাব ফেলে। ADHD আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত নীচের লক্ষণগুলো প্রদর্শন করে:
- অমনোযোগ: স্কুল বা বাড়ির কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা।
- অতিরিক্ত চঞ্চলতা: সব সময় দৌড়াদৌড়ি করা, এক স্থানে থাকতে না পারা।
- আবেগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা: সহজেই হতাশ হওয়া বা রেগে যাওয়া।
ADHD-এর চিকিৎসা
ADHD-এর চিকিৎসা মূলত দুই ধরনের হতে পারে: ঔষধগত এবং আচরণগত থেরাপি।
- ঔষধগত চিকিৎসা: ADHD-এর জন্য কিছু স্টিমুল্যান্ট ঔষধ ব্যবহার করা হয় যা মনোযোগ বৃদ্ধি এবং চঞ্চলতা কমাতে সাহায্য করে।
- মিথাইলফেনিডেট এবং অ্যামফেটামিন হল ADHD-এর জন্য প্রধানত ব্যবহৃত ঔষধ।
- আচরণগত থেরাপি: এই থেরাপিতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সহায়তায় শিশুর আচরণে পরিবর্তন আনা হয়। এর মাধ্যমে শিশুকে ধৈর্য ধরতে, মনোযোগ বাড়াতে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ শেখানো হয়।
- শিক্ষাগত সহায়তা: ADHD আক্রান্ত শিশুদের জন্য স্কুলে বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। শিক্ষকদের সাহায্যে শিশুরা আরো ভালোভাবে কাজ শিখতে পারে এবং মনোযোগ ধরে রাখতে পারে।
ADHD নিয়ে অভিভাবকদের করণীয়
- ADHD আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিশেষ ধৈর্য ধরতে হবে।
- নিয়মিত রুটিন তৈরি করা যা তাদের মনোযোগ ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।
- শিশুকে ছোট ছোট কাজ দিয়ে ধীরে ধীরে তাদের মনোযোগ ধরে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
উপসংহার
ADHD হলো একটি দীর্ঘমেয়াদী মানসিক সমস্যা, তবে সঠিক চিকিৎসা ও থেরাপির মাধ্যমে শিশুদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। ADHD আক্রান্ত শিশুরা সঠিক চিকিৎসা এবং পারিবারিক সহায়তার মাধ্যমে স্কুল এবং সামাজিক জীবনে উন্নতি করতে সক্ষম হয়।