টিকটক নামক মানসিক রোগ নিয়ে বেড়ে উঠছে অসুস্থ এক প্রজন্ম

বর্তমান ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম হলো টিকটক। ছোট ভিডিও শেয়ার করার এই অ্যাপটি খুব অল্প সময়েই বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়েছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। তবে, এর প্রভাব কি শুধুই বিনোদন সীমাবদ্ধ, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে মানসিক অসুস্থতার এক গভীর সংকট?

টিকটকের জনপ্রিয়তা এবং এর প্রভাব

টিকটকের সহজ ব্যবহার এবং বিনোদনমূলক কনটেন্টের কারণে এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তরুণ এবং কিশোররা একাধিক ফিল্টার, ট্রেন্ডিং চ্যালেঞ্জ, এবং বিনোদনের জন্য এই প্ল্যাটফর্মে সময় কাটাচ্ছে। অথচ, এই অতিমাত্রায় ব্যবহার তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলছে।

raju akon youtube channel subscribtion

টিকটক আসক্তি: একটি নতুন মানসিক রোগ?

টিকটকের সাথে যুক্ত আসক্তি ক্রমশই একটি মানসিক রোগ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। টিকটক ভিডিওগুলো সাধারণত ১৫ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যা মানুষের মনোযোগের সীমা খুব দ্রুত পূরণ করে এবং নতুন নতুন ভিডিও দেখতে আগ্রহী করে তোলে। এর ফলে, একবার ভিডিও দেখা শুরু করলে থামানো কঠিন হয়ে পড়ে। একে বলা হয় “ডোপামিন রিওয়ার্ড সাইকেল”, যা মানুষের মনকে ক্রমাগত তৃপ্তির জন্য লোভী করে তোলে। এই আসক্তি থেকে তরুণ প্রজন্ম নিজেরাই মুক্ত হতে পারছে না, এবং এই আচরণ তাদের মানসিক স্থিতি নষ্ট করছে।

কনটেন্টের নেতিবাচক প্রভাব

টিকটকে অনেক ভালো কনটেন্ট থাকলেও, এর অধিকাংশই নিম্নমানের এবং ক্ষতিকারক হতে পারে। নাচ, গান, মজার ভিডিওর বাইরে, এখানে এমন অনেক কনটেন্ট আছে যা সহিংসতা, আপত্তিকর ভাষা এবং যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এ ধরনের কনটেন্ট তরুণ প্রজন্মের মনোজগতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, কিশোর এবং কিশোরীরা খুব সহজেই এসব কনটেন্টের প্রভাবিত হয়ে পড়ে এবং তাদের জীবনবোধে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।

মানসিক স্বাস্থ্যে টিকটকের প্রভাব

অতিমাত্রায় টিকটক ব্যবহারের ফলে একাধিক মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, যেমন:

  1. মনোযোগের সমস্যা: টিকটকের দ্রুত ভিডিও ফরম্যাটের কারণে তরুণরা দীর্ঘ সময়ের জন্য মনোযোগ ধরে রাখতে অক্ষম হয়ে পড়ছে।
  2. আত্মমর্যাদার হ্রাস: অন্যদের সাথে তুলনা করা এবং জনপ্রিয় হওয়ার ইচ্ছা তরুণদের মধ্যে নিজের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করছে।
  3. অতিরিক্ত মানসিক চাপ: নতুন চ্যালেঞ্জ বা ভিডিও ট্রেন্ডে পিছিয়ে পড়ার ভয় থেকে মানসিক চাপ বেড়ে যায়।
  4. অবসাদ ও একাকীত্ব: দীর্ঘ সময় ধরে টিকটক ব্যবহারের ফলে ব্যক্তিরা বাস্তব জীবনের সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, যা একাকীত্ব এবং অবসাদ সৃষ্টি করে।

প্রতিকার ও সচেতনতা

টিকটক বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের প্রভাব থেকে বাঁচতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। কিছু প্রতিকারের ব্যবস্থা নিচে দেওয়া হলো:

  1. নিয়ন্ত্রিত সময় ব্যবহারের নীতি: দিনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টিকটক ব্যবহার করার নিয়ম মানলে মানসিক চাপ কমবে।
  2. বিনোদনের বিকল্প উৎস খোঁজা: টিকটকের পাশাপাশি বই পড়া, গান শোনা, বা সৃজনশীল কাজে সময় দেওয়া যেতে পারে।
  3. পরিবারের সাথে সম্পর্ক বাড়ানো: পরিবার এবং প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটালে মানসিক স্থিতি বজায় থাকে।
  4. ডিজিটাল ডিটক্স: মাঝে মাঝে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল মাধ্যম থেকে বিরতি নেওয়া উচিত, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক হবে।

টিকটক নামক এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটি একদিকে যেমন বিনোদনের মাধ্যম, তেমনি এর ক্ষতিকারক প্রভাবও অনস্বীকার্য। তরুণ প্রজন্মকে মানসিক রোগ থেকে রক্ষা করতে হলে তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সঠিক ব্যবহার শেখানো প্রয়োজন। নতুবা, আমরা আসক্তির মাধ্যমে একটি অসুস্থ প্রজন্মের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, যারা মানসিকভাবে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *