শিশু সময়মত গড়াগড়ি ও হামাগুড়ি না দিলে কি হয় | Autism | Sensory Problem

শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো গড়াগড়ি ও হামাগুড়ি দেওয়ার সময়। শিশুরা সাধারণত ৩-৪ মাসের মধ্যে গড়াগড়ি শুরু করে এবং ৬-১০ মাসের মধ্যে হামাগুড়ি দেয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে শিশুদের এই প্রাথমিক শারীরিক মাইলস্টোনগুলো সময়মতো না ঘটলে, তা শিশুর ভবিষ্যৎ বিকাশের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে। এর পেছনে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) বা সেন্সরি প্রসেসিং সমস্যার (Sensory Processing Disorder) মতো বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।

শিশুদের গড়াগড়ি ও হামাগুড়ির দেরির কারণ:

১. অটিজম (Autism)

অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের অন্যতম লক্ষণ হলো শিশুর শারীরিক এবং সামাজিক বিকাশে কিছুটা বিলম্ব হওয়া। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত সামাজিক যোগাযোগে, চোখে চোখ রাখা, এবং শারীরিক বিকাশের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়।

  • গড়াগড়ি ও হামাগুড়িতে দেরি অটিজমের একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
  • শিশুরা নিজেদের চারপাশের পরিবেশের সাথে সঠিকভাবে মেলামেশা করতে পারে না, ফলে তাদের মোটর স্কিলের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. সেন্সরি প্রসেসিং সমস্যা (Sensory Processing Disorder)

সেন্সরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডারের কারণে শিশুদের ইন্দ্রিয়গুলো ঠিকমতো কাজ করে না। তারা পরিবেশ থেকে আসা তথ্য যেমন স্পর্শ, শব্দ, আলোর প্রতি সঠিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না।

  • সেন্সরি সমস্যা থাকলে শিশুদের গড়াগড়ি বা হামাগুড়ির মতো মোটর কার্যকলাপগুলোতে অসুবিধা হতে পারে।
  • শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং মাংসপেশির ব্যবহার সঠিকভাবে করতে না পারার কারণে গড়াগড়িতে সমস্যা দেখা দেয়।

শিশুর গড়াগড়ি ও হামাগুড়ি না দেওয়া বা দেরি হলে সম্ভাব্য প্রভাব:

১. মোটর স্কিলের বিকাশে সমস্যা (Delayed Motor Skill Development)

যদি শিশুরা সময়মতো গড়াগড়ি এবং হামাগুড়ি দিতে না শেখে, তবে তাদের মোটর স্কিলের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ কারণে তারা পরে হাঁটা, দৌড়ানো বা খেলাধুলায় অংশ নিতে সমস্যা অনুভব করতে পারে।

২. সামাজিক যোগাযোগে বিলম্ব (Social Interaction Delay)

গড়াগড়ি এবং হামাগুড়ি শিশুদের চারপাশের জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই দক্ষতাগুলো দেরিতে বিকশিত হলে, শিশুরা সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং সম্পর্ক গড়তে আরও সময় নিতে পারে।

৩. কর্মক্ষমতায় দুর্বলতা (Weak Functional Skills)

সময়মতো গড়াগড়ি বা হামাগুড়ি না দিলে শিশুদের কর্মক্ষমতা বা স্বাভাবিক শারীরিক ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে। এর প্রভাব ভবিষ্যতের দৈনন্দিন কার্যকলাপ যেমন সঠিকভাবে খাওয়া, খেলাধুলা, বা বিদ্যালয়ের কার্যকলাপের ওপর পড়তে পারে।

৪. কোঅর্ডিনেশন ও ভারসাম্যহীনতা (Lack of Coordination and Balance)

যদি শিশুরা সঠিকভাবে গড়াগড়ি ও হামাগুড়ি না শেখে, তবে তাদের শরীরের ভারসাম্য ও কোঅর্ডিনেশনে সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা পরবর্তীতে হাঁটাচলা ও অন্যান্য শারীরিক ক্রিয়াকলাপকে প্রভাবিত করতে পারে।

কি করা উচিত?

১. শিশুর বিকাশ পর্যবেক্ষণ (Monitoring Development) শিশুর মোটর স্কিলের বিকাশ পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি দেখেন যে আপনার শিশু গড়াগড়ি বা হামাগুড়ি দিতে দেরি করছে, তবে পেডিয়াট্রিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

২. শিশুরা যদি সেন্সরি প্রসেসিং সমস্যায় ভুগে (If Sensory Problems Exist)
সেন্সরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে অকুপেশনাল থেরাপি অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে। থেরাপিস্টরা শিশুদের মোটর স্কিল ও ইন্দ্রিয়গত সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করেন।

৩. অটিজম নির্ণয় করা (Autism Diagnosis) যদি অটিজমের কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তবে সময়মতো শিশুদের নির্ণয় এবং থেরাপির মাধ্যমে তাদের সহায়তা করা উচিত। এই থেরাপিগুলো শিশুর শারীরিক এবং সামাজিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার:

শিশুর গড়াগড়ি বা হামাগুড়ির বিকাশ সময়মতো না হলে তা অটিজম বা সেন্সরি প্রসেসিং সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এই ধরনের সমস্যাগুলো সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যাতে শিশুরা ভবিষ্যতে শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পিছিয়ে না থাকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top