ADHD (Attention Deficit Hyperactivity Disorder) বা মনোযোগ ঘাটতি ও অতিরিক্ত সক্রিয়তা একটি স্নায়বিক সমস্যা, যা শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত সবাইকে প্রভাবিত করতে পারে। এই অবস্থার কারণে ব্যক্তির মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়, সহজেই বিভ্রান্ত হয় এবং অতি সক্রিয়তা প্রদর্শন করে। বাংলাদেশে ADHD-এর সঠিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে, তবে অনেকেই এর বিষয়ে অবগত নন।
ADHD এর কারণ:
ADHD এর নির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণ এই অবস্থার পেছনে ভূমিকা পালন করে।
- জেনেটিক প্রভাব: ADHD প্রায়ই বংশগত হতে পারে।
- মস্তিষ্কের গঠন: কিছু ক্ষেত্রে ADHD-এ আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কের কিছু অংশের কার্যকারিতা অন্যান্যদের তুলনায় ভিন্ন হয়।
- পরিবেশগত কারণ: গর্ভাবস্থায় ধূমপান, অ্যালকোহল গ্রহণ বা প্রিম্যাচিওর বাচ্চাদের মধ্যে ADHD-এর ঝুঁকি বেশি থাকতে পারে।
ADHD এর লক্ষণ:
ADHD এর লক্ষণ সাধারণত শৈশবেই প্রকাশ পায়, তবে অনেক প্রাপ্তবয়স্কও এই অবস্থায় ভুগতে পারেন। মূলত তিন ধরনের লক্ষণ লক্ষ্য করা যায়:
- মনোযোগের ঘাটতি:
- সহজেই মনোযোগ হারিয়ে ফেলে।
- পড়াশোনায় বা কাজে দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখতে কষ্ট হয়।
- কাজ অসম্পূর্ণ রেখে দেওয়া।
- অতিসক্রিয়তা:
- চুপ করে বসে থাকতে কষ্ট হয়।
- অতিরিক্ত কথা বলা।
- ধীরে ধীরে বা শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে কিছু করতে সমস্যা।
- আবেগপ্রবণতা:
- অনেক সময় নিয়ন্ত্রণহীন আচরণ।
- কথার মাঝখানে অন্যের কথা কেটে দেয়া।
- অপেক্ষা করতে বা নিজের পালা আসার জন্য ধৈর্য্যধারণ করতে কষ্ট হয়।
বাংলাদেশে ADHD এর চিকিৎসা:
বাংলাদেশে ADHD চিকিৎসার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি ও থেরাপি রয়েছে। যদিও দেশের অনেক এলাকায় সচেতনতা কম, তবে বড় শহরগুলোতে বিশেষায়িত মানসিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র ও সাইকোলজিস্টরা ADHD চিকিৎসা প্রদান করেন।
১. চিকিৎসা থেরাপি (Behavioral Therapy):
- আচরণগত থেরাপি ADHD-এ আক্রান্ত শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কার্যকর হতে পারে।
- প্যারেন্টিং ট্রেনিং: ADHD শিশুর বাবা-মায়েদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়, যাতে তারা শিশুর আচরণ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেন।
- CBT (Cognitive Behavioral Therapy): এটি ADHD-এর লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শিশুর আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।
২. মেডিকেশন:
- ADHD-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কিছু ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। এগুলো মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে কাজ করে মনোযোগ এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়।
- স্টিমুল্যান্ট এবং নন-স্টিমুল্যান্ট ওষুধ সাধারণত ব্যবহৃত হয়।
৩. স্কুল এবং শিক্ষা সহায়তা:
- ADHD শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা সহায়তা প্রদান করা হয়। স্কুলের শিক্ষকদের জন্য ADHD শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ও শেখার প্রক্রিয়া উন্নত করার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
- ক্লাসে বিশেষ সুবিধা, যেমন ছোট দলে পড়ানো, পরীক্ষা সময় বাড়ানো, এবং নির্দিষ্ট আচরণগত লক্ষ্যে কাজ করা।
৪. পরিবার এবং সামাজিক সমর্থন:
- ADHD-এর ক্ষেত্রে পারিবারিক সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে ADHD সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে। এছাড়া পিতা-মাতা ও শিক্ষকরা শিশুদের আচরণ এবং মনোযোগের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
ADHD ব্যবস্থাপনায় কিছু টিপস:
- শিশুকে ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করা।
- পুরস্কার ভিত্তিক আচরণগত প্রশিক্ষণ।
- সক্রিয় শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা।
- সন্তানের নিয়মিত রুটিন তৈরি করা।
- পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক শান্তি নিশ্চিত করা।
উপসংহার:
বাংলাদেশে ADHD চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ও থেরাপি সহজলভ্য হলেও অনেক ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব রয়েছে। প্রারম্ভিক নির্ণয়, সঠিক চিকিৎসা, এবং পরিবার ও সামাজিক সহায়তার মাধ্যমে ADHD আক্রান্ত শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক ও শারীরিক উন্নতি সম্ভব। ADHD শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা সহায়তা ও আচরণগত থেরাপি অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।