অটিজম আক্রান্ত বাচ্চার যত্ন নেওয়া অনেক সময় এবং ধৈর্যের প্রয়োজন, কারণ তাদের বিশেষ চাহিদা ও বিকাশের ধরণ সাধারণ বাচ্চাদের থেকে কিছুটা আলাদা। একজন অভিভাবক হিসেবে আপনার নিজের যত্ন নেওয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আপনি মানসিক এবং শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেই সন্তানের জন্য ভালো সেবা দিতে পারবেন। এই আর্টিকেলে তুলে ধরা হলো কীভাবে অটিজম বাচ্চাকে এবং নিজেকে সময় দেবেন এবং তা সঠিকভাবে ব্যালেন্স করবেন।
১. নিয়মিত রুটিন তৈরি করুন
অটিজম বাচ্চারা সাধারণত পরিবর্তন পছন্দ করে না এবং তারা স্থির রুটিনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আপনার সন্তানের জন্য একটি সঠিক রুটিন তৈরি করুন, যাতে প্রতিদিনের কার্যকলাপগুলো সময়মতো সম্পন্ন করা যায়। যেমন: খাবার খাওয়া, পড়াশোনা, খেলাধুলা এবং ঘুমানোর সময় নির্দিষ্টভাবে মেনে চলুন। এতে বাচ্চার মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং তার দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হবে।
২. বাচ্চার জন্য বিশেষ থেরাপি ও সহায়তা
অটিজম শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরনের থেরাপি প্রয়োজন, যেমন স্পিচ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, এবং আচরণগত থেরাপি (ABA)। আপনার বাচ্চার প্রয়োজন অনুযায়ী এসব থেরাপিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করানো উচিত। পাশাপাশি, স্কুল ও বিশেষজ্ঞের সহায়তায় তাদের বিকাশে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
৩. আপনার নিজের জন্য সময় বরাদ্দ করুন
অটিজম বাচ্চার যত্নে পুরো সময় ব্যয় করে নিজেকে উপেক্ষা করা ঠিক নয়। অভিভাবক হিসেবে নিজের যত্ন নেওয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখুন। নিজের জন্য একান্ত কিছু সময় নির্ধারণ করুন, যা আপনার মানসিক শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে।
৪. মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকার কৌশল
অটিজম বাচ্চার যত্নে অনেক সময় মানসিক চাপ অনুভূত হতে পারে। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শিথিলায়নের কৌশলগুলো ব্যবহার করতে পারেন। যেমন: গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া, ধ্যান বা মেডিটেশন করা, এবং মাঝে মাঝে ছোট বিরতি নেওয়া। এইসব কৌশল আপনাকে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে সাহায্য করবে।
৫. পারিবারিক সহায়তা ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটান
একজন অভিভাবক হিসেবে আপনার আশেপাশের মানুষদের সাথে যোগাযোগ রাখা এবং তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেওয়া জরুরি। পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুরা আপনার পাশে থাকলে, আপনার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং অটিজম বাচ্চার প্রতি দায়িত্ব পালনও সহজ হবে। মাঝে মাঝে অন্য কাউকে বাচ্চার দায়িত্ব দিয়ে নিজের জন্য একটু মুক্ত সময় বের করে নিন।
৬. সময় ভাগাভাগি করুন
অটিজম বাচ্চার যত্নে এতটাই সময় দিতে হয় যে অন্যান্য কাজের জন্য সময় বের করা কঠিন হয়ে যায়। তবে পরিকল্পনা এবং সময় ভাগাভাগির মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত কাজ ও সন্তান দেখাশোনা দুটোই ব্যালেন্স করা সম্ভব। কোনো কাজের জন্য অগ্রাধিকার নির্ধারণ করুন এবং সে অনুযায়ী সময় দিন।
৭. বাচ্চার সাথে মানসম্পন্ন সময় কাটান
বাচ্চার জন্য শুধু দৈনন্দিন কাজগুলো করাই যথেষ্ট নয়, তাদের সাথে মানসম্পন্ন সময় কাটানোও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমন কিছু কাজ করুন যা তার পছন্দ এবং যা তাকে আনন্দ দেয়। এটি হতে পারে খেলা, গল্প শোনা বা তার সাথে কোনো সৃজনশীল কাজ করা। এতে তার মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং সে আপনার সাথে আরও সংযুক্ত অনুভব করবে।
৮. অন্যান্য পিতা-মাতার সাথে মত বিনিময় করুন
অটিজম আক্রান্ত শিশুদের পিতা-মাতারা একে অপরের সাথে মত বিনিময় করলে নতুন ধারণা পেতে পারেন। আপনি আপনার সন্তানকে কীভাবে সময় দেন এবং কীভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন, তা নিয়ে কথা বলুন। অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে আপনি নতুন কিছু শিখতে পারবেন এবং এতে আপনার সন্তানকে আরও ভালোভাবে সাহায্য করতে পারবেন।
৯. পেশাদার সাহায্য নিন
অটিজম আক্রান্ত সন্তানের যত্নে আপনাকে সবসময় একা থাকতে হবে না। প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নিন, যেমন কোনো শিশু মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সেলরের সাথে পরামর্শ করুন। তাদের পরামর্শ ও সহায়তা আপনাকে এবং আপনার সন্তানকে মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে এবং বিকাশে সহায়ক হবে।
উপসংহার
অটিজম আক্রান্ত বাচ্চার যত্ন নিতে গিয়ে নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া এবং বাচ্চার বিকাশে সময় দেয়া দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিকল্পনা, রুটিন এবং সহায়তার মাধ্যমে আপনি আপনার সন্তানকে সফলতার সাথে বড় করতে পারবেন এবং নিজেকে মানসিকভাবে শক্ত রাখার জন্য সময় পাবেন।