সেরিব্রাল পালসি বাচ্চার দীর্ঘ দিন এক্সারসাইজ করিয়ে ও উন্নতি হচ্ছে না? | Cerebral Palsy Treatment

সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) একটি স্থায়ী নিউরোলজিক্যাল অবস্থা, যা শিশুর মস্তিষ্কে আঘাত বা অস্বাভাবিক বিকাশের কারণে ঘটে। এর ফলে বাচ্চার শারীরিক আন্দোলন ও মাংসপেশীর নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, বাচ্চাকে দীর্ঘদিন ধরে ফিজিক্যাল থেরাপি বা এক্সারসাইজ করিয়েও প্রত্যাশিত উন্নতি দেখা যায় না। এই পরিস্থিতিতে কী করবেন তা নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

সেরিব্রাল পালসির লক্ষণ:

  • বাচ্চার পেশীগুলোর স্বাভাবিক গতি কম বা অস্বাভাবিক।
  • পেশী দুর্বলতা বা অনিয়ন্ত্রিত পেশী সংকোচন।
  • চলাফেরা, কথা বলা এবং আত্মনির্ভরশীল কাজে সমস্যা।
  • হাত-পা সরানোর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা।

raju akon youtube channel subscribtion

কেন এক্সারসাইজ করিয়ে উন্নতি হচ্ছে না?

১. সঠিক থেরাপির অভাব:

যদি সঠিক ফিজিক্যাল থেরাপি এবং চিকিৎসা না হয়, তবে সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত বাচ্চার উন্নতি দেখা নাও যেতে পারে। বাচ্চার সমস্যার ধরন অনুযায়ী থেরাপি নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

২. থেরাপি বা চিকিৎসায় ধারাবাহিকতা না থাকা:

সেরিব্রাল পালসি বাচ্চাদের চিকিৎসা ও থেরাপি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখা প্রয়োজন। থেরাপিতে বিরতি হলে বাচ্চার শারীরিক ক্ষমতা পুনরায় দুর্বল হতে পারে।

৩. বাচ্চার অবস্থার জটিলতা:

সেরিব্রাল পালসি একাধিক জটিলতার মধ্যে একটি। কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে শারীরিক অবস্থা বেশি জটিল হওয়ার কারণে উন্নতি ধীরগতিতে হতে পারে।

৪. অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা:

অনেক সময় সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত বাচ্চাদের অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকতে পারে, যেমন এপিলেপসি, মাংসপেশীর রোগ, বা ফুসফুসের সমস্যা। এগুলোর কারণে উন্নতি ধীর হতে পারে।

কী করতে পারেন?

১. বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন:

একজন শিশু নিউরোলজিস্ট বা সেরিব্রাল পালসি বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শ নেওয়া জরুরি, যিনি আপনার বাচ্চার জন্য সঠিক চিকিৎসা ও থেরাপি নির্ধারণ করবেন।

২. একাধিক থেরাপি প্রয়োগ:

বাচ্চার উন্নতির জন্য শুধুমাত্র ফিজিক্যাল থেরাপি যথেষ্ট নাও হতে পারে। একাধিক থেরাপি, যেমন অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি, এবং হাইড্রোথেরাপি প্রয়োগ করা হতে পারে।

৩. স্পেশালাইজড ফিজিক্যাল থেরাপি:

বাচ্চার শারীরিক ক্ষমতা উন্নত করতে বিশেষ ধরনের থেরাপি দরকার হতে পারে। এই থেরাপিগুলো তার প্রয়োজন অনুযায়ী উন্নত করে নেওয়া উচিত।

৪. সার্জারি:

কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। এটি পেশীগুলোর কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

৫. বাড়িতে থেরাপি:

ঘরে বসেও বাচ্চার জন্য নিয়মিত এক্সারসাইজ চালিয়ে যান। পেশীগুলোর সঠিক উন্নতি ঘটাতে ঘরের পরিবেশও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

সেরিব্রাল পালসির চিকিৎসা পদ্ধতি:

সেরিব্রাল পালসি নিরাময়যোগ্য না হলেও বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি এবং থেরাপি ব্যবহার করে বাচ্চার জীবনের গুণগত মান উন্নত করা সম্ভব:

  1. মেডিকেশন: পেশীর সংকোচন কমাতে ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
  2. ফিজিক্যাল থেরাপি: পেশীগুলোর শক্তি বাড়াতে নিয়মিত ফিজিক্যাল থেরাপি।
  3. অকুপেশনাল থেরাপি: দৈনন্দিন কাজ করতে সহায়তা করে।
  4. স্পিচ থেরাপি: কথা বলার ক্ষমতা ও কমিউনিকেশন স্কিল উন্নত করতে।
  5. সার্জারি: যদি প্রয়োজন হয়, পেশীর সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে অস্ত্রোপচার।

উপসংহার:

সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত বাচ্চার দীর্ঘদিন এক্সারসাইজ করার পরেও উন্নতি না দেখা গেলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সঠিক চিকিৎসা, থেরাপি এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে নতুন কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। সেরিব্রাল পালসি স্থায়ী সমস্যা হলেও সময়মতো চিকিৎসা ও সঠিক যত্ন নিয়ে বাচ্চার জীবনকে উন্নত করা সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top