অটিজম: বৈশিষ্ট্য ও লক্ষণ

অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (ASD) হলো একটি মানসিক ও বিকাশগত ব্যাধি, যা ব্যক্তির সামাজিক যোগাযোগ, আচরণ ও চিন্তাশক্তিকে প্রভাবিত করে। এটি সাধারণত শৈশবে দেখা দেয় এবং বিভিন্ন মাত্রায় লক্ষণ প্রকাশ পায়।

 অটিজমের বৈশিষ্ট্য:

১. সামাজিক যোগাযোগে সমস্যা:

  • চোখের যোগাযোগের অভাব: অটিজম আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত চোখের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে চায় না।
  • অন্যদের সাথে মেলামেশার অভাব: তারা সামাজিক পরিস্থিতিতে আগ্রহী হয় না বা বন্ধু তৈরি করতে চায় না।
  • অভিব্যক্তি ও সংকেত বোঝার অসুবিধা: অটিজম আক্রান্ত শিশুরা মুখের অভিব্যক্তি, শারীরিক সংকেত, বা অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারে না।

raju akon youtube channel subscribtion

২. বাধ্যতামূলক বা পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ:

  • একই কাজ বারবার করা: একটানা কিছু করা, যেমন একটি বস্তু ঘুরানো বা একটি কথা বারবার বলা।
  • একই রুটিনের প্রতি আবেগ: তারা একটি নির্দিষ্ট রুটিন বা ক্রম মেনে চলতে পছন্দ করে এবং রুটিনে সামান্য পরিবর্তন হলেই অস্বস্তি বোধ করে।
  • বিষয়ভিত্তিক আগ্রহ: কিছু নির্দিষ্ট বিষয় বা বস্তুতে অতিরিক্ত আগ্রহ দেখা যায়, যেমন গাড়ি, সংখ্যা, বা একটি নির্দিষ্ট খেলনা।

৩. সেন্সরি সেনসিটিভিটি:

  • আলো, শব্দ, গন্ধ বা স্পর্শে অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা: সাধারণ আলো বা শব্দ তাদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।
  • নির্দিষ্ট স্পর্শ বা গন্ধে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া: কিছু খাবার বা কাপড়ের প্রতি বিশেষ অস্বস্তি বা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

৪. ভাষাগত উন্নয়নে বিলম্ব:

  • কথা বলার বিলম্ব: অটিজম আক্রান্ত শিশুরা কথা বলতে দেরি করে বা একেবারেই কথা বলে না।
  • কথার পুনরাবৃত্তি: তারা প্রায়ই অন্যের কথা বারবার নকল করে, কিন্তু নিজেদের চিন্তাগুলি প্রকাশ করতে অসুবিধা হয়।

৫. গেম এবং কল্পনাশক্তির দুর্বলতা:

  • সৃজনশীল বা কল্পনামূলক খেলার অভাব: অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত সৃজনশীল বা কল্পনামূলক খেলার মধ্যে অংশ নিতে অক্ষম হয়।
  • প্রতীকী খেলার অভাব: তারা বাস্তবের পরিবর্তে খেলনা বা অন্য বস্তু নিয়ে খেলার ক্ষমতা কম থাকে।

৬. শারীরিক বিকাশে বিলম্ব:

  • জড়তা ও চলাফেরার সমস্যা: তাদের পায়ে হেঁটে চলার বা শরীরের গতিবিধি ঠিকমতো করতে সমস্যা হতে পারে।
  • পেশীর দুর্বলতা: অটিজম আক্রান্ত শিশুরা কিছু ক্ষেত্রে দুর্বল পেশী নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যার ফলে শারীরিক দক্ষতার উন্নয়নে বিলম্ব দেখা দেয়।

উপসংহার:

অটিজমের বৈশিষ্ট্য ও লক্ষণগুলো একেকজনের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। এটি একটি স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার হওয়ায়, কিছু শিশুর ক্ষেত্রে হালকা সমস্যা দেখা দেয়, আবার কারো ক্ষেত্রে গুরুতর সামাজিক এবং মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। তবে, সঠিক শিক্ষা, থেরাপি, এবং পুষ্টি সহায়তার মাধ্যমে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top