এডিএইচডি (Attention Deficit Hyperactivity Disorder) একটি মানসিক সমস্যা যা শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়। এটি সাধারণত অমনোযোগ, অস্থিরতা, এবং অত্যধিক সক্রিয় আচরণ দ্বারা চিহ্নিত হয়। এডিএইচডি-এর প্রভাবশালী লক্ষণগুলো সাধারণত শৈশব থেকেই প্রকাশ পায় এবং প্রায়ই স্কুলের পারফরমেন্স এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা সৃষ্টি করে।
এডিএইচডি এর লক্ষণসমূহ
এডিএইচডি সাধারণত তিনটি প্রধান উপসর্গের মাধ্যমে প্রকাশ পায়: অমনোযোগ (Inattention), অস্থিরতা (Hyperactivity) এবং আবেগপ্রবণতা (Impulsivity)। এই লক্ষণগুলো শিশুর দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
১. অমনোযোগ (Inattention):
- কোনো কাজ দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না।
- স্কুলের কাজে ভুল-ত্রুটি করা।
- কথা শুনতে বা নির্দেশ পালন করতে সমস্যা।
- কাজে মনোনিবেশ করার সময় ভুল করা বা স্থির থাকতে না পারা।
- জিনিস হারিয়ে ফেলা, যেমন বই, কলম, খেলনা ইত্যাদি।
- দৈনন্দিন কাজের সময় সমস্যা হওয়া, যেমন হোমওয়ার্ক, টাস্ক কমপ্লিট করতে সমস্যা।
২. অস্থিরতা (Hyperactivity):
- স্থির থাকতে পারে না; অনেক বেশি নড়াচড়া করে।
- অবিরত কথা বলে।
- চেয়ারে বসে থাকতে না পারা এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা।
- এক জায়গায় স্থির থাকতে না পারা।
- সামাজিক পরিস্থিতিতেও খুব বেশি সক্রিয়।
৩. আবেগপ্রবণতা (Impulsivity):
- অপেক্ষা করতে না পারা।
- অন্যের কথার মাঝখানে কথা বলা।
- আবেগের নিয়ন্ত্রণে সমস্যা; অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হওয়া।
- সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করা।
- ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করা, যেমন দৌড়ানো, রাস্তা পার হওয়ার সময় মনোযোগ না দেওয়া।
এডিএইচডি-এর কারণ
এডিএইচডি-এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি, তবে কিছু কারণ এর জন্য দায়ী হতে পারে:
- জেনেটিক ফ্যাক্টর: পরিবারে কারও এডিএইচডি থাকলে অন্যদের মধ্যে এডিএইচডি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- মস্তিষ্কের গঠন: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে এডিএইচডি আক্রান্তদের মস্তিষ্কের কিছু অংশ অন্যান্যদের তুলনায় কম সক্রিয়।
- প্রারম্ভিক শিশু বিকাশ: গর্ভাবস্থায় মা ধূমপান, মদ্যপান বা ড্রাগ ব্যবহার করলে শিশুর এডিএইচডি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এডিএইচডি-এর চিকিৎসা
এডিএইচডি সম্পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য নয়, তবে সঠিক চিকিৎসা এবং থেরাপি শিশুদের দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
১. ওষুধপত্র:
- এডিএইচডি-র লক্ষণ কমানোর জন্য স্টিমুলেন্ট ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যা শিশুর মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- কিছু নন-স্টিমুলেন্ট ওষুধও ব্যবহার করা হয় যা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে।
২. বিহেভিয়ারাল থেরাপি:
- বিহেভিয়ারাল থেরাপি এডিএইচডি আক্রান্ত শিশুদের আচরণ পরিবর্তনে সহায়তা করে।
- এ ধরনের থেরাপি শিশুদের মনোযোগ বাড়ানো এবং সামাজিক যোগাযোগে দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৩. মনোসামাজিক সমর্থন:
- পরিবার এবং শিক্ষকদের সমর্থন এডিএইচডি-যুক্ত শিশুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধৈর্য সহকারে তাদের সঙ্গে আচরণ করা এবং নিয়মিত সমর্থন প্রদান করা উচিত।
৪. শারীরিক এবং শিক্ষাগত থেরাপি:
- শারীরিক থেরাপির মাধ্যমে এডিএইচডি-যুক্ত শিশুদের মোটর স্কিল উন্নত করা হয়।
- শিক্ষামূলক থেরাপি তাদের শেখার প্রক্রিয়া সহজতর করতে সহায়তা করে।
উপসংহার
এডিএইচডি একটি সাধারণ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও সঠিক চিকিৎসা, থেরাপি এবং সমর্থন এর লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে। শিশুদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পরিবার এবং শিক্ষকদের একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন।