অটিজম একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার যা শিশুদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক বিকাশে প্রভাব ফেলে। প্রাথমিক বা প্রাইমারি অটিজমের লক্ষণগুলো সাধারণত জীবনের প্রথম তিন বছরের মধ্যে দৃশ্যমান হয়। এটি সঠিক সময়ে শনাক্ত করা এবং প্রতিকার গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
এই ব্লগে প্রাইমারি অটিজমের লক্ষণ এবং প্রতিকারের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
প্রাইমারি অটিজমের লক্ষণ
১. সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় সমস্যাঃ
প্রাইমারি অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত সামাজিক মিথস্ক্রিয়া বা যোগাযোগে সমস্যার সম্মুখীন হয়। তারা অন্যদের সঙ্গে চোখের সংযোগ এড়ায়, মনের ভাব প্রকাশ করতে চায় না এবং যোগাযোগে অনীহা দেখায়।
২. ভাষাগত বিকাশের বিলম্বঃ
অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা কথোপকথনে দেরি করে। তাদের শব্দের উচ্চারণ এবং বাক্য গঠনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে শিশুরা কথা বলার আগ্রহ দেখায় না বা শিখে যাওয়া ভাষাগত দক্ষতা হারিয়ে ফেলে।
৩. অসংগতিপূর্ণ আচরণঃ
অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা অনেক সময় অস্বাভাবিক এবং পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ করে থাকে, যেমন—একই কাজ বারবার করা, একই খেলনা বা বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহ দেখানো।
৪. ইন্দ্রিয়গত সংবেদনশীলতাঃ
অনেক অটিজম শিশু বিভিন্ন ইন্দ্রিয়গত সংবেদনশীলতার শিকার হয়, যেমন—তারা খুব উচ্চ শব্দে অস্বস্তি বোধ করে, নতুন গন্ধ বা টেক্সচারে বিরক্ত হয়, অথবা আলোর প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা প্রকাশ করে।
৫. নির্দিষ্ট দৈনন্দিন কাজের পুনরাবৃত্তিঃ
অটিজম শিশুদের নির্দিষ্ট দৈনন্দিন কাজের মধ্যে আটকে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। তারা পরিবর্তনকে সহ্য করতে পারে না এবং রুটিনের বাইরে কিছু করতে চাইলে বিরক্ত বা অস্থির হয়ে পড়ে।
৬. সামাজিক আচরণের অভাবঃ
অনেক অটিজম শিশু সামাজিকভাবে অন্যদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে চায় না। তারা সাধারণত একা খেলতে পছন্দ করে এবং বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে আগ্রহী নয়।
প্রাইমারি অটিজমের প্রতিকার
প্রাইমারি অটিজমের কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ বা প্রতিকার নেই, তবে বিশেষজ্ঞ থেরাপি এবং শিক্ষার মাধ্যমে এর লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো প্রায়ই অটিজম আক্রান্ত শিশুদের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করে:
১. Applied Behavior Analysis (ABA) থেরাপিঃ
ABA থেরাপি শিশুদের আচার-আচরণ উন্নত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এতে ভালো আচরণকে প্রমোট করা হয় এবং অস্বাভাবিক আচরণকে ধীরে ধীরে কমানোর জন্য প্রণোদনা প্রদান করা হয়।
২. স্পিচ থেরাপিঃ
অটিজম শিশুদের ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য স্পিচ থেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই থেরাপির মাধ্যমে শিশুদের কথা বলা, ভাষা বোঝা এবং যোগাযোগের সক্ষমতা উন্নত করা হয়।
৩. অকুপেশনাল থেরাপিঃ
অকুপেশনাল থেরাপি শিশুদের দৈনন্দিন জীবনের কাজগুলোতে সহায়তা করে। এটি তাদের শারীরিক দক্ষতা এবং ইন্দ্রিয়গত সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
৪. ইন্দ্রিয়গত থেরাপিঃ
ইন্দ্রিয়গত থেরাপি ইন্দ্রিয়গত সমস্যাগুলোর সমাধানে সহায়তা করে, যা অটিজম শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই থেরাপি শিশুদের দৈনন্দিন কাজে মনোযোগ এবং অংশগ্রহণ বাড়ায়।
৫. পারিবারিক সমর্থন এবং কাউন্সেলিংঃ
অটিজম শিশুর উন্নতিতে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকদের সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করার মাধ্যমে শিশুরা ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে। অভিভাবক কাউন্সেলিং শিশুদের মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হয়।
৬. শিক্ষামূলক থেরাপিঃ
বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম অটিজম শিশুদের সামাজিক, শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে সহায়ক হয়। এটি তাদের বিভিন্ন দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার সক্ষমতা বাড়ায়।
উপসংহার
প্রাইমারি অটিজমের লক্ষণগুলো দ্রুত শনাক্ত করা এবং সঠিক থেরাপি গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। ABA থেরাপি, স্পিচ থেরাপি এবং অন্যান্য থেরাপিগুলোর মাধ্যমে অটিজম শিশুদের উন্নতি সম্ভব। পাশাপাশি, অভিভাবকদের সহায়তা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ তাদের অটিজম সন্তানদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।