অটিজম শিশুদের অনেক ক্ষেত্রেই খাবার নিয়ে বিশেষ সমস্যা দেখা দেয়। তারা সাধারণত খাবারের স্বাদ, রং, গন্ধ বা টেক্সচারের প্রতি অতিসংবেদনশীল হতে পারে, যা তাদের খাবারের পছন্দ এবং অভ্যাসে প্রভাব ফেলে। ফলে, পুষ্টির ঘাটতি এবং স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এখানে অটিজম বাচ্চাদের খাবার সমস্যার কারণ, সমস্যা সমাধানের কিছু কৌশল এবং পুষ্টি বজায় রাখার উপায় আলোচনা করা হলো।
অটিজম বাচ্চাদের খাবার সমস্যার কারণ:
১. সংবেদনশীলতা (Sensory Sensitivity): অটিজম শিশুদের অনেকেই বিভিন্ন খাবারের টেক্সচার, গন্ধ, বা স্বাদের প্রতি সংবেদনশীল হয়। কিছু খাবারের টেক্সচার তাদের অস্বস্তি তৈরি করে। ফলে, তারা নতুন বা অপরিচিত খাবার এড়িয়ে চলে।
২. রুটিন বা একগামিতার প্রয়োজন: অটিজম শিশুরা সাধারণত রুটিন পছন্দ করে এবং খাবারেও একগামিতা বজায় রাখে। তারা প্রতিদিন একই ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করে এবং নতুন খাবার নিয়ে সহজে এক্সপেরিমেন্ট করতে চায় না।
৩. ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা: কিছু অটিজম শিশুদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সঠিকভাবে কাজ করে না, ফলে তারা প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাবার খেতে পারে না বা কখনও অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে।
৪. মোটর স্কিলের সমস্যা: অটিজম শিশুদের মধ্যে খাবার চিবানো বা গিলে ফেলার ক্ষেত্রে মোটর স্কিলের সমস্যা থাকতে পারে, যা তাদের জন্য কিছু খাবার খাওয়া কঠিন করে তোলে।
অটিজম বাচ্চাদের খাবার সমস্যার সমাধান:
১. ধৈর্য ধরুন ও ধাপে ধাপে এগিয়ে যান: অটিজম শিশুদের খাবার পছন্দে ধৈর্যশীল হতে হবে। নতুন খাবার যোগ করার সময় ধীরে ধীরে এগিয়ে যান। প্রথমে ছোট ছোট পরিমাণে খাবার দিন এবং শিশুকে নতুন খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন।
২. খাবারকে মজাদার ও আকর্ষণীয় করুন: অটিজম শিশুরা অনেক সময় খাবারের রং বা আকৃতির উপর নির্ভর করে। তাই খাবারকে আকর্ষণীয় রূপে পরিবেশন করুন। আপনি খাবারের মধ্যে আকর্ষণীয় ফর্ম বা মজাদার উপস্থাপনা করতে পারেন যা তাদের আগ্রহ জাগাবে।
৩. গন্ধ ও স্বাদের উপর কাজ করুন: শিশুদের যদি কোনো বিশেষ গন্ধ বা স্বাদ পছন্দ না হয়, তবে তাদের পছন্দসই খাবারগুলির গন্ধ বা স্বাদ মডিফাই করে দেখুন। ধীরে ধীরে নতুন খাবারের সঙ্গে পরিচিত করার চেষ্টা করুন।
৪. রুটিন মেনে চলুন: শিশুদের খাবারের রুটিনে পরিবর্তন না করে তাদের পছন্দ অনুযায়ী খাবার দিন। তবে, তাদের খাদ্য তালিকায় ধীরে ধীরে নতুন পুষ্টিকর খাবার যোগ করতে থাকুন।
৫. মোটর স্কিলের উন্নতি: যদি চিবানো বা গিলে ফেলার সমস্যা থাকে, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে মোটর থেরাপির মাধ্যমে সমস্যাটি সমাধান করার চেষ্টা করুন।
পুষ্টি বজায় রাখার উপায়:
১. পুষ্টিকর খাবার বেছে নিন: যে খাবারগুলি শিশু পছন্দ করে তার মধ্যে পুষ্টিকর উপাদান যোগ করুন। যেমন, শিশুর পছন্দের স্মুদি বা স্যুপের মধ্যে সবজি যোগ করুন যাতে তারা প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়।
২. সাপ্লিমেন্টের ব্যবহার: যদি শিশুর পুষ্টির ঘাটতি থাকে, তবে ডাক্তারের পরামর্শে ভিটামিন বা মিনারেল সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। এটি তাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহে সহায়ক হবে।
৩. বিভিন্ন ধরণের খাবার পরিচয় করানো: প্রথমে শিশুকে পরিচিত খাবার দিন, এরপর ধীরে ধীরে নতুন খাবার যোগ করুন। একেবারে নতুন খাবার দেওয়ার পরিবর্তে শিশুদের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধীরে ধীরে নতুন খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস তৈরি করুন।
উপসংহার:
অটিজম শিশুদের খাবার সমস্যাগুলো ধৈর্যশীলভাবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে মোকাবেলা করলে তাদের খাবারের পছন্দ এবং অভ্যাসে পরিবর্তন আনা সম্ভব। পুষ্টিকর খাদ্য অভ্যাস গড়ে তুলতে হলে তাদের পছন্দ ও অস্বস্তির দিকে নজর রেখে, ধীরে ধীরে নতুন খাবারের সঙ্গে পরিচিত করতে হবে। শিশুদের জন্য মজাদার উপায়ে খাবার তৈরি করা এবং খাবারের রুটিন বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।