অটিজম বাচ্চার কিভাবে নিজের সব কাজ করবে: সহায়ক কৌশল ও পরামর্শ

অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের দৈনন্দিন কাজগুলোতে স্বাভাবিকভাবে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু সঠিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং রুটিন গঠনের মাধ্যমে তারা নিজেদের দৈনন্দিন কাজগুলো সম্পন্ন করতে সক্ষম হতে পারে। এখানে কিছু কৌশল ও পরামর্শ দেয়া হল যেগুলো অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের স্বনির্ভর হতে সহায়তা করতে পারে।

১. দৈনন্দিন কাজের তালিকা তৈরি

অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন বা তালিকা তৈরি করা খুবই কার্যকর হতে পারে। তাদের প্রতিদিন কী কী করতে হবে তা সঠিকভাবে বলে দেওয়া হলে এবং সেই অনুযায়ী তাদের রুটিন তৈরি করা হলে তারা সেই অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করতে অভ্যস্ত হতে পারে।

  • প্রতিটি কাজকে ধাপে ধাপে ভেঙে দিন।
  • চিত্র বা প্রতীক ব্যবহার করে কাজের তালিকা তৈরি করতে পারেন।
  • চেকলিস্ট ব্যবহার করে কাজগুলো শেষ হলে মার্ক করতে দিন।

raju akon youtube channel subscribtion

২. ভিজ্যুয়াল সাপোর্ট ব্যবহার

অটিজম শিশুদের ভিজ্যুয়াল সাপোর্ট খুব ভালোভাবে কাজ করে। কাজের সময় কী করতে হবে তা ছবি বা ভিডিওর মাধ্যমে দেখানো হলে তারা সহজে বুঝতে পারে।

  • কাজের প্রতিটি ধাপ চিত্র বা ভিডিও আকারে দেখান।
  • প্রতিদিনের কাজে ব্যবহৃত জিনিসের জন্য রঙিন বা আকর্ষণীয় ভিজ্যুয়াল টুল ব্যবহার করুন।

৩. ধৈর্য ও সময় দিন

অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের নতুন কিছু শিখতে বা একটি কাজ সম্পন্ন করতে সাধারণের তুলনায় বেশি সময় লাগতে পারে। তাদের সাথে ধৈর্য ধরতে হবে এবং পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।

  • কাজের জন্য সময় নির্ধারণ করুন, কিন্তু অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে সহনশীল থাকুন।
  • শিশু যদি একটি কাজ শেষ করতে না পারে, তাহলে ধীরে ধীরে তাদের সহায়তা করুন।

৪. আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন

শিশুদের প্রতি ছোট ছোট অর্জনের জন্য প্রশংসা করা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। যখন তারা একটি কাজ সম্পন্ন করতে পারে, তখন তাদের উৎসাহিত করুন।

  • ছোট অর্জনের জন্য শিশুদের প্রশংসা ও পুরস্কৃত করুন।
  • একটি কাজের শেষে ছোট্ট উপহার বা বাহবা দিয়ে উৎসাহিত করুন।

৫. কাজের পরিবেশ সহজ করে তুলুন

অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য কাজের পরিবেশ যতটা সম্ভব সরল ও নিঃশব্দ রাখতে হবে। তাদের মনোযোগ ধরে রাখতে নির্দিষ্ট জায়গায় একটি কাজের স্থান তৈরি করতে পারেন।

  • জায়গাটি শান্ত, পরিচ্ছন্ন এবং সংগঠিত হতে হবে।
  • অতিরিক্ত শব্দ বা ডিস্ট্রাকশন থাকলে শিশু কাজের প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলতে পারে।

৬. স্বনির্ভরতার প্রশিক্ষণ

শিশুকে ছোট ছোট কাজগুলোতে ধীরে ধীরে নিজেই কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণ দিন। প্রথমে সহজ কাজ দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে বড় কাজের দিকে এগিয়ে যান।

  • নিজ হাতে পোশাক পরা, খাবার খাওয়া, দাঁত ব্রাশ করা ইত্যাদি কাজে সহায়তা করুন।
  • তাদের প্রতিদিনের কাজে স্বাভাবিকভাবে অংশ নিতে উৎসাহিত করুন।

৭. মডেলিং এবং রোল প্লে

শিশুকে দেখিয়ে দিন যে একটি কাজ কিভাবে করতে হবে। রোল প্লে বা মডেলিং এর মাধ্যমে তারা শিখতে পারে এবং নিজেরা কাজ করতে শুরু করতে পারে।

  • কাজটি প্রথমে আপনি নিজে করে দেখান।
  • এরপর শিশুকে ধীরে ধীরে সেই কাজটি করতে বলুন।

৮. আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক দক্ষতা

অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা প্রায়ই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যায় পড়ে। তাদের জন্য ধৈর্যশীল হওয়া এবং সামাজিক দক্ষতা উন্নয়ন করা গুরুত্বপূর্ণ।

  • শিশুদের সামাজিক দক্ষতা শিখতে পারলে তারা তাদের দৈনন্দিন কাজেও দক্ষ হয়ে উঠবে।
  • বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরতে শেখানোর মাধ্যমে তাদের আত্মনির্ভরতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারেন।

উপসংহার

অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সঠিক দিকনির্দেশনা, সময়, এবং সমর্থনের মাধ্যমে নিজেদের কাজগুলো করতে সক্ষম হয়। ধৈর্য, মডেলিং, ভিজ্যুয়াল সাপোর্ট এবং রুটিনের মাধ্যমে তারা আস্তে আস্তে স্বাধীনভাবে নিজেদের কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top