অটিজম হলো একটি স্নায়বিক বিকাশজনিত অবস্থান, যা শিশুর সামাজিক, ভাষাগত, এবং আচরণগত বিকাশে প্রভাব ফেলে। এটি সাধারণত জীবনের প্রথম তিন বছরের মধ্যে ধরা পড়ে এবং সারা জীবন স্থায়ী হয়। অটিজমকে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) হিসেবেও উল্লেখ করা হয়, কারণ এর বিভিন্ন স্তর ও ধরন রয়েছে। শিশুর মধ্যে অটিজমের লক্ষণগুলো একেকজনের মধ্যে ভিন্ন হতে পারে।
অটিজমের কারণ
অটিজমের সঠিক কারণ এখনো পরিষ্কার নয়, তবে এটি বিভিন্ন কারণের সম্মিলিত প্রভাবে হতে পারে বলে মনে করা হয়। কিছু সম্ভাব্য কারণ:
- জেনেটিক ফ্যাক্টর: গবেষণায় দেখা গেছে যে, পরিবারে অটিজম থাকা শিশুরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
- জন্মকালীন সমস্যা: জন্মের সময় কিছু শারীরিক সমস্যা অটিজমের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
- পরিবেশগত ফ্যাক্টর: মাতৃগর্ভে কিছু রাসায়নিকের সংস্পর্শ, যেমন বিষাক্ত পদার্থ, শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে।
- স্নায়বিক সমস্যা: মস্তিষ্কের গঠন বা কার্যক্রমের ত্রুটি অটিজমের একটি কারণ হতে পারে।
অটিজমের লক্ষণ
অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত কিছু সামাজিক, ভাষাগত এবং আচরণগত সমস্যা প্রদর্শন করে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:
- সামাজিক যোগাযোগের সমস্যা: অন্যদের সঙ্গে চোখের যোগাযোগ করতে অসুবিধা, নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেওয়া, এবং আবেগপ্রকাশ করতে না পারা।
- ভাষাগত বিকাশের বিলম্ব: কথা বলা শিখতে দেরি হওয়া, সীমিত শব্দভাণ্ডার, এবং বাক্যের মধ্যে কথোপকথনে সমস্যার সম্মুখীন হওয়া।
- পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ: কোনো নির্দিষ্ট কাজে বারবার ব্যস্ত থাকা, একই কথা বা কাজ পুনরাবৃত্তি করা।
- ইন্দ্রিয়গত সংবেদনশীলতা: আলো, শব্দ, গন্ধ, বা স্পর্শের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল বা অনাসক্ত থাকা।
- বাঁধাধরা অভ্যাস: রুটিনে পরিবর্তন আনলে অস্বস্তি বা উত্তেজনা দেখা দেয়া।
অটিজম শিশুর যত্ন
অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। তাদের বিকাশের সহায়ক কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ:
- শিক্ষা ও থেরাপি: বিশেষ শিক্ষা এবং বুদ্ধি বিকাশের থেরাপি শিশুদের বিকাশে সাহায্য করতে পারে। বংশগত থেরাপি, স্পিচ থেরাপি, এবং প্রয়োগমূলক আচরণ বিশ্লেষণ (ABA) থেরাপি কার্যকর।
- সামাজিক দক্ষতা গড়ে তোলা: শিশুদের সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে খেলাধুলা ও সামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে।
- পরিবারের ভূমিকা: পরিবারের সক্রিয় ভূমিকা এবং ভালোবাসা শিশুদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাবা-মায়ের ধৈর্য ও সহানুভূতি শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়ক।
- স্মার্ট প্ল্যানিং: দৈনন্দিন কার্যক্রমের জন্য রুটিন তৈরি করা এবং সেই অনুযায়ী শিশুদের পরিচালনা করা গুরুত্বপূর্ণ।
অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের সহায়ক পরিবেশ
অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন, যেখানে তারা নিজেদের মতো বিকাশ করতে পারে। একটি স্থিতিশীল পরিবেশ, পরিবার এবং শিক্ষকদের সহযোগিতা, এবং বিশেষ থেরাপির মাধ্যমে তারা অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।
উপসংহার
অটিজম হলো একটি আজীবন স্থায়ী সমস্যা, কিন্তু সঠিক যত্ন ও থেরাপির মাধ্যমে এই শিশুদের অনেকটাই সুস্থ ও সফল জীবন যাপন করতে সহায়তা করা যায়। অটিজমের লক্ষণ দ্রুত চিহ্নিত করে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তাদের ভবিষ্যত উন্নয়ন সম্ভব।