বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যর যত্ন এবং পেশাজীবীর গুরুত্ব

আমার কথাগুলো একটু শুনবেন? সময় আছে?

একটা কথা বলি… আমি একটু মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বের কথা বলতে চাচ্ছি। মানসিক স্বাস্থ্য তো দেখা যায় না তবে তা আচরণের মাধ্যমে বোঝা যায়।

স্বাস্থ্য কয় প্রকার জানেন তো?

WHO (World Helath Organisation) স্বীকৃতি দিয়েছে স্বাস্থ্য চার প্রকার।

১. শারীরিক স্বাস্থ্য
২. মানসিক স্বাস্থ্য
৩. সামাজিক স্বাস্থ্য
৪. ধর্মীয় স্বাস্থ্য

আমি একজন মানসিক স্বাস্থ্যের উন্মুক্ত পেশাজীবী। মানে আমি বুঝাতে চাচ্ছি আমি একজন সাইকোলজিস্ট। এ কথা বলছি কারণ হচ্ছে আপনাদের কিছু কথা শোনাবো।

১. শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে সবাই টেনশন করে। এই টেনশন করা হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য, আপনি করেন না? আমি কিন্তু শরীরে একটু জ্বর হলেও টেনশনে পড়ে যাই। শরীর মানে কি? আমার হাত, পা, চামড়া, চোখ, মাথা, কিডনি লিভার, হার্ট ইত্যাদি। এগুলো কিছু হলে আমরা সরাসরি ডাক্তারের কাছে যাই আর কিছু না পারলেও ফার্মেসিতে ওষুধ আছে না? নন প্রফেশনাল ফার্মেসির লোকের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে নেই।

২. মানসিক স্বাস্থ্যের কথা আর কি বলব? মনে করেন বিষন্নতা উদ্বিগ্নতা, বায়োপোলার ডিসঅর্ডার, পিটিএসডি, ওসিডি, সিজোফ্রেনিয়া, প্যানিক অ্যাটাক, সাইকো-সেক্সচুয়াল প্রবলেম আর বলতে ইচ্ছা করছে না কারন এর পরিমাণ ২০০ অধিক।

মানসিক স্বাস্থ্য মানে আমাদের মনের স্বাস্থ্য। মন হচ্ছে আমাদের শরীরের সবথেকে উপেক্ষিত একটি অংশ। শারীরিক স্বাস্থ্যের একটু অবনতি হলেই আমরা ছোটাছুটি করি। কিন্তু মনটা একটু কষ্ট পেলে, একটু রাগ হলে আমরা কখনো এই মনটার যত্ন নেই না।

আমাদের মন কিন্তু আমাদের শরীরেই থাকে আর এই মন হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্ক। মস্তিষ্ক হচ্ছে মাথার খুলির নিচে বিভিন্ন রকমের সার্কিট, নিউরোট্রান্সমিটার, মডিউল ইত্যাদি দ্বারা তৈরি।

মানসিক স্বাস্থ্যের এই বিষয়টিতে একটু বেশি গুরুত্ব দিতে চাই বর্তমান পরিস্থিতির বিবেচনায়। একটি মানুষের কতটুকু সম্পদ এবং ক্ষমতা দরকার হয়? একটু হিসাব করে বা চিন্তা করে দেখুন।

মনে করেন বাংলাদেশের ৫ ভাগ মানুষের কাছে বাংলাদেশের ৯৫ ভাগ সম্পদ রয়েছে। বাকি ৯৫ ভাগ মানুষের কাছে ৫ ভাগ সম্পদ রয়েছে। আপনার কি মনে হয় এটি কি সুস্থ মানসিকতার পরিচয়? এটি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছের মত নয়? এটা কি কোন বৈধ পথ হতে পারে? বৈধ পথ হোক আর না হোক কিভাবে তারা এত সম্পদ তৈরি করেছে সেটা তো জানেনই। এগুলো মূলত বিকৃত মানসিকতার পরিচয় বহন করে। এই মানসিকতার পিছনে দায়ী মস্তিষ্কের যেসব অংশ থাকে সেই অংশগুলোতে ছত্রাক, শৈবাল আর কিছু কিছু জায়গাতে পচন ধরেছে বলে।

বাংলাদেশে ১৭% মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছে যার ১% এর অবস্থা খুবই খারাপ। আর ১৬% এই আমি আর আপনি যে এই পোস্টটি পড়ছেন। মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা দেবে এমন পেশাজীবীর পরিমাণ শুধু সামান্য বলবো না বলবো নগণ্য।

যার কারণে মানুষের রাগ, অভিমান, ক্ষোভ, আগ্রাসী আচরণ, ভাঙচুর, মানসিক রোগীকে মেরে ফেলা, ড্রাগ অ্যাডিকশন, পায়ুপথে ভ্যাকুম দিয়ে বায়ু দিয়ে মেরে ফেলা, ধর্ষণ করা, কথায় কথায় বড় মিয়া ফুটানো, অন্যের সম্পদ দখল করা, সালিশি করার নামে জায়গা জমি, হাঁস ,মুরগি, গাছ, বউ/বাচ্চা/স্বামী লুণ্ঠন করা ইত্যাদি অহরহ হচ্ছে। তাও আবার একদল অফ থাকলে আর একদল জেগে ওঠে।

মূল বিষয় কি জানেন শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ভুরি ভুরি প্রফেশনাল থাকলেও এই ধরনের মানসিক সমস্যার জন্য যারা চিকিৎসা দিবেন তারা হচ্ছেন ১. সাইক্রিয়াটিস্ট ও ২. সাইকোলজিস্ট।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এই দুই ধরনের প্রফেশনাল দের যথাযথ মূল্যায়ন করা এখন পর্যন্ত আমার জীবনে দেখিনি। যার প্রেক্ষিতে যারা মানসিক রোগী হয়ে এদের কাছে আসেন তারা চিকিৎসা পান আর যেসব মানসিক রোগী সম্পদের পাহাড় তৈরি করে, নিজের ক্ষমতার বড়াই করেন, অন্যের সম্পদ লুণ্ঠন করেন তারা অন্যদেরকে ঠকিয়েই যাচ্ছে।

আপনি যদি কিছু বলেন তাহলে আপনার মাথা থেকে ১০ আঙ্গুল নিচে কচ কচ করে দুইটা পোচ দিয়ে দেবে। এরপরও হয়তো আপনি বেঁচে থাকবেন নয়তো শহীদ হয়ে বেহেশতে গিয়ে দুধের সাগরে হাবুডুবু খাবেন। আর সুন্দরী অপ্সরীদের নিয়ে রাত্রিযাপন করবেন। আর আপনার পরিবারের কিংবা পরিবেশে যদি কেউ থাকে আপনাকে অনেক ভালোবাসতো তারা কান্না করে চোখের জল ফেলবে।

এখন এই ধরনের মানসিক পেশাজীবীরা কি করবে?

সরকারের কাছে বলবে যে ভাই বা আপা আপনি আমাদের মূল্যায়ন করেন? না হলে চেম্বার করবো রোগী দেখবো, দিনশেষে চামড়ার ব্যাগের ভিতরে মোটা মোটা টাকার বান্ডিল নিয়ে বাসায় পৌঁছাব। বউকে খাওয়াবো, বাচ্চাকে দামি দামি খেলনা দিব, আর বাজারের সবথেকে বড় ইলিশ মাছটা কিনে সবাইকে দেখাইতে দেখাইতে আসবো, এর মাধ্যমে ক্ষমতা এবং লোভী মানুষদের আরো লোভ বাড়াবে?

সত্যি কথা বলতে এই ধরনের ব্যাপার মানসিক স্বাস্থ্যজীবীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। তারা এগুলো করে না। কারণ তারা জেনুইন ইমপ্যাথেটিক, ননজাজমেন্টাল।

৩. কারো সাথে মিশতে ভালো লাগেনা, রাস্তার মাঝে ওই লোকটারে দেখলে মাথা গরম হয়ে যায়, সভা সমিতিতে মানুষজন দেখলে আমি কারো সাথে মিশি না, আমার মনে হয় আমি সমাজের মানুষের সাথে মেশার যোগ্যতা অর্জন করিনি। আমি একা ঘরে বসে থাকতে পছন্দ করি। যেহেতু সমাজের কথা বার বার আসতেছে এটাকে সামাজিক স্বাস্থ্যই বলা যায়। আপনার কিংবা আপনার আশেপাশে এরকম কারো হয়? আমি অনেকেই এরকম দেখি যা বিগত বছরগুলোতে বেশি বেড়ে গিয়েছে। আমি মনে করি এর জন্য দায়ী ক্ষমতাবান ও লোভী ওই মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিরা।

৪. ধর্ম কর্ম নিয়ে অনেক নেতিবাচক চিন্তা তাই ধর্ম কর্ম করিনা। আবার ধর্ম কর্ম নিয়ে এত ইতিবাচক চিন্তা যে যারা ধর্ম কর্ম করে না তারা আমার এবং আমার দেশের শুধু তাই নয় পৃথিবীরই শত্রু। এটা হচ্ছে ধর্মীয় স্বাস্থ্য। বিগত বছরগুলোতে মানুষ ঠিকমত প্রার্থনা করতে পারত না..! কি যেন একটি উদ্বিগ্নতা, ভয়, আশঙ্কা কি খাব কোথায় থাকবো ইত্যাদি এর কারণে।

আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছি মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্যের যে পরিমাণ অবক্ষয় হয়েছে গত বছরগুলোতে তাতে মানসিক স্বাস্থ্যজীবী যারা আছেন তাদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে এই সমাজকে এবং সমাজের মানুষের মানসিকতাকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। না হলে এরকম ভাত, ডাল খাইয়ে প্রশংসা শুনে পেটাবে আর…. 🙏🙏

লেখকঃ রাজু আকন, কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্ট ও এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top