দাম্পত্য বা রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবহেলার অনুভূতি একটি গুরুতর সমস্যা। একজন পুরুষ যদি নিজেকে তার স্ত্রী বা জীবনের মহিলাদের কাছ থেকে অবহেলিত মনে করেন, তা সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পুরুষের অবহেলিত হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে এবং এটি বেশ জটিল হতে পারে।
পুরুষ কখন স্ত্রী বা মহিলাদের কাছে অবহেলিত বোধ করতে পারে:
১. সন্তানের আগমনের পর
সন্তান জন্মের পর অনেক মহিলাই সন্তান পালন ও দায়িত্বে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, যার কারণে অনেক সময় স্বামীর প্রতি আগের মত মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। এর ফলে অনেক পুরুষ নিজেকে অবহেলিত অনুভব করতে পারেন।
২. অতিরিক্ত কাজের চাপ ও সময়ের অভাব
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি একে অপরকে সময় দেওয়া না হয় বা একে অপরের প্রতি মনোযোগ কমে যায়, তখন অবহেলার অনুভূতি দেখা দিতে পারে। দৈনন্দিন কাজ, পারিবারিক বা কর্মজীবনের চাপের কারণে অনেক সময় সম্পর্কের আবেগীয় দিকটি অবহেলিত হতে পারে।
৩. শারীরিক সম্পর্কের অভাব
শারীরিক সম্পর্ক দাম্পত্য জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদি স্বামী তার স্ত্রীর কাছ থেকে শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দূরত্ব বা আগ্রহহীনতা দেখতে পান, তবে নিজেকে অবহেলিত বোধ করা স্বাভাবিক।
৪. আবেগীয় ও মানসিক সংযোগের অভাব
একজন পুরুষ তখনই অবহেলিত বোধ করেন যখন তার স্ত্রী মানসিক বা আবেগীয়ভাবে সংযুক্ত না হন। একে অপরের প্রতি যত্ন ও সহানুভূতির অভাব থাকলে সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যায় এবং পুরুষ নিজেকে একা বা অবহেলিত বোধ করতে পারেন।
৫. অতিরিক্ত সমালোচনা বা নেতিবাচক মন্তব্য
যদি স্ত্রী বা জীবনের কোনো মহিলা সবসময় পুরুষের কাজের সমালোচনা করেন বা নেতিবাচক মন্তব্য করেন, তবে সে নিজেকে অবমূল্যায়িত ও অবহেলিত বোধ করতে পারে। সম্মানহীন সম্পর্কের ফলে আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি হয়।
৬. অন্য কারো প্রতি বেশি মনোযোগ
কখনও কখনও একে অপরের প্রতি মনোযোগ কমে গেলে, সম্পর্কের বাইরে অন্য কারো সাথে সময় কাটাতে শুরু করা হয়, যা স্বামীকে অবহেলিত অনুভব করায়। এটি সরাসরি পরকীয়া না হলেও এটি সম্পর্কের দূরত্ব সৃষ্টি করে।
৭. একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ
যদি সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো একতরফাভাবে নেওয়া হয় এবং স্বামীকে উপেক্ষা করা হয়, তাহলে তিনি নিজেকে অবহেলিত বোধ করবেন। সম্পর্কের যেকোনো সিদ্ধান্তে উভয়ের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
অবহেলা কাটিয়ে উঠার উপায়:
১. খোলামেলা আলোচনা করুন
সম্পর্কের মধ্যে সমস্যা বা অবহেলার অনুভূতি থাকলে তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। একে অপরের অনুভূতি নিয়ে কথা বলুন এবং সমস্যার সমাধানের পথ বের করুন।
২. সন্তান পালন ও দায়িত্ব ভাগাভাগি করুন
সন্তান জন্মের পর দায়িত্ব সমানভাবে ভাগ করে নেওয়া দরকার। এতে স্ত্রী তার চাপ কমিয়ে স্বামীর প্রতি সময় দিতে পারবেন এবং সম্পর্কের মধ্যে সমতা ফিরে আসবে।
৩. একসাথে সময় কাটান
ব্যস্ত জীবনের মাঝে একে অপরের জন্য সময় বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একসাথে সময় কাটানো সম্পর্ককে মজবুত করে এবং অবহেলার অনুভূতি দূর করতে সহায়ক হয়।
৪. মানসিক সংযোগ তৈরি করুন
শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্ক নয়, মানসিক ও আবেগীয়ভাবে সংযুক্ত থাকাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। স্বামীর অনুভূতিগুলো গুরুত্ব দিয়ে শুনুন এবং তার পাশে থাকুন।
৫. সাহায্য নিন
যদি সম্পর্কের সমস্যা নিয়ে নিজেদের মধ্যে সমাধান করা সম্ভব না হয়, তবে পারিবারিক বা দাম্পত্য কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ সম্পর্ককে নতুন দিক নির্দেশনা দিতে পারে।
উপসংহার
একজন পুরুষ স্ত্রীর কাছ থেকে অবহেলিত বোধ করলে তা সম্পর্কের স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে। সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে উভয়পক্ষের সম্মান, মনোযোগ, ও যত্ন নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে একে অপরকে সময় দিয়ে সমস্যার সমাধান করা উচিত।