মাঝে মাঝে রাতে ঘুমাতে পারি না, সটফট করি: এটা কি মানসিক রোগ হতে পারে?

রাতে ঘুমাতে না পারা এবং সটফট করা—অর্থাৎ, উদ্বিগ্নতা বা অস্থিরতা অনুভব করা—আজকের সমাজে একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যাটি কখনো কখনো মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে, আবার কখনো এটি সাময়িক উদ্বেগ বা স্ট্রেসের কারণে ঘটে। এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব কেন এই সমস্যা দেখা দেয়, এর পেছনের কারণগুলি, এবং এটি মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে কিনা।

ঘুম না আসার পেছনের সাধারণ কারণসমূহ

১. উদ্বেগ ও স্ট্রেস:

  • প্রতিদিনের জীবনের চাপ, কাজের চাপ, সম্পর্কের সমস্যা বা আর্থিক উদ্বেগের কারণে অনেক সময় রাতে ভালো ঘুম হয় না। এই উদ্বেগের কারণে মস্তিষ্ক শান্ত হতে পারে না এবং ঘুম আসতে সমস্যা হয়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা:

  • রাতে দেরিতে খাওয়া, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ, বা অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচি ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

৩. পরিবেশগত কারণ:

  • শোবার ঘরের অস্বস্তিকর পরিবেশ, যেমন বেশি আলো, তাপমাত্রা, বা শব্দও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
  1. টেকনোলজি ব্যবহারের প্রভাব:
    • শোয়ার আগে মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, বা কম্পিউটার ব্যবহার করলে মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে যায় এবং ঘুম আসতে সমস্যা হয়।
  2. শারীরিক অসুস্থতা:
    • শরীরের কোন অস্বস্তি, যেমন মাথাব্যথা, ব্যাকপেইন বা শ্বাসকষ্টও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

সটফট করার পেছনের কারণসমূহ

১. উদ্বেগজনিত অস্থিরতা:

  • উদ্বিগ্ন বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় মস্তিষ্কে উদ্বেগের সিগনাল আসতে থাকে, যার ফলে ব্যক্তি সটফট করতে থাকে।

২. প্যানিক অ্যাটাক:

  • প্যানিক অ্যাটাকের সময় হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা, এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে অস্থিরতা অনুভব করা হয়।

৩. ক্যাফেইন বা নিকোটিন:

  • রাতে দেরিতে চা, কফি বা সিগারেট গ্রহণ করলে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে এবং অস্থিরতা অনুভূত হয়।
  1. মাদকদ্রব্য:
    • কিছু মাদকদ্রব্যের ব্যবহার রাতে অস্থিরতা এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

এটা কি মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে?

হ্যাঁ, মাঝে মাঝে ঘুম না আসা এবং সটফট করা কিছু মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে, যেমন:

১. অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার:

  • উদ্বেগজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই রাতে ঘুমাতে সমস্যা এবং অস্থিরতা অনুভব করেন।

২. বিষণ্নতা:

  • বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা ঘুমের সমস্যা, অস্থিরতা এবং মাঝে মাঝে রাতে জেগে থাকার সমস্যা অনুভব করতে পারেন।

৩. ইনসোমনিয়া:

  • ইনসোমনিয়া একটি ঘুমের রোগ, যেখানে ব্যক্তি দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমাতে পারে না বা ঘুম ভেঙে যায়।
  1. প্যানিক ডিসঅর্ডার:
    • প্যানিক ডিসঅর্ডারের কারণে ব্যক্তিরা রাতে প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হতে পারেন, যার ফলে ঘুম ব্যাহত হয়।

এই সমস্যার সমাধান কী?

১. রিল্যাক্সেশন টেকনিক:

  • শোয়ার আগে রিল্যাক্সেশন টেকনিক যেমন মেডিটেশন, ডিপ ব্রিদিং, বা প্রগ্রেসিভ মাসল রিল্যাক্সেশন চেষ্টা করতে পারেন।

২. সঠিক ঘুমের রুটিন:

  • প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ওঠার চেষ্টা করুন। ঘুমের আগে টেকনোলজি ব্যবহারে বিরতি দিন।

৩. ডায়েট নিয়ন্ত্রণ:

  • রাতের খাবার হালকা রাখুন এবং শোয়ার আগে ক্যাফেইন বা নিকোটিন এড়িয়ে চলুন।
  1. ব্যায়াম:
    • নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ঘুমের গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
  2. মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ:
    • যদি সমস্যা গুরুতর হয়ে ওঠে বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে একজন মনোবিদের সাথে পরামর্শ করুন। প্রয়োজন হলে থেরাপি বা ওষুধের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

উপসংহার

রাতে ঘুমাতে না পারা এবং সটফট করা অনেক সময় অস্থায়ী সমস্যা হতে পারে, তবে এটি যদি নিয়মিত ঘটে এবং দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে, তাহলে এটি মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে। সঠিক সমাধান এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে আপনি এই সমস্যার মোকাবেলা করতে পারবেন এবং পুনরায় সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন।


ঠিকানা: পিনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top