সোশ্যাল অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের (Social Anxiety Disorder) জন্য কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) একটি কার্যকর পদ্ধতি। নিজের উপর সিবিটি থেরাপির কিছু টেকনিক প্রয়োগ করতে পারেন যা আপনাকে সোশ্যাল অ্যাংজাইটি কমাতে সাহায্য করতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ টেকনিক উল্লেখ করা হলো:
১. কগনিটিভ রি-স্ট্রাকচারিং (Cognitive Restructuring):
- নেগেটিভ থটস চিহ্নিত করুন: আপনি যখন কোনো সোশ্যাল সিচুয়েশনে থাকেন, তখন আপনার মাথায় যেসব নেগেটিভ থটস আসে সেগুলি চিহ্নিত করুন। যেমন: “আমি লজ্জা পেয়ে যাব”, “সবাই আমাকে বিচার করবে” ইত্যাদি।
- এসব থটসকে চ্যালেঞ্জ করুন: এই চিন্তাগুলি কতটা বাস্তব তা যাচাই করুন। আপনি নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন, “আসলেই কি সবাই আমাকে বিচার করছে?”, “যদি কেউ আমাকে লজ্জা দেয়, তাতে আমার কি ক্ষতি হবে?”
- পজিটিভ থটস দিয়ে রিপ্লেস করুন: নেগেটিভ চিন্তাগুলি পজিটিভ ও বাস্তবমুখী চিন্তা দিয়ে রিপ্লেস করুন। যেমন: “আমি স্বাভাবিকভাবে কথা বলছি এবং সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত।”

২. গ্র্যাডুয়াল এক্সপোজার (Gradual Exposure):
- ছোট পদক্ষেপ: আপনি যে পরিস্থিতিতে সোশ্যাল অ্যাংজাইটি অনুভব করেন, সেগুলির একটি তালিকা তৈরি করুন। সহজ থেকে কঠিন পর্যন্ত তাদের অগ্রাধিকার দিন।
- স্টেপ বাই স্টেপ এক্সপোজার: তালিকার প্রথমে থাকা সবচেয়ে সহজ কাজটি করার চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে আপনি কঠিন কাজগুলিতে অগ্রসর হবেন।
- সময়ের সাথে নিজেকে অভ্যস্ত করুন: পরিস্থিতির সাথে নিজেকে অভ্যস্ত করতে সময় নিন। একাধিকবার চেষ্টা করুন যতক্ষণ না আপনার কমফোর্ট লেভেল বৃদ্ধি পায়।
৩. মাইন্ডফুলনেস ও রিলাক্সেশন টেকনিক (Mindfulness and Relaxation Techniques):
- শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ: গভীর শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে নিজেকে শান্ত করুন। ধীরে ধীরে শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন।
- মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন: বর্তমান মোমেন্টে মনোযোগ দিন এবং আপনার চিন্তাগুলি পর্যবেক্ষণ করুন। কোনো চিন্তায় যদি অ্যাংজাইটি বাড়ে, তবে সেটিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করুন এবং পরের মুহূর্তে ফোকাস করুন।
- প্রগ্রেসিভ মাসল রিলাক্সেশন: শরীরের প্রতিটি অংশ আলাদা আলাদা করে রিল্যাক্স করার চেষ্টা করুন।
৪. সোশ্যাল স্কিলস ট্রেনিং (Social Skills Training):
- ব্যবহারিক যোগাযোগের অনুশীলন: নিজেকে কমফোর্টেবলভাবে কমিউনিকেট করতে শেখান। নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার অনুশীলন করুন।
- নন-ভারবাল সিগন্যাল: বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এবং ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন নিয়েও কাজ করুন, কারণ এগুলি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সোশ্যাল সিচুয়েশনে নিজেকে ভালোভাবে প্রেজেন্ট করা সম্ভব হবে।
৫. সেলফ-কম্প্যাশন (Self-Compassion):
- নিজের সাথে নম্র থাকুন: আপনি যখন সোশ্যাল অ্যাংজাইটি অনুভব করবেন, তখন নিজেকে দোষারোপ করবেন না। নিজের প্রতি সহানুভূতি দেখান এবং নিজেকে সময় দিন।
- নিজের ছোট অর্জন উদযাপন করুন: আপনি যদি কোনো সোশ্যাল সিচুয়েশনে ভালোভাবে পারফর্ম করতে পারেন, তাহলে সেটাকে উদযাপন করুন।
আপনার উপর সিবিটির এই টেকনিকগুলো প্রয়োগ করে আপনি সোশ্যাল অ্যাংজাইটির উপর অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ আনতে পারবেন। তবে যদি সমস্যাটি অত্যন্ত গুরুতর হয়, তাহলে একজন প্রফেশনাল থেরাপিস্টের পরামর্শ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।