রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তা বা স্বাস্থ্যজনিত উদ্বেগ, যা “হেলথ এংজাইটি” বা “হাইপোকন্ড্রিয়াসিস” নামে পরিচিত, একটি মানসিক ব্যাধি যেখানে ব্যক্তি তার শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন থাকে। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে মানুষ স্বাভাবিক শারীরিক অনুভূতিগুলিকে গুরুতর রোগের লক্ষণ বলে মনে করে এবং এটি নিয়ে অত্যধিক চিন্তিত থাকে।
রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তা: কী এবং কেন?
স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ একদিকে যেমন স্বাভাবিক, তেমনি অতিরিক্ত উদ্বেগ কখনও কখনও একটি মানসিক রোগে পরিণত হতে পারে। যখন কেউ প্রতিনিয়ত মনে করে যে সে কোনো গুরুতর রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং এর ফলে দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা সৃষ্টি হয়, তখন এটি একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
কী কারণে এই সমস্যা হয়?
- ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা: অতীতে কোনো গুরুতর অসুস্থতা বা চিকিৎসাজনিত অভিজ্ঞতা থাকলে এই সমস্যা হতে পারে।
- জিনগত প্রভাব: পরিবারের মধ্যে যদি কারো হেলথ এংজাইটি থাকে, তবে এর প্রভাব পড়তে পারে।
- মানসিক চাপ: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ বা উদ্বেগ থেকে এই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- মিডিয়া ও ইন্টারনেট: স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খবর, সোশ্যাল মিডিয়া বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত তথ্য পাওয়া এই উদ্বেগ বাড়াতে পারে।
রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তার লক্ষণসমূহ
হাইপোকন্ড্রিয়াসিসের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- অতিরিক্ত শরীরিক লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করা: ছোটখাটো শারীরিক লক্ষণ যেমন মাথাব্যথা, গলা শুকিয়ে যাওয়া বা হালকা ব্যথাকে গুরুতর রোগের ইঙ্গিত হিসেবে ধরা।
- ডাক্তারের কাছে বারবার যাওয়া: সামান্য সমস্যা নিয়ে বারবার ডাক্তার দেখানোর প্রবণতা।
- অতিরিক্ত ইন্টারনেট সার্চ: নিজের লক্ষণগুলো সম্পর্কে ইন্টারনেটে সার্চ করে নিজের রোগ নির্ধারণ করার চেষ্টা করা।
- দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা: স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করে প্রতিনিয়ত উদ্বিগ্ন এবং অস্থির থাকা।
- সম্পর্কে সমস্যা: স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের কারণে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হওয়া।
রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তার সমাধানে সিবিটি থেরাপির টেকনিক
সিবিটি (কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি) থেরাপি হেলথ এংজাইটি মোকাবেলার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। নিচে কিছু সিবিটি টেকনিক উল্লেখ করা হলো যা নিজের উপরে প্রয়োগ করা যায়:
- কগনিটিভ রিস্ট্রাকচারিং:
- নিজের নেতিবাচক চিন্তাগুলো চিহ্নিত করুন এবং সেগুলোকে চ্যালেঞ্জ করুন। উদাহরণস্বরূপ, “আমি নিশ্চিত আমি গুরুতর অসুস্থ” চিন্তাটি পরিবর্তন করে “এটি শুধুমাত্র একটি সামান্য লক্ষণ হতে পারে” চিন্তা করুন।
- মাইন্ডফুলনেস ও রিলাক্সেশন:
- ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, এবং রিলাক্সেশন টেকনিকগুলো প্র্যাকটিস করুন। এটি আপনাকে মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীর ও মনের সংযোগ বুঝতে সাহায্য করবে।
- গ্র্যাডুয়াল এক্সপোজার:
- ধীরে ধীরে নিজের ভয়ের সম্মুখীন হন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি শরীরের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ নিয়ে চিন্তিত থাকেন, তবে সেই বিষয়ে না ভেবে নিজেকে অন্যান্য কাজে ব্যস্ত রাখুন।
- লক্ষ্য স্থাপন:
- একটি রুটিন বা দৈনন্দিন লক্ষ্য তৈরি করুন যা আপনাকে স্বাস্থ্য নিয়ে কম চিন্তা করতে সাহায্য করবে। এটি আপনার মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
- ইন্টারনেট ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা:
- স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য সার্চ করা থেকে বিরত থাকুন এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক খবর বা ভিডিও দেখার পরিমাণ কমিয়ে আনুন।
উপসংহার
রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তা একটি গুরুতর মানসিক অবস্থা যা ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, সঠিক সময়ে এটি চিহ্নিত করা এবং সঠিক টেকনিক প্রয়োগ করে এই সমস্যাকে মোকাবেলা করা সম্ভব। সিবিটি থেরাপির মাধ্যমে নিজেদের চিন্তাভাবনা এবং আচরণে পরিবর্তন এনে হেলথ এংজাইটি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।