বাইপোলার ডিসঅর্ডার একটি ক্রনিক মানসিক অবস্থা, যার জন্য দীর্ঘমেয়াদী ওষুধের প্রয়োজন হয়। বাইপোলার রোগের ওষুধ বন্ধ করার ফলে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং মুডের অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। এখানে ওষুধ বন্ধ করলে কী কী সমস্যা হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. মুড সুইংস এবং রিল্যাপস
ওষুধ বন্ধ করার পর প্রথম যে সমস্যাটি দেখা দিতে পারে তা হলো মুড সুইংস বা মুডের হঠাৎ পরিবর্তন। রোগী আবার ম্যানিয়া বা ডিপ্রেশনের পর্বে ফিরে যেতে পারে। বিশেষ করে, ওষুধ বন্ধ করার পর প্রথম ছয় মাসের মধ্যে রিল্যাপস হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি থাকে।
- ম্যানিয়া: ম্যানিয়ার পর্বে রোগীর আচরণে অস্বাভাবিক উচ্ছ্বাস, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, দ্রুত কথা বলা, এবং ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
- ডিপ্রেশন: ডিপ্রেশনের পর্বে রোগী অত্যন্ত মনমরা, অবসাদগ্রস্ত এবং হতাশা অনুভব করতে পারে, যা আত্মহত্যার ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে।
২. উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ
ওষুধ বন্ধ করার পর ম্যানিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে রোগী উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে লিপ্ত হতে পারে। এর মধ্যে অতিরিক্ত অর্থ খরচ, ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণ, এবং মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এ ধরনের আচরণগুলি রোগী এবং তার আশেপাশের মানুষের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
৩. সাইকোসিসের ঝুঁকি
ওষুধ বন্ধ করার ফলে সাইকোসিসের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পেতে পারে। সাইকোসিসের সময় রোগী বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বিভ্রান্তিকর চিন্তা ও বিশ্বাসে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সাইকোসিস রোগীর জন্য একটি গুরুতর অবস্থা এবং তাত্ক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
৪. স্বাস্থ্যগত অবনতির ঝুঁকি
বাইপোলার রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলি রোগীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক। ওষুধ বন্ধ করলে শারীরিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন ওজন বৃদ্ধি, হাইপারটেনশন, এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
৫. সামাজিক এবং কর্মক্ষেত্রের সমস্যা
ওষুধ বন্ধ করার পর রোগীর মুডের অস্থিতিশীলতা তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং কর্মজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ম্যানিয়া বা ডিপ্রেশনের পর্বের সময় সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং কাজের প্রতি মনোযোগ হারিয়ে যেতে পারে, যা সম্পর্ক এবং কর্মক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
উপসংহার
বাইপোলার রোগের ওষুধ বন্ধ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এবং তা করার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ওষুধ বন্ধ করার প্রক্রিয়াটি যদি অপরিকল্পিত বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়াই করা হয়, তবে রোগীর মানসিক এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী এবং নিয়মিত ওষুধের ব্যবহার রোগীর জন্য জীবনযাপনের মান উন্নত করতে এবং বাইপোলার পর্বগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হতে পারে।