কম বয়সে কেন হার্ট অ্যাটাক এবং ব্রেনের স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়ছে?

কম বয়সে হার্ট অ্যাটাক এবং ব্রেনের স্ট্রোকের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেগুলো আমাদের জীবনের নানা দিকের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমি, সাইকোলজিস্ট রাজু আকন, এই সমস্যার পেছনের কারণগুলো বিশ্লেষণ করে দেখানোর চেষ্টা করছি।

১. অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন

  • খাদ্যাভ্যাস: বর্তমান সময়ে দ্রুতগতির জীবনের কারণে অনেকেই অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। বেশি তেল, চর্বি, চিনি এবং প্রসেসড ফুড খাওয়ার প্রবণতা হার্টের জন্য ক্ষতিকারক। এতে কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ বাড়ে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • অলস জীবনযাপন: শারীরিক পরিশ্রমের অভাবও হার্ট এবং ব্রেনের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আধুনিক জীবনে অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করেন এবং ব্যায়ামের অভাবের কারণে রক্ত সঞ্চালন এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা কমে যায়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ

  • মানসিক চাপের প্রভাব: আধুনিক জীবনের চাপে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। মানসিক চাপ দীর্ঘমেয়াদি হলে এটি হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কের উপর চাপ সৃষ্টি করে, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • অতিরিক্ত কাজের চাপ: অধিকাংশ মানুষ এখন বেশি সময় কাজ করেন, যা তাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। অধিক কাজের চাপের কারণে পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবও স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।

৩. ধূমপান এবং মদ্যপান

  • ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব: ধূমপান হার্টের ধমনীগুলোকে সংকুচিত করে এবং রক্ত সঞ্চালনকে বাধাগ্রস্ত করে। এতে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • মদ্যপানের প্রভাব: অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তচাপ বাড়ায় এবং হার্ট এবং মস্তিষ্কের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এটি স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।

৪. অন্য কোন দীর্ঘস্থায়ী রোগ

  • ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কের ধমনীতে পরিবর্তন আনে, যা রক্ত সঞ্চালনকে বাধাগ্রস্ত করে এবং হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ মস্তিষ্কের ধমনীকে দুর্বল করে দেয়, যা ব্রেন স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্টের পাম্পিং ক্ষমতাও কমে যায়, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।

৫. জিনগত কারণ এবং পারিবারিক ইতিহাস

  • জিনগত কারণ: অনেকের মধ্যে জিনগতভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকতে পারে। যাদের পরিবারে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ইতিহাস রয়েছে, তাদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেশি।
  • পরিবারের জীবনধারা: পারিবারিক জীবনধারা এবং অভ্যাসও হার্ট এবং ব্রেনের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি দেখা যায়।

৬. অপর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং অনিদ্রা

  • ঘুমের অভাব: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। অনিদ্রা এবং অপর্যাপ্ত বিশ্রামের কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায়, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • ঘুমের মান: মানসম্মত ঘুমের অভাবও হৃদরোগের কারণ হতে পারে। যদি ঘুম গভীর না হয়, তবে শরীরের রক্তচাপ কমে না, যা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

৭. অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা

  • ওজন বৃদ্ধি: অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা হার্ট এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। স্থূলতার কারণে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় এবং এটি ধমনীতে চর্বির স্তর জমা করতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • ব্যায়ামের অভাব: ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা শারীরিক কার্যকলাপ কম করেন, তাদের মধ্যে হার্ট এবং ব্রেনের রোগের ঝুঁকি বেশি।

৮. অপরিকল্পিত জীবনধারা

  • কাজের চাপ এবং ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্যহীনতা: অনেকের জীবনে কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য নেই, যা মানসিক চাপের কারণ হয় এবং এটি হার্ট এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
  • পরিবেশগত দূষণ: বর্তমান সময়ে পরিবেশগত দূষণও হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দূষণের কারণে বায়ুতে উপস্থিত ক্ষতিকর পদার্থ শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং তা হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

উপসংহার

কম বয়সে হার্ট অ্যাটাক এবং ব্রেন স্ট্রোকের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার পিছনে রয়েছে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, মানসিক চাপ, ধূমপান, মদ্যপান, এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের প্রভাব। সচেতন জীবনধারা, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে এই ঝুঁকি থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। সময়মতো সচেতন হয়ে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে হার্ট এবং মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top