প্রিমেনস্ট্রুয়াল ডাইসফোরিক ডিজঅর্ডার (PMDD) হল একটি গুরুতর প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোম (PMS) যা মাসিকের আগের দিনগুলিতে শারীরিক এবং মানসিক উপসর্গের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এটি মহিলাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) হল একটি কার্যকর উপায় যা PMDD ব্যবস্থাপনার জন্য সহায়ক হতে পারে। এখানে কিছু সিবিটি টেকনিক দেওয়া হলো যা আপনি নিজের উপর প্রয়োগ করতে পারেন।
১. চিন্তার সচেতনতা এবং পরিবর্তন
PMDD-এর সময় সাধারণত নেতিবাচক চিন্তা এবং মানসিক চাপ বাড়ে। এই চিন্তাগুলিকে চিহ্নিত করা এবং পরিবর্তন করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে, আপনি যখনই নেতিবাচক চিন্তায় ভুগবেন, তা লিখে ফেলুন। এরপর, সেই চিন্তাগুলি কতটা যুক্তিযুক্ত এবং সহায়ক তা বিচার করুন। চিন্তাগুলিকে আরও বাস্তবসম্মত এবং ইতিবাচক করতে চেষ্টা করুন।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি মনে করেন “আমি এই পরিস্থিতির মধ্যে পুরোপুরি একা,” তখন সেই চিন্তাটিকে চ্যালেঞ্জ করুন এবং বলুন, “এটি একটি অস্থায়ী অবস্থা এবং আমি আমার প্রিয়জনদের সমর্থন পেতে পারি।”
২. শারীরিক এবং মানসিক প্রশান্তি (Relaxation Techniques)
PMDD-এর সময় শারীরিক এবং মানসিক উত্তেজনা বাড়তে পারে। শিথিলতা এবং প্রশান্তি আনতে কিছু শারীরিক এবং মানসিক রিল্যাক্সেশন টেকনিক প্রয়োগ করতে পারেন।
প্রতিদিন কিছু সময় ধরে গভীর শ্বাস নেওয়া, ধ্যান, বা ইয়োগার মতো ক্রিয়াকলাপগুলো চর্চা করুন। এটি আপনাকে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে শিথিল করতে সহায়ক হবে, যা PMDD এর উপসর্গগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৩. আচরণগত সক্রিয়তা এবং আনন্দদায়ক কাজের পরিকল্পনা
PMDD-এর সময় মন খারাপ হলে অনেকেই সক্রিয় জীবনধারা থেকে দূরে সরে যান, যা মানসিক অবস্থাকে আরও খারাপ করে। তাই আচরণগত সক্রিয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একটি তালিকা তৈরি করুন যেখানে এমন কিছু কাজ থাকবে যা আপনার আনন্দ দেয় বা আপনাকে ভাল বোধ করায়। প্রতিদিন অন্তত একটি কাজ করার চেষ্টা করুন। এই ছোট ছোট কাজগুলি আপনার মনকে ভাল রাখতে সাহায্য করবে এবং আপনার মানসিক অবস্থাকে উন্নত করবে।
৪. সুস্থ সম্পর্কের উন্নয়ন
PMDD এর উপসর্গগুলি অনেক সময় সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই সম্পর্কের ক্ষেত্রে সজাগ থাকা এবং সেগুলিকে সুস্থভাবে বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার প্রিয়জনের সাথে আপনার অনুভূতি শেয়ার করুন। তাদের সাথে খোলামেলা কথা বলুন এবং তাদের কাছ থেকে সমর্থন নিন। এভাবে সম্পর্কের ভিত মজবুত হবে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হবে।
৫. শারীরিক স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণ
PMDD এর উপসর্গগুলি মোকাবেলা করার জন্য শারীরিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ডায়েট, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন, কারণ এটি মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
উপসংহার
প্রিমেনস্ট্রুয়াল ডাইসফোরিক ডিজঅর্ডার (PMDD) মহিলাদের জন্য একটি গুরুতর মানসিক এবং শারীরিক চ্যালেঞ্জ হতে পারে, কিন্তু সঠিক কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) টেকনিক প্রয়োগের মাধ্যমে এই অবস্থাকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করা সম্ভব। উপরের সিবিটি টেকনিকগুলি আপনি নিজে নিজে প্রয়োগ করতে পারেন, তবে যদি উপসর্গগুলি গুরুতর হয়, তাহলে একটি মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবসময়ই উত্তম। নিজের যত্ন নেওয়া এবং মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।