Bulimia Nervosa একটি গুরুতর খাওয়ার সমস্যা যা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে সম্পর্কিত। এই অবস্থায় একজন ব্যক্তি অতিরিক্ত পরিমাণ খাবার খাওয়ার পরে খাবার ত্যাগ করার জন্য বমি করা, অতিরিক্ত ব্যায়াম করা বা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্যান্য অনিরাপদ পদ্ধতি ব্যবহার করে। এই আচরণ পুনরাবৃত্তি ঘটে এবং এটি ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এই ব্লগ পোস্টে, আমরা Bulimia Nervosa-এর কারণ, লক্ষণ এবং এর জন্য সিবিটি (Cognitive Behavioral Therapy) থেরাপির কিছু টেকনিক নিয়ে আলোচনা করব যা নিজেই প্রয়োগ করা যেতে পারে।
Bulimia Nervosa এর কারণসমূহ
Bulimia Nervosa-এর কারণ সাধারণত মানসিক, জৈবিক এবং সামাজিক উপাদানের সাথে সম্পর্কিত। কিছু সাধারণ কারণ হলো:
- নিজের শরীরের প্রতি অসন্তোষ: ওজন এবং আকৃতি নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা এবং নিজের শরীরের প্রতি অসন্তোষ Bulimia Nervosa-এর প্রধান কারণ।
- মানসিক চাপ: জীবনের বিভিন্ন সমস্যা বা চাপে থাকা পরিস্থিতির কারণে ব্যক্তির মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে, যা এই সমস্যা বাড়াতে পারে।
- নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানো: নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর অনুভূতি থেকে বাঁচতে একজন ব্যক্তি অতিরিক্ত খাবার খেয়ে এবং পরে তা বমি করে।
- জিনগত প্রভাব: পরিবারে Bulimia Nervosa-এর ইতিহাস থাকলে এর ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- পারফেকশনিজম: অতিরিক্ত পারফেকশনিজমের প্রবণতা থাকলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
Bulimia Nervosa এর লক্ষণসমূহ
Bulimia Nervosa-এর কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- অতিরিক্ত খাবার খাওয়া: অল্প সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলা।
- বমি করা বা অন্যান্য পদ্ধতির ব্যবহার: অতিরিক্ত খাওয়ার পরে শরীর থেকে খাবার ত্যাগ করার জন্য বমি করা, ল্যাক্সেটিভ বা ডাইরেটিকসের ব্যবহার।
- নিয়ন্ত্রণ হারানোর অনুভূতি: খাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা এবং থামতে না পারা।
- গোপনে খাওয়া: অন্যদের থেকে লুকিয়ে খাবার খাওয়া।
- শরীরের ওজনের পরিবর্তন: শরীরের ওজনের প্রায়ই পরিবর্তন হওয়া এবং এর ফলে শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেওয়া।
Bulimia Nervosa এর জন্য সিবিটি থেরাপির সেলফ-হেল্প টেকনিক
১. ট্রিগার চিহ্নিতকরণ এবং ব্যবস্থাপনা (Identifying and Managing Triggers)
- কীভাবে কাজ করে: খাওয়ার সময় বা বমি করার ট্রিগার চিহ্নিত করে তাদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা।
- নিজের উপর প্রয়োগ: কোন পরিস্থিতি বা মানসিক অবস্থায় আপনি অতিরিক্ত খাবার খেতে বা বমি করতে প্রলুব্ধ হন তা চিহ্নিত করুন। সেই পরিস্থিতি এড়িয়ে চলার জন্য প্রস্তুতি নিন এবং বিকল্প কার্যকলাপের উপর ফোকাস করুন।
২. কগনিটিভ রিফ্রেমিং (Cognitive Restructuring)
- কীভাবে কাজ করে: নেতিবাচক চিন্তা এবং খাদ্য সম্পর্কিত অস্বাস্থ্যকর মানসিকতা চিহ্নিত করে সেগুলোকে ইতিবাচক চিন্তায় পরিবর্তন করা।
- নিজের উপর প্রয়োগ: খাওয়ার সাথে সম্পর্কিত নেতিবাচক চিন্তা চিহ্নিত করুন এবং সেগুলোকে বাস্তবসম্মত এবং ইতিবাচক চিন্তায় পরিবর্তন করুন। উদাহরণস্বরূপ, “আমি বমি না করলে মোটা হয়ে যাব” এর পরিবর্তে “আমার শরীরের পুষ্টির প্রয়োজন এবং এটি সুস্থ থাকার জন্য খাবার দরকার” চিন্তা করুন।
৩. মনোযোগের অনুশীলন (Mindful Eating)
- কীভাবে কাজ করে: খাবারের প্রতি মনোযোগী হয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
- নিজের উপর প্রয়োগ: ধীরে ধীরে খাবার খাওয়ার সময় প্রতিটি কামড়ের স্বাদ, গন্ধ, এবং টেক্সচার উপভোগ করুন। খাওয়ার সময় অন্য কিছু না করার চেষ্টা করুন এবং খাবার খাওয়ার প্রক্রিয়া উপভোগ করুন।
৪. আবেগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল (Emotion Regulation Techniques)
- কীভাবে কাজ করে: মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বা দুঃখের মতো আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- নিজের উপর প্রয়োগ: ডিপ ব্রিদিং, মেডিটেশন বা অন্যান্য রিল্যাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করুন। যখনই আপনি অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছা অনুভব করেন, তখন এই টেকনিকগুলি প্রয়োগ করুন।
৫. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা (Developing Healthy Eating Habits)
- কীভাবে কাজ করে: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলে Bulimia Nervosa-এর ঝুঁকি কমানো।
- নিজের উপর প্রয়োগ: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পরিমাণমত খাবার খান এবং পুষ্টিকর খাদ্য নির্বাচন করুন। খাবার খাওয়ার পরে শরীরের প্রতিক্রিয়া শুনুন এবং যদি অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা থাকে তবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে সচেতন হোন।
উপসংহার
Bulimia Nervosa একটি গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, তবে সঠিক পদক্ষেপ এবং সিবিটি থেরাপির কার্যকরী টেকনিকগুলোর মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিজের ট্রিগারগুলো চিহ্নিত করে, খাদ্য সম্পর্কিত নেতিবাচক চিন্তা পরিবর্তন করে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলে আপনি এই সমস্যাকে মোকাবিলা করতে পারেন। সঠিক পদক্ষেপ নিলে আপনি Bulimia Nervosa থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হবেন।