সাইকোটিক ডিপ্রেশনের জন্য সিবিটি থেরাপির কিছু টেকনিক যা নিজের উপরে এপ্লাই করা যায়

সাইকোটিক ডিপ্রেশন একটি গুরুতর মানসিক অবস্থা যা ডিপ্রেশন এবং সাইকোসিসের মিশ্রণ। এই সমস্যার মধ্যে ব্যক্তি শুধু ডিপ্রেশনের উপসর্গে ভুগেন না, পাশাপাশি হ্যালুসিনেশন এবং ডিলিউশনও অনুভব করতে পারেন। এই অবস্থা সাধারণত একা মোকাবেলা করা কঠিন, তবে সঠিক সিবিটি (কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি) টেকনিক ব্যবহার করে নিজেই কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব। এই ব্লগে আমরা সাইকোটিক ডিপ্রেশনের জন্য কিছু কার্যকর সিবিটি টেকনিক আলোচনা করবো যা আপনি নিজেই প্রয়োগ করতে পারেন।

সাইকোটিক ডিপ্রেশন এবং সিবিটি: কীভাবে কাজ করে?

সিবিটি একটি প্রমাণিত মানসিক থেরাপি পদ্ধতি যা চিন্তা, অনুভূতি এবং আচরণের মধ্যে সম্পর্ককে লক্ষ্য করে। এটি বিশেষ করে সাইকোটিক ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে কারণ এটি ব্যক্তির নেতিবাচক চিন্তা এবং মিথ্যা বিশ্বাসকে চিহ্নিত এবং পরিবর্তন করতে সাহায্য করে। সিবিটি এর মাধ্যমে ব্যক্তি নিজেই তার অনুভূতি এবং চিন্তাগুলোকে পর্যালোচনা করতে শিখে, যা তাকে নিজের মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

raju akon youtube channel subscribtion

সিবিটি টেকনিক ১: চিন্তা-পুনর্মূল্যায়ন (Thought Re-evaluation)

নেতিবাচক এবং মিথ্যা বিশ্বাসগুলোকে চিহ্নিত করা সাইকোটিক ডিপ্রেশনের চিকিত্সায় প্রথম ধাপ। এই টেকনিকটির মাধ্যমে আপনি আপনার চিন্তাগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে এবং সেগুলোকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করতে শিখবেন।

কীভাবে করবেন:

  • প্রতিদিনের চিন্তা এবং অনুভূতির ডায়েরি রাখুন।
  • নেতিবাচক বা অবাস্তব চিন্তাগুলোকে আলাদা করে লিখে রাখুন।
  • এরপর নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, এই চিন্তাগুলো কতটা বাস্তবসম্মত?
  • সেগুলোর জন্য কোনো প্রমাণ আছে কি?
  • তারপর সেই চিন্তাগুলোকে আরও বাস্তবসম্মত ও ইতিবাচকভাবে পুনর্মূল্যায়ন করুন।

সিবিটি টেকনিক ২: ভয় বা দুশ্চিন্তার প্রতিরোধ (Exposure Therapy)

সাইকোটিক ডিপ্রেশনে অনেক সময় ব্যক্তি অবাস্তব ভয় বা দুশ্চিন্তার সম্মুখীন হন। এক্সপোজার থেরাপি দ্বারা আপনি ধীরে ধীরে সেই ভয় বা দুশ্চিন্তাকে মোকাবেলা করতে শিখতে পারেন।

কীভাবে করবেন:

  • প্রথমে আপনার সবচেয়ে ভয় পাওয়া পরিস্থিতি বা বিষয়টিকে চিহ্নিত করুন।
  • এরপর সেই পরিস্থিতির জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন।
  • ছোট ছোট ধাপে সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে শিখুন।
  • প্রত্যেকবার আপনি যখন সেই ভয় বা দুশ্চিন্তার সম্মুখীন হবেন, আপনার অর্জনগুলোকে লিখে রাখুন।

সিবিটি টেকনিক ৩: বাস্তবতা পরীক্ষা (Reality Testing)

সাইকোটিক ডিপ্রেশনে ভুগলে ব্যক্তিরা মাঝে মাঝে বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত হয়ে যেতে পারেন। বাস্তবতা পরীক্ষা করার মাধ্যমে তারা বুঝতে পারেন যে তাদের মনে যে চিন্তাগুলো ঘুরছে সেগুলো বাস্তব কিনা।

কীভাবে করবেন:

  • যখনই আপনি কোনো মিথ্যা বিশ্বাস বা হ্যালুসিনেশনের সম্মুখীন হন, তখন এটি নিয়ে লিখে রাখুন।
  • এরপর সেই বিশ্বাস বা চিন্তাগুলোকে বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখুন।
  • বন্ধু, পরিবার বা থেরাপিস্টের সাথে আলোচনা করে বুঝতে চেষ্টা করুন যে সেটি কতটা বাস্তব।
  • অবাস্তব চিন্তাগুলোকে চিহ্নিত করে, সেগুলোকে বাস্তবসম্মত চিন্তায় পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন।

সিবিটি টেকনিক ৪: চিন্তা বিরতি (Thought Stopping)

যখনই আপনার মনে অবাঞ্ছিত বা নেতিবাচক চিন্তা আসে, তখন চিন্তা বিরতি প্রযুক্তিটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনাকে আপনার চিন্তাগুলোকে থামিয়ে নতুনভাবে চিন্তা শুরু করতে সাহায্য করবে।

কীভাবে করবেন:

  • আপনার মনে যখন কোনো নেতিবাচক বা অবাস্তব চিন্তা আসে, তখন উচ্চস্বরে “থামো!” বলুন।
  • এরপর সেই চিন্তাটিকে সরে যেতে দিন এবং পরিবর্তে একটি ইতিবাচক চিন্তা নিয়ে আসুন।
  • নিয়মিত এই অনুশীলনটি করুন এবং আপনার চিন্তার ধরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করুন।

সিবিটি টেকনিক ৫: সামাজিক সহায়তা খোঁজা (Seeking Social Support)

সাইকোটিক ডিপ্রেশনে ভুগলে একা থাকা এবং বিচ্ছিন্ন বোধ করা সাধারণ হতে পারে। সঠিক সামাজিক সহায়তা পাওয়া সিবিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে।

কীভাবে করবেন:

  • পরিবার, বন্ধু বা কাউন্সেলরের সাথে আপনার অনুভূতিগুলো শেয়ার করুন।
  • নিয়মিতভাবে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
  • অনলাইন বা অফলাইন সাপোর্ট গ্রুপে যোগ দিন, যেখানে আপনার মতো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষদের সাথে কথা বলতে পারেন।

উপসংহার

সাইকোটিক ডিপ্রেশন একটি জটিল মানসিক অবস্থা, তবে সঠিক সিবিটি টেকনিক ব্যবহার করে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই টেকনিকগুলো প্রাথমিকভাবে নিজে নিজে প্রয়োগ করা যায়, তবে পরিস্থিতি জটিল হলে পেশাদার সাহায্য নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাইকোটিক ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় সিবিটি শুধু ব্যক্তির নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে পরিবর্তন করতে সাহায্য করে না, পাশাপাশি তাকে তার মানসিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।

এই টেকনিকগুলো নিজেই চেষ্টা করতে পারেন, তবে মনে রাখবেন, এটি কোনো পেশাদার থেরাপির বিকল্প নয়। যদি আপনার সমস্যাগুলো গুরুতর হয়, তাহলে অবশ্যই একজন পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে পরামর্শ করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top