উদ্বিগ্নতা বা অ্যাংজাইটি একটি মানসিক অবস্থা যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট রাজু আকনের মতে, উদ্বিগ্নতার আচরণগত লক্ষণগুলো বিভিন্ন রকম হতে পারে এবং এগুলো মানুষের আচরণ, চিন্তা ও শারীরিক প্রতিক্রিয়ায় প্রকাশ পায়। এখানে উদ্বিগ্নতার কিছু সাধারণ আচরণগত লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. এড়ানোর প্রবণতা (Avoidance Behavior)
লক্ষণ:
- উদ্বেগ উদ্দীপনাকে এড়ানোর চেষ্টা করা।
- সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়া।
- গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা দায়িত্ব এড়িয়ে চলা।
২. অতিরিক্ত চিন্তা (Overthinking)
লক্ষণ:
- একটি বিষয় নিয়ে বারবার চিন্তা করা।
- সামান্য সমস্যা নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়া।
- ভবিষ্যতের সম্ভাব্য নেতিবাচক ঘটনাগুলো নিয়ে ভাবা।
৩. শারীরিক উপসর্গ (Physical Symptoms)
লক্ষণ:
- হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
- শ্বাসকষ্ট।
- ঘাম হওয়া।
- কাঁপুনি বা কম্পন।
- পেশীতে টান বা ব্যথা।
৪. ঘুমের সমস্যা (Sleep Problems)
লক্ষণ:
- ঘুমাতে সমস্যা হওয়া।
- রাতে ঘন ঘন জেগে ওঠা।
- সকালে খুব তাড়াতাড়ি জেগে ওঠা এবং পুনরায় ঘুমাতে না পারা।
৫. মনোযোগের অভাব (Lack of Concentration)
লক্ষণ:
- কাজ বা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে না পারা।
- সহজেই বিভ্রান্ত হওয়া।
- গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভুলে যাওয়া।
৬. ক্রমাগত উদ্বেগের অনুভূতি (Persistent Worry)
লক্ষণ:
- বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ক্রমাগত উদ্বেগ অনুভব করা।
- কিছুই ভাল হবে না এমন ভাবনা।
- প্রতিদিনের ছোটখাটো বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা।
৭. প্রয়োজনীয় কাজ পিছিয়ে দেওয়া (Procrastination)
লক্ষণ:
- উদ্বেগের কারণে গুরুত্বপূর্ণ কাজ পিছিয়ে দেওয়া।
- সময়মতো কাজ সম্পন্ন না করা।
- কাজের চাপে পড়ে উদ্বিগ্ন হওয়া।
৮. ইরিটেবল বা অস্থির মনোভাব (Irritability)
লক্ষণ:
- ছোটখাটো বিষয়েও রেগে যাওয়া।
- অস্থির বা উদ্বিগ্ন অনুভব করা।
- অন্যদের সাথে খারাপ আচরণ করা।
৯. সামাজিক বিচ্ছিন্নতা (Social Isolation)
লক্ষণ:
- বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সাথে সময় কাটাতে অনিচ্ছা।
- সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করা।
- একাকী থাকতে পছন্দ করা।
১০. বারবার শারীরিক চেকিং (Repeated Checking)
লক্ষণ:
- শরীরের বিভিন্ন অংশ বারবার চেক করা।
- অসুস্থতার ভয় পাওয়া।
- শারীরিক লক্ষণ নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগ।
উপসংহার
উদ্বিগ্নতা বা অ্যাংজাইটির আচরণগত লক্ষণগুলো ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট রাজু আকনের মতে, উদ্বিগ্নতার এই আচরণগুলো সময়মতো চিহ্নিত করা এবং তাদের মোকাবিলা করার উপায় খুঁজে বের করা জরুরি। যদি আপনি উদ্বিগ্নতার এই লক্ষণগুলোর মধ্যে কিছু চিহ্নিত করেন, তবে একজন প্রশিক্ষিত মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক চিকিৎসা ও সমর্থনের মাধ্যমে উদ্বিগ্নতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এবং একটি সুস্থ ও সুখী জীবনযাপন করা সম্ভব।