অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগ আমাদের জীবনের একটি সাধারণ অংশ, তবে অতিরিক্ত অ্যাংজাইটি মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট রাজু আকনের মতে, অ্যাংজাইটি মোকাবিলায় মনোবৈজ্ঞানিক উপায়গুলি অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। এখানে সাতটি মনোবৈজ্ঞানিক উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো যা অ্যাংজাইটি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে।
১. ডিপ ব্রিথিং (Deep Breathing)
ডিপ ব্রিথিং হল এমন একটি টেকনিক যা অ্যাংজাইটি কমাতে এবং মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক। গভীর শ্বাস নেওয়া এবং ধীরে ধীরে ছেড়ে দেওয়া শারীরিক এবং মানসিক চাপ কমায়। নিয়মিত ডিপ ব্রিথিং অনুশীলন করলে অ্যাংজাইটি কমাতে এটি খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়।
কিভাবে করবেন:
- একটি শান্ত পরিবেশে বসুন বা শুয়ে পড়ুন।
- নাক দিয়ে গভীর শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে ছেড়ে দিন।
- এটি ৫-১০ মিনিট ধরে করুন।
২. মেডিটেশন (Meditation)
মেডিটেশন মনকে শান্ত করতে এবং স্ট্রেস কমাতে সহায়ক। নিয়মিত মেডিটেশন অনুশীলন মানসিক প্রশান্তি বাড়ায় এবং অ্যাংজাইটি কমাতে কার্যকর।
কিভাবে করবেন:
- একটি শান্ত পরিবেশে বসুন এবং চোখ বন্ধ করুন।
- ধীরে ধীরে শ্বাস নিন এবং আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর মনোযোগ দিন।
- মনের ভাবনা গুলো আসা যাওয়া করতে দিন, তবে কোন ভাবনা নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না।
৩. কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) টেকনিক
CBT হল এমন একটি থেরাপি যা নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং তাদের পরিবর্তন করতে সহায়ক। এটি আপনার চিন্তাধারা এবং আচরণ পরিবর্তন করে অ্যাংজাইটি কমাতে সাহায্য করে।
কিভাবে করবেন:
- আপনার নেতিবাচক চিন্তাগুলো চিহ্নিত করুন।
- এই চিন্তাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করুন এবং তাদের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন করুন।
- পরিবর্তে, ইতিবাচক এবং বাস্তববাদী চিন্তা প্রতিস্থাপন করুন।
4. এক্সারসাইজ (Exercise)
নিয়মিত ব্যায়াম অ্যাংজাইটি কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। ব্যায়াম শরীরে এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসরণ করে, যা আমাদের মুড উন্নত করতে এবং স্ট্রেস কমাতে সহায়ক।
কিভাবে করবেন:
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন।
- হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা বা যোগব্যায়াম করতে পারেন।
৫. সঠিক ঘুম (Proper Sleep)
সঠিক এবং পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। ঘুমের অভাব অ্যাংজাইটি বৃদ্ধি করতে পারে, তাই নিয়মিত ঘুমের সময় বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
কিভাবে করবেন:
- প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং উঠুন।
- ঘুমের আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার কমিয়ে দিন।
- শান্ত এবং আরামদায়ক পরিবেশে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
৬. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (Healthy Diet)
সঠিক এবং পুষ্টিকর খাদ্য অ্যাংজাইটি কমাতে সহায়ক। বিশেষ করে মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানগুলো গ্রহণ করা প্রয়োজন।
কিভাবে করবেন:
- তাজা ফল ও সবজি, পূর্ণ শস্য এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান।
- ক্যাফেইন এবং চিনি পরিমাণে কমিয়ে দিন।
৭. সামাজিক সমর্থন (Social Support)
প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানো এবং তাদের সাথে আপনার অনুভূতি শেয়ার করা অ্যাংজাইটি কমাতে সাহায্য করে। সামাজিক সমর্থন মানসিক প্রশান্তি এবং নিরাপত্তার অনুভূতি বাড়ায়।
কিভাবে করবেন:
- পরিবার এবং বন্ধুর সাথে সময় কাটান।
- আপনার সমস্যাগুলো শেয়ার করুন এবং তাদের কাছ থেকে সমর্থন গ্রহণ করুন।
- সাপোর্ট গ্রুপে যোগ দিন যেখানে আপনি অন্যান্যদের সাথে আপনার অনুভূতি শেয়ার করতে পারেন।
উপসংহার
অ্যাংজাইটি থেকে মুক্তি পেতে এই সাতটি মনোবৈজ্ঞানিক উপায় অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট রাজু আকনের মতে, ডিপ ব্রিথিং, মেডিটেশন, কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি, এক্সারসাইজ, সঠিক ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং সামাজিক সমর্থন অ্যাংজাইটি কমাতে এবং মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক। যদি আপনি অতিরিক্ত অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগে ভুগেন, তবে একজন প্রশিক্ষিত মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক চিকিৎসা এবং সমর্থনের মাধ্যমে আপনি অ্যাংজাইটি থেকে মুক্তি পেতে এবং একটি সুখী ও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন।