মানসিক রোগীদের ওষুধের সাথে কখন কাউন্সেলিং?

মানসিক রোগের চিকিৎসায় ওষুধ ও কাউন্সেলিং উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক সময় ওষুধ একা মানসিক রোগ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত হয় না, এবং সেই সময় কাউন্সেলিং-এর প্রয়োজন পড়ে। মানসিক রোগের চিকিৎসায় ওষুধ ও কাউন্সেলিং-এর সঠিক ভারসাম্য রাখাই মূল উদ্দেশ্য। নিচে আলোচনা করা হলো কখন ওষুধের সাথে কাউন্সেলিং-এর প্রয়োজন হতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

১. দীর্ঘমেয়াদি মানসিক রোগ

দীর্ঘমেয়াদি মানসিক রোগ যেমন বিষণ্নতা (ডিপ্রেশন), উদ্বেগ (এনজাইটি), এবং স্কিজোফ্রেনিয়া প্রভৃতির চিকিৎসায় শুধুমাত্র ওষুধ প্রায়ই পর্যাপ্ত হয় না। এই ধরনের রোগীদের নিয়মিত কাউন্সেলিং-এর প্রয়োজন হয় যাতে তারা তাদের চিন্তা, আবেগ এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

২. আচরণগত সমস্যা

কিছু মানসিক রোগ আচরণগত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (OCD) বা বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার। এই ধরনের সমস্যাগুলি শুধুমাত্র ওষুধ দ্বারা সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব নয়। আচরণগত থেরাপি ও কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে রোগীরা তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন।

৩. মানসিক আঘাত ও ট্রমা

যেসব রোগী মানসিক আঘাত (ট্রমা) বা পিটিএসডি (PTSD) ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি কাউন্সেলিং অত্যন্ত জরুরি। কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে তারা তাদের অতীতের আঘাতগুলি মোকাবেলা করতে এবং সেগুলির প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

৪. সম্পর্কের সমস্যা

মানসিক রোগ প্রায়ই সম্পর্কের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যেমন পারিবারিক কলহ বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। এই ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি সম্পর্কবিষয়ক থেরাপি ও কাউন্সেলিং অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

৫. জীবনধারা পরিবর্তন

কিছু মানসিক রোগ, যেমন উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা, জীবনধারা পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে রোগীরা স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গড়ে তুলতে, যেমন খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, এবং ঘুমের নিয়ম মেনে চলতে সহায়তা পেতে পারেন।

৬. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবেলা

অনেক সময় মানসিক রোগের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, যা রোগীর জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলতে পারে। কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে রোগীরা এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির মোকাবেলা করতে এবং তাদের ওষুধ গ্রহণে সচেতন থাকতে পারেন।

উপসংহার

ওষুধ এবং কাউন্সেলিং একসাথে মানসিক রোগের চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানসিক রোগের সঠিক চিকিৎসার জন্য ওষুধের পাশাপাশি নিয়মিত কাউন্সেলিং অত্যন্ত প্রয়োজন। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে এবং রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে ওষুধ ও কাউন্সেলিং-এর সঠিক সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি।

Writer:
Raju Akon, MPhil-DU, Counselling Psychologist at PMHCC.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top